title
stringlengths
4
148
text
stringlengths
14
41.8k
summary
stringlengths
1
8.73k
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চারুকলা প্রাঙ্গণে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে স্থপতি ময়নুল আবেদিন। অনুষদ প্রাঙ্গণে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করেছে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে চারুকলার আট শিক্ষার্থীকে বনিজুল হক স্মৃতি পুরস্কার ও আসাদুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। স্থপতি ময়নুল আবেদিন বলেন, ‘ভালো শিল্পী হতে হলে ভালো মনের মানুষ হতে হবে। তাহলে মানুষের কাছ থেকে ভালো প্রতিদান পাওয়া যাবে। বড় কাজ, ছোট কাজ বিষয় নয়। আজ এখানে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের কাজ দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আরও ভালো কাজ করবেন।’ উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘এখানে প্রদর্শিত বিভিন্ন শিল্পকর্মে ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়, ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রাচীন ঐতিহ্য পাহাড়পুর-মহাস্থানগড় আছে। এগুলোর ইতিহাস, ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে চারুকলার সব অনুষদ যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে আমাদের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হবে।’ মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নূরুল আমীন জানান, প্রদর্শনীতে ৬১ জন শিল্পীর ৭১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পকর্মগুলো সিমেন্ট, পাথর, টিন, লোহা, কাঠ, পোড়ামাটির তৈরি। আজ বিকেল চারটায় ‘ডকুমেন্টা ফিফটিন’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্পী ময়নুল ইসলাম পল। তিন দিনব্যাপী উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চারুকলা প্রাঙ্গণে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে স্থপতি ময়নুল আবেদিন। অনুষদ প্রাঙ্গণে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করেছে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ।
চিকলী নদীর পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চিকলী নদীর পাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে নিচ্ছেন দুই ব্যক্তি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চম্পাতলী সেতু, একটি বিদ্যালয় ও আশপাশের আবাদি জমি। এসব মাটি স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, চম্পাতলী এলাকার দুলাল মণ্ডল ও পাঠানেরহাট এলাকার ছাদেক খান দীর্ঘদিন ধরে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, চম্পাতলী সেতু থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে নদীপাড়ের মাটি কেটে তিনটি ট্রাক্টরে ভর্তি করা হচ্ছে। এ সময় ট্রাক্টর চালক সুকুমার রায় বলেন, নদীর পাড়ের পাশে ছাদেক খানের জমি রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে প্রতি গাড়ি মাটি ২০০ টাকা দরে স্থানীয় একটি ইটভাটার মালিক কিনে নিয়েছেন। এখন ছাদেক খান যেভাবে মাটি কাটতে বলছেন, তাঁরা সেভাবেই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ছাদেক খান বলেন, ‘নদীর পাড় যেটা, সেটাও আমার জমির ভেতরে। এ কারণে পাড় কিছুটা কেটে জমি সমান করছি।’ দুলাল মণ্ডল বলেন, নদী খননের সময় তাঁর জমিতে মাটি ফেলা হয়েছিল। এখন তা কেটে নিয়ে জমি সমান করছেন। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে (২০১০) বলা হয়েছে, বিক্রির উদ্দেশ্যে বালু বা মাটি উত্তোলনের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলে সে ক্ষেত্রে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। অন্যদিকে, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। স্থানীয় লোকজন বলেন, ওই স্থানে নদীর পাড় কেটে মাটি তোলা হলে সামান্য বন্যায় চম্পাতলী সেতু ও পাশে অবস্থিত চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ ছাড়া আশপাশের আবাদি জমিতে নদীর পানি অনায়াসে ঢুকে ফসল নষ্ট হবে। চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, মাটিভর্তি করে ট্রাক্টরগুলো দিন–রাত বিদ্যালয়ের সামনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। চম্পাতলী গ্রামের কৃষক বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘নদীর বান্দন (বাঁধা) হওচে নদীর পাড়। সেই পাড় কাটিয়া ইটভাটাত বেচাওচে তা–ও কাঁয়ও কিছু কওছে না। আগামীবার বান (বন্যা) হইলে নদীর পানি যায়া জমিত ঢুকপে। তখন আবাদ নষ্ট হয়া যাইবে। হামার কপালোত দুঃখ আছে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘নদীর পাড় যাঁরা কাটছেন, খোঁজ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চিকলী নদীর পাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে নিচ্ছেন দুই ব্যক্তি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চম্পাতলী সেতু, একটি বিদ্যালয় ও আশপাশের আবাদি জমি। এসব মাটি স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নাব্যতা–সংকটে ধুঁকছে লঞ্চঘাট
কয়েক বছর আগেও ভোররাত থেকে লঞ্চের হর্ন বাজতে শুরু করত। লোকেলোকারণ্য হয়ে উঠত লঞ্চঘাট এলাকা। যাত্রীদের ভারী মালামাল আনা–নেওয়ার কাজে ছুটে যেতেন শ্রমিকেরা। কোলাহল থাকত ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এমনই ছিল মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম লঞ্চঘাটের নিত্যদিনের গল্প। নাব্যতা–সংকটের কারণে এই ঘাট দিয়ে এখন নিয়মিত লঞ্চ চলে না। ১৯৮২ সাল থেকে এ লঞ্চঘাটে শ্রমিকের কাজ করেন মোকলেছুর রহমান। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর আগেও ছোট-বড় লঞ্চ চলাচলে ঘাট কোলাহলপূর্ণ ছিল। প্রত্যেক শ্রমিক দিনে পেতেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। নাব্যতা সমস্যার কারণে এখন লঞ্চ খুব একটা চলে না। যাত্রীও আসে না। মালবাহী ট্রলার থেকে মালামাল নামিয়ে সারা দিনে ২০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হয় না। মিরকাদিম লঞ্চঘাট ইছামতী ও ধলেশ্বরী নদীর মোহনার ২০০ গজ পূর্বে অবস্থিত। ঘাট সূত্রে জানা যায়, একসময় তালতলা-বালিগাঁও ও মিরকাদিম লঞ্চঘাট হয়ে ৪২টি মাঝারি এবং ৩৫টি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাটে যাতায়াত করত। নৌপথে নাব্যতা না থাকায় ১৭ বছর আগে বালিগাঁও–তালতলা ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে মিরকাদিম ঘাটটি সচল ছিল। ৫ বছর আগেও ছোট-বড় ৫০টি লঞ্চে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার যাত্রী মুন্সিগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করতেন। মিরকাদিম লঞ্চঘাটের অতীত তুলে ধরে ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর পন্টুন স্টাফ মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এ ঘাটে কাজ করছেন। একসময় এই ঘাট লঞ্চ ও যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। দিনরাত কাজ করতে হতো। কয়েক বছর ধরে ঘাটে নাব্যতা–সংকট তৈরি হয়েছে। লঞ্চ চলাচল করতে পারছে না। কমে গেছে যাত্রী। এখন বসে থেকে সময় কাটে তাঁর। ঘাটের পন্টুন বর্তমানে যে স্থানে আছে, সেখান থেকে নদীর তীরে বসানো হলে এ ঘাটের সোনালি দিন ফিরবে বলে মনে করেন মোস্তফা। পন্টুন সরিয়ে নদীর কাছে নেওয়াকে সমাধান হিসেবে দেখছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রকৌশলী (খনন বিভাগ) সাইদুর রহমানও। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এ নৌপথ খনন করা হচ্ছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। পন্টুন নদীর পাড়ে নিয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি ভালো হবে। মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনের দক্ষিণ–পশ্চিম পাশের পুরোটাই শক্ত মাটির আস্তরে ভরে গেছে। দক্ষিণ পাশে বিশাল চর। উত্তর পাশে নদীতে কিছুটা পানি থাকলেও পূর্ব দিকে নতুন করে চর জাগতে শুরু করেছে। সুনসান ঘাটের এক পাশে বসে আছেন কয়েক শ্রমিক। পন্টুনে বাঁধা আছে তিনটি লঞ্চ। লঞ্চের কয়েকজন চালক, শ্রমিক ভেতরে বসে অলস সময় পার করছেন। ঘাটে অপেক্ষমাণ রাজীব-২ লঞ্চের কেরানি প্রদীপ বাবু বলেন, ‘সকালের দিকে শুধু জোয়ারের সময় চার-পাঁচটি লঞ্চ কোনোরকম চলে। দিনের বাকি সময় লঞ্চ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তিন বছর আগে মুন্সিগঞ্জ থেকে ২০০-২৫০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতাম। ঠিকমতো লঞ্চ চলাচল না করায় যাত্রীরা এখন এ ঘাটে আসেন না। ৩০-৪০ জন যাত্রীও পাওয়া যায় না।’ লঞ্চচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি লঞ্চ মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার সদরঘাটে আসা–যাওয়া করতে সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। নাব্যতা–সংকটের কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি আয় হয় না। প্রতি মাসেই মালিকপক্ষকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেতন নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ইজারাদার ও বিআইডব্লিউটিএকে জানালেও কেউ কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ঘাটের নাব্যতা–সংকট দূর করতে খননকাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ বন্দর) শেখ মাসুদ কামাল বলেন, ইজারাদার অথবা লঞ্চমালিক সমিতির লোকজন লিখিতভাবে জানালে পন্টুন সরানোর বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘাটের এমন দশায় হতাশা প্রকাশ করে ঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাব্যতা–সংকটের কারণে যাত্রীরা লঞ্চঘাটে আসেন না। যাত্রীরা গালমন্দ করে ঘাট থেকে ফিরে যান। দিনে দিনে ঘাটে যাত্রী আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লঞ্চঘাটের ইজারা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছি।’
কয়েক বছর আগেও ভোররাত থেকে লঞ্চের হর্ন বাজতে শুরু করত। লোকেলোকারণ্য হয়ে উঠত লঞ্চঘাট এলাকা। যাত্রীদের ভারী মালামাল আনা–নেওয়ার কাজে ছুটে যেতেন শ্রমিকেরা। কোলাহল থাকত ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এমনই ছিল মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম লঞ্চঘাটের নিত্যদিনের গল্প। নাব্যতা–সংকটের কারণে এই ঘাট দিয়ে এখন নিয়মিত লঞ্চ চলে না।
রাজধানীর যেসব এলাকায় বুধবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় আগামীকাল বুধবার বেলা ১টা থেকে পরবর্তী ১১ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। আজ মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি কাজের জন্য ৭ ডিসেম্বর (বুধবার) বেলা ১টা থেকে দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এলাকাগুলো হলো—তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান, বনানী, নতুনবাজার, বাড্ডা, খিলবাড়ীরটেক। একই সময় আশপাশের এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় আগামীকাল বুধবার বেলা ১টা থেকে পরবর্তী ১১ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। আজ মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
উপসচিবের বাসা থেকে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার, তদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর
রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল সোমবার রাতে আমেনা আক্তার (১৩) নামের এক গৃহকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানা-পুলিশ জানায়, যে বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনিরুজ্জামানের। আমেনা দেড় বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে। বাবার নাম মো. মামুন। হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক ইদ্রিস আলী বলেন, সোমবার রাতে ইস্কাটনের একটি বাড়ির আটতলা থেকে আমেনার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল মরদেহটি। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই গতকাল সকালে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য মরদেহের ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়ে থাকে পুলিশ। তবে আমেনার মরদেহের ময়নাতদন্ত না করার জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসকের অনুরোধ ছিল। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যয়ন করলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা যায়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক  প্রথম আলোকে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়া আমেনার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার জেলা প্রশাসক এর অনুমতি দিতে পারেন। তিনি অনুরোধ করলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মনে করেন, এটাতে কোনো সমস্যা নেই এবং ময়নাতদন্ত ছাড়া এ ধরনের মৃত্যুতে মরদেহ হস্তান্তর করা যায়। তা ছাড়া আমেনার পরিবারের কোনো অভিযোগ ছিল না।
রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল সোমবার রাতে আমেনা আক্তার (১৩) নামের এক গৃহকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানা-পুলিশ জানায়, যে বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনিরুজ্জামানের। আমেনা দেড় বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে। বাবার নাম মো. মামুন।
‘কোনো মানুষের জীবনই পরিপূর্ণ হয় না’
জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছেন মিলন হোসেন (৩৫)। বুঝতে শেখার পর দেখলেন দুই ভাই আলাদা সংসার পেতেছেন। মিলনের আশ্রয় তখন মায়ের আঁচল। মায়ের দিনমজুরিতে খাবার জোটে মিলনের। মিলনের বয়স তখন ছয় কিংবা সাত। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর রাতে এসে মা রান্না করেন। এসব দেখে মিলনের আর ভালো লাগে না। মায়ের আশা, ছেলে পড়াশোনা করে বড় হবে। কিন্তু মিলনের ইচ্ছা মায়ের দুঃখ ঘোচানো। সিদ্ধান্ত নেন কাজে লেগে যাবেন। তারপর কেটে গেছে ২৮ বছর। মিলনের সত্তরোর্ধ্ব মা এখনো তাঁর সঙ্গেই আছেন। নারায়ণগঞ্জ বন্দরে যাঁদের নিয়মিত চলাফেরা, তাঁরা মিলনকে চেনেন। অসুস্থতায় কুঁজো হয়ে যাওয়া ছোট্ট শরীর নিয়ে প্রতিদিন বিকেল হলেই তিনি ফেরিঘাট এলাকায় দোকান খুলে বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত ডিম আর রুটি বিক্রি করেন। হেমন্তের এমনই এক রাতে মিলনের সঙ্গে কথা হয়। স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে আর মাকে নিয়ে বন্দরের লেদারস আবাসিক এলাকায় আড়াই হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় থাকেন মিলন। ১২ বছর বয়সী একটি মেয়ের পাশাপাশি ৪ বছরের একটি ছেলে আছে তাঁর। মিলনের একার আয়েই চলে পাঁচজনের সংসার। কথায় কথায় মিলন বলেন, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার হোশিয়ারিপল্লিতে তিনি সুতাকাটার শ্রমিক ছিলেন। কাজ করতে করতে একসময় ‘ওস্তাদ’ হয়ে ওঠেন। হোশিয়ারির কাজে ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের মেশিন চালানোর পাশাপাশি ‘কাটিং ম্যান’ হিসেবেও হাত পাকিয়ে নেন। তত দিনে অভাব কিছুটা দূর হয়। বিয়ে করে সংসার পাতেন। জন্ম হয় প্রথম সন্তানের। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মিলন যখন নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর, তখনই তাঁর দুঃসময় আসে। হঠাৎ টাইফয়েড জ্বরে পড়েন মিলন। ধারদেনা করে স্থানীয় এক চিকিৎসক দেখান। চিকিৎসায় সুস্থ হলেও ধীরে ধীরে চলাফেরার ক্ষমতা হারাতে থাকেন তিনি। সেসব দিনের কথা মনে করতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মিলন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা তিন মাস ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ছিলাম। সেখানকার ডাক্তার বলছিলেন, ভুল চিকিৎসায় আমি আজীবনের লাইগা পঙ্গু হইয়া গেছি। পরে আমার মেরুদণ্ড বাঁকা হইয়া গেল। আমি এখন আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না।’ হাসপাতাল থেকে ফেরার পর মিলনের নতুন যুদ্ধ শুরু হয়। পুরোনো কর্মস্থলে গিয়ে দেখেন, কোনো কাজই করতে পারছেন না। তখন থেকেই ডিম-রুটি বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকার ডিম-রুটি নিয়ে বসেন। খরচ বাদে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। ওই আয়েই অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, মেয়ের পড়াশোনা আর পাঁচটি মুখে খাবার জোটে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে মিলনকে। করোনার কারণে দেনায় পড়েছিলেন। সেই দেনার পাঁচ হাজার টাকা এখনো শোধ হয়নি। এর মধ্যে বাড়তি বাজারদরে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ইচ্ছা সত্ত্বেও পুঁজি বাড়াতে পারছেন না। আশায় বুক বেঁধেছেন, ‘সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে’ প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে বসবেন। তাতে আয়ও বেশি হবে। বাড়তি আয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা হবে। কথার ফাঁকে মিলনের কাছে জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কি না জানতে চাইলে হেসে ফেলেন তিনি। কিছুক্ষণ থেমে থেকে বলেন বলেন, ‘কিছু লোক আছে খাইয়া টাকা না দিয়া চইলা যায়। তারা হয়তো ভাবে আমি প্রতিবন্ধী, চাইলেও কিছু করতে পারমু না। এসব মানুষ নিয়া দুঃখ হয়। এমনিতে আমার জীবনে দুঃখ ছাড়া কিছু পাই নাই, ছোডবেলা থেইকা কাম কইরাই জীবন শেষ। কোনো দিনও উচ্ছ্বাস করতে পারি নাই। একটা সুস্থ মানুষ ভুল চিকিৎসায় প্রতিবন্ধী হইয়া গেলাম।’ মিলন বলেন, ‘প্রথম প্রথম এসব ভাইবা খুব কষ্ট লাগত। পরে ভাইবা দেখলাম, জীবন আসলে এমনই, কোনো মানুষের জীবনই পরিপূর্ণ হয় না। কারও অর্থসম্পদ নাই, কারও মনের মানুষ নাই, কারও আবার চরিত্রই নাই। আমার মতো কারও কারও স্বাস্থ্য নাই। আবার দেখি সবই আছে, কিন্তু সুখ নাই। এটা দুনিয়ার নিয়ম। আমি এই নিয়ম মাইনা নিছি। এখন একটাই চাওয়া, জীবনে যেন সম্মান নিয়া বাঁচতে পারি। কারও কাছে যেন মাথা নত করতে না হয়।’
জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছেন মিলন হোসেন (৩৫)। বুঝতে শেখার পর দেখলেন দুই ভাই আলাদা সংসার পেতেছেন। মিলনের আশ্রয় তখন মায়ের আঁচল। মায়ের দিনমজুরিতে খাবার জোটে মিলনের।
সরিষাবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দাদা-নাতির মৃত্যু
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কান্দারপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন মারা গেছেন। সম্পর্কে তাঁরা দাদা-নাতি। এই দুজন হলেন মুজিবুর রহমান (৬০) ও তাঁর ৩ বছর বয়সী নাতি কাউসার মিয়া। তাঁরা উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কান্দারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দুজনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে কান্দারপাড়া গ্রামের মুজিবুর রহমান তাঁর নাতি কাউসার মিয়াকে নিয়ে বাড়ির পাশে ফসলের খেতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বৈদ্যুতিক পাম্পের তারে আটকে তাঁরা গুরুতর আহত হন। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল গফুর বলেন, তাঁরা ঘটনাটি শুনেছেন। খুব দুঃখজনক ঘটনা। সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কান্দারপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন মারা গেছেন। সম্পর্কে তাঁরা দাদা-নাতি।
নোয়াখালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, আলোচনা সেটা নিয়ে
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল সোমবার। সম্মেলনে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হলেও হয়নি সাধারণ সম্পাদকের নাম। ওই পদে একাধিক প্রার্থীর নাম থাকায় সেটি পরবর্তীকালে সমঝোতা কিংবা কাউন্সিলরদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারণ, না হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ কারণে জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আলোচনা এখন কে হচ্ছেন আগামীর সাধারণ সম্পাদক, সেটা নিয়ে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরবর্তী মেয়াদের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। খায়রুল আনম জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক এবং এর আগে ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, পরে পূর্ণাঙ্গ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ওবায়দুল কাদের সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদে এখানে বিভক্তি আছে, আমি কাউকে আপন, কাউকে পর করতে চাই না। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বপন (আবু সাঈদ আল মাহমুদ) সেটি ঠিক করবে। কাউন্সিলরের তালিকায় গরমিল আছে, সেটি ঠিক করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে মনের মতো লোককে দেওয়া হবে।’ কিন্তু সেই মনের মতো লোক কে? সে হিসাব কষছেন এখন দলীয় নেতা-কর্মী ও তৃণমূলের সমর্থকেরাও। দলীয় সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদেরের ওই ঘোষণার পর নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের নাম প্রস্তাব করেন। মোরশেদ আলমের এই ঘোষণার পরই নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ ওই প্রস্তাব সমর্থন করেন। সহিদ উল্যাহ খান নোয়াখালী পৌরসভার টানা দুই মেয়াদের মেয়র। এর আগে তিনি শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদ এই দুই সংসদ সদস্যের প্রস্তাব ও সমর্থন ঘোষণার আগে নিজের বক্তৃতায় অনেকটা আগবাড়িয়ে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক পদে সহিদ উল্যাহ খানের নাম সুপারিশ করেন। তখন একরামুল করিম চৌধুরী মেয়র সহিদ উল্যাহ খানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এই ছেলের মনে আমি কষ্ট দিলেও সে কখনো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। যাঁরা নেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, সম্মান করতে জানেন না, তাঁরা নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা রাখেন না।’ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর নামসহ সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন। তিনি এর আগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের টানা দুই মেয়াদের চেয়ারম্যান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৭ ডিসেম্বর কিংবা তার দু-এক দিন পর এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই ভোটে দলের ৯টি উপজেলার কাউন্সিলরেরা বেছে নেবেন তাঁদের পরবর্তী মেয়াদের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহিন আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলরদের ভোটাভুটিতে নির্ধারণ হবে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন। এ ক্ষেত্রে সমঝোতার কোন সুযোগ রয়েছে কি না? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমঝোতা বলতে নেত্রী যেকোনো সময় এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগে আর সম্মেলন হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। সভাপতি হয়ে গেছেন। এখন সাধারণ সম্পাদক পদে এমন একজনকে বেছে নিতে হবে, যিনি শুধুমাত্র কথায় নয়, কাজ করে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন। আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।’
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল সোমবার। সম্মেলনে সভাপতির নাম ঘোষণা করা হলেও হয়নি সাধারণ সম্পাদকের নাম। ওই পদে একাধিক প্রার্থীর নাম থাকায় সেটি পরবর্তীকালে সমঝোতা কিংবা কাউন্সিলরদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারণ, না হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ কারণে জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আলোচনা এখন কে হচ্ছেন আগামীর সাধারণ সম্পাদক, সেটা নিয়ে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের দিকের আয়না বাইরে স্থাপনে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
সারা দেশের সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের উভয় দিকের বাইরে (ডানে ও বাঁয়ে) আয়না প্রতিস্থাপনের জন্য দুই মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। রাজধানীতে চলমান সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরে যানবাহনের ফিটনেস জরিপের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই একটি রিট করেছিলেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অন্তত ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। কমিটি গঠন করে আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, আদালতে প্রতিবেদন জমা পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার আয়না বাইরে রাখার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে মতামতসংবলিত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে। তার ওপর শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। বিআরটিএর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। আদেশের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাধ্যতামূলকভাবে ফ্ল্যাট আয়না লাগাতে হবে। ঐচ্ছিকভাবে ফ্ল্যাট ও কনভেসের সমন্বয়ে আয়না লাগানো যাবে। পেছনে দেখার জন্য ঐচ্ছিকভাবে ছোট ক্যামেরা লাগানো যাবে। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত। আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে সেদিন বিআরটিএকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিআরটিএর আইনজীবী রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের সিএনজিচালিত থ্রি–হুইলার অটোরিকশার সামনের উভয় দিকে লুকিং গ্লাস বসাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে মালিকেরা চাইলে দুই পাশে ফ্ল্যাট ও কনভেস আয়না বসাতে পারবেন। এমন আয়না বসাতে মালিকদের দুই মাস সময় দিয়ে বিআরটিএকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিট আবেদনকারীর ভাষ্য, মোটরযান আইনে আছে, গাড়িতে লুকিং গ্লাস থাকতে হবে। অথচ সড়কে চলা যানবাহনগুলোর বেশির ভাগের লুকিং গ্লাস, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট ঠিক নেই। অনেক যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেসও নেই, অথচ তা রাস্তায় চলাচল করে। ফিটনেসবিহীন এসব যান চলাচলের কারণে যেখানে-সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ প্রাণ হারায়। এ কারণে রিটটি করা হয়।
সারা দেশের সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের উভয় দিকের বাইরে (ডানে ও বাঁয়ে) আয়না প্রতিস্থাপনের জন্য দুই মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৪ জন
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, যাত্রীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক যাত্রী। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার তুগুরিয়া এলাকায় নোয়াখালী-লাকসাম রেলপথে একটি অবৈধ ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাকসাম রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেন হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন অটোরিকশার যাত্রী মনোহরগঞ্জের উত্তর হাওলা গ্রামের মাকসুদুর রহমান (৬৫), আবু তাহেরের ছেলে মোহাম্মদ হাবিব (২২), খিলা ইউনিয়নের ভরণীখণ্ড গ্রামের আবদুল হাইয়ের মেয়ে মইফুল বেগম (৩৫) এবং অটোরিকশাচালক উত্তর হাওলা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০)। এ ঘটনায় আহত এক যাত্রীর নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। দুপুর ১২টার দিকে এসআই আবুল হোসেন বলেন, নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা লাকসামগামী ‘নোয়াখালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সঙ্গে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের সামনে চলে আসে। এতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে তিন যাত্রী নিহত হন। পরে লাকসামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান অটোরিকশাচালক। আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা আরেকজন যাত্রী আহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি, তবে তাঁর সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশাটি সরিয়ে নিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।’
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক, যাত্রীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক যাত্রী। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার তুগুরিয়া এলাকায় নোয়াখালী-লাকসাম রেলপথে একটি অবৈধ ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আধুনিক কৃষিযন্ত্র নিয়ে কাজ করছে এসিআই
বাংলাদেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে এসিআই। কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আসছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। এসিআই মোটরস লিমিটেড ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলার অদূরে জাইগির বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছে এসিআই অ্যাগ্রি মেশিনারি ফ্যাক্টরি। সম্প্রতি (২৯ নভেম্বর) এসিআই মোটরসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ কারখানা পরিদর্শন করেন। মানিকগঞ্জের এই কারখানায় যৌথভাবে কাজ করছে ইয়ানমার ও এসিআই। ২০১৮ সালে এসিআই মোটরস বাংলাদেশে সেরা মানের হারভেস্টার ও ট্রান্সপ্ল্যান্টার সরবরাহের জন্য ইয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করে। ১৯১২ সালে জাপানের ওসাকায় প্রতিষ্ঠিত ইয়ানমার আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ইয়ানমার বিশ্বের ১৩০টি দেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। অন্যদিকে এসিআই মোটরস দেশের বৃহৎ কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে এ দেশের কৃষিতে অনন্য অবদান রেখে আসছে তারা। কারখানা পরিদর্শনের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। তিনি কারখানা ঘুরে এসিআইয়ের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য দেখেন এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রের ভূমিকা অপরিসীম। এসিআই মোটরস লিমিটেড কৃষিক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করে আসছে যাত্রার শুরু থেকে, যার ফলে এসিআই মোটরস লিমিটেড উন্নত গুণগত মানের কৃষিযন্ত্রপাতি বাজারজাত করে দেশের কৃষক ও মানুষের খাদ্য উৎপাদনকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের কৃষিযন্ত্রাদির মধ্যে স্থানীয় কৃষিযন্ত্রাদি গ্রামীণ মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষিযন্ত্র হলো ধান ও ভুট্টা মাড়াইকল এবং হ্যান্ড পাওয়ারটিলার। বর্তমানে এসব পণ্যের বাৎসরিক মার্কেট-সাইজ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।’ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মেশিনারিতে দেশের জন্য স্থানীয় কৃষিযন্ত্রাদি তৈরি করছে এসিআই। এর মধ্যে রয়েছে সিএনসি ক্যার্টিং মেশিন, অত্যাধুনিক লেথে সেকশন, হাইড্রোলিক প্রেসব্রেক মেশিন ইত্যাদি। বর্তমানে এসিআই অ্যাগ্রি মেশিনারি ফ্যাক্টরিতে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজার কৃষিপণ্য তৈরি হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে স্থানীয় অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসিআই। তেমনই একজন শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘নিজের বাড়িতে থেকেই এসিআইয়ের কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমার মতো এলাকার অনেক মানুষই আর্থিকভাবে বেশ ভালো আছে।’ শাহ আলমের মতো আরও ১৫০ জন লোক বর্তমানে এসিআই অ্যাগ্রি ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন, যাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলে তারপর পণ্য প্রস্তুতের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। একই সঙ্গে এসিআই মোটরস কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও খুব সতর্ক। নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এসিআই অ্যাগ্রি ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত ফায়ার ও ফার্স্টএইডবিষয়ক ড্রিল আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এসিআই মোটরস লিমিটেড ভবিষ্যতে এই অ্যাগ্রি মেশিনারি ফ্যাক্টরির মাধ্যমে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করবে, যার মধ্যে হারভেস্টার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন অ্যাডভান্সড টেকনোলজিসম্পন্ন কৃষিযন্ত্রপাতি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এসিআই অ্যাগ্রি ফ্যাক্টরিকে এশিয়ার বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কৃষিযন্ত্রপাতি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এসিআই মোটরস। পাশাপাশি দেশের কৃষিযন্ত্রপাতির ক্ষেত্রকে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ করাও অন্যতম উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে এসিআই। কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আসছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি।
দাবাই তাদের মন ভালো রাখার দাওয়াই
কারও চোখে টলমল জল। কেউ বা কষ্টে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না থামানোর চেষ্টায় রত। জটলা থেকে একটু দূরে, এক কোনায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছেন কয়েকজন। মাঝবয়সী লোকটির মুখের এক কোণে আটকে আছে কষ্টের চিহ্ন। মাঠের অন্য প্রান্তের দৃশ্যটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চলছে আনন্দ-উল্লাস, হইচই। অভিভাবকেরাও শামিল হয়েছেন সন্তানদের সেই উদ্‌যাপনে। ঘটনাগুলো বরিশাল জিলা পুলিশ লাইনসের। দাবা খেলাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল এসব হাসি-কান্নার দৃশ্য। ‘মার্কস অ্যাকটিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ উপলক্ষে খুদে দাবাড়ুদের মন ভালো রাখার এই অন্য রকম আয়োজন দেশব্যাপী চলছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে এবং আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়। ভারতের কিংবদন্তিতুল্য দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ কিংবা বাংলাদেশের রিফাত বিন সাত্তারের মতো হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাজারের অধিক খুদে দাবাড়ু হাজির হয়েছিল ধান-নদী-খাল—এই তিন দিয়ে গঠিত বিভাগ বরিশালে। বরিশাল বিভাগের জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হয়েছিল ১৫৫টি স্কুল দাবা দলের মধ্যে। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন দলগুলো অংশ নেয় বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় এবং বরিশাল জিলা স্কুলের ‘শাপলা টিম’ হয় বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন দলটির অন্যতম সদস্য অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাদমিম রাহা রাজ্য। তার এ সাফল্যে গর্বিত পরিবারের সদস্যরা। কথা হয় রাজ্যের মা হোসেনী জাহিদা পারভীনের সঙ্গে। সন্তানের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত জাহিদা পারভীন বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজ্য পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় বেশ ভালো। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা পছন্দ করলেও ওর ধ্যান-জ্ঞান ছিল দাবা খেলা। নিজের চেয়ে বয়সে বড়দের প্রায়ই দাবা খেলায় হারিয়ে দিত রাজ্য। বড় হয়ে সে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের মতো খেলোয়াড় হতে চায়। বরিশাল জিলা স্কুলের শাপলা টিমের আরেক সদস্য উৎস সরকার। বড় হয়ে সে হতে চায় বিশ্বের সেরা দাবাড়ু। কিন্তু বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে উৎসকে। দাবা খেলার বোর্ডসহ নানা উপকরণ ছাড়াই অনুশীলন করতে হয় তাকে। বড় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও এগিয়ে চলছে তার পথচলা। আগ্রহ আর চেষ্টা থাকলে অসম্ভবকে জয় করা যায়। সেটা মেনেই ইউটিউবের নানা ভিডিও দেখে দাবার খুঁটিনাটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করছে উৎস। তার স্বপ্ন, একদিন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। দাবার বিশ্বদরবারে পত পত করে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। করোনা অতিমারির সময় ঘরে বন্দী থাকতে হতো বলে মন খারাপ থাকত যুনায়েদ রহমানের। খুব বোরিং সময় যাচ্ছিল। স্কুল বন্ধ, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। মাঠে গিয়েও খেলার মতো সুযোগ ছিল না। এক বিকেলে বাবার সঙ্গে দাবা খেলতে বসে যুনায়েদ। খেলায় এতটাই মগ্ন ছিল দুজন, কখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে গেছে—টেরই পায়নি বাবা-ছেলে। এরপর পুরো বিধিনিষেধের অলস সময়টায় দাবা খেলায় মজে ছিল বরিশাল জিলা স্কুলের ছাত্র যুনায়েদ। তার সেই অধ্যবসায় বিফলে যায়নি। বিভাগের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছে নিজের স্কুলকে। এই দলের আরেক সদস্য হাসনাইন ইসলাম মুনিম। মুনিম সুযোগ পেলেই চাচা, ফুফু, মামা ও খালামনির সঙ্গে দাবা খেলতেন। দাবার প্রতি ভালোবাসার গল্পটা শোনা যাক মুনিমের মুখেই, ‘আমার লক্ষ্য থাকত খেলায় বিজয়ী হওয়ার। বাবার সঙ্গে খেলতে গিয়ে প্রায়ই ঝামেলা হতো। বাবা জিতে গেলেই আমি তা মেনে নিতে পারতাম না। মায়ের মধ্যস্থতায় বাবার সঙ্গে চুক্তি হয়, মন্ত্রী ছাড়া খেলতে হবে আমার সঙ্গে! জিততে পারলেই আমার আনন্দ। এভাবেই বাবা আমাকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। আর আমি দাবা খেলার উৎসাহ পেতাম।’ বলতে বলতে অন্য রকম এক আনন্দে ঝলমলিয়ে ওঠে মুনিমের চোখ-মুখ, ‘আমার ছোট চাচ্চু আমাকে দাবা খেলার সামগ্রী উপহার দিতেন, যা অন্য সব দামি উপহারের চেয়ে আমার কাছে মূল্যবান মনে হতো। মাঝখানে দীর্ঘ সময় লেখাপড়ার চাপে দাবা খেলা হতো না। মূলত করোনা আমাকে মাঠ থেকে সরিয়ে নতুন করে আবার দাবার ভুবনে নিয়ে আসে। খেলার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে করোনা-পরবর্তী সময়ে বাবার অনুপ্রেরণায় নাম লেখাই দাবা প্রতিযোগিতায়।’ এরপরের গল্পটা তো সবার জানা। অসংখ্য মেধাবী দাবাড়ু দলকে হটিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মুনিমের স্কুল। এস এম হাসিবুল আলম দিহানের বাবার বদলির চাকরি। তাই বাবাকে ছাড়াই থাকতে হয় তাকে। বাবার অনুপস্থিতির কষ্ট কিছুটা হলেও দিহানকে ভুলিয়ে দেয় দাবা। দাবা দেখলেই মন ভালো থাকে তার। যেমনটি হয় চ্যাম্পিয়ন দলের অন্য সদস্য রুবাইয়াত আফরোজ অর্ণবেরও। বরিশাল বিভাগের প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হয়েছে বরগুনা জিলা স্কুল এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়, ঝালকাঠি। দেশসেরা দাবাড়ু হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার যে স্বপ্ন আর অদম্য ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে খুদে দাবাড়ুরা—সেটা সফল হবে বলেই আশাবাদী ‘মার্কস অ্যাকটিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’–এর আয়োজকেরা।
কারও চোখে টলমল জল। কেউ বা কষ্টে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না থামানোর চেষ্টায় রত। জটলা থেকে একটু দূরে, এক কোনায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছেন কয়েকজন। মাঝবয়সী লোকটির মুখের এক কোণে আটকে আছে কষ্টের চিহ্ন।
সোহরাওয়ার্দী না হলে পূর্বাচল, ইজতেমা মাঠ বা কামরাঙ্গীরচরে যেতে পারে বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না চাইলে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠ, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বা কামরাঙ্গীরচরের মাঠে যেতে পারে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি–ঘোষিত গণসমাবেশের ধারাবাহিক কর্মসূচি শেষ হবে। ওই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি, কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছে এখন। এ ব্যাপারে আজ সচিবালয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে বিএনপি কোনো জনসভা করতে চায় না, তারা এটিকে ইস্যু বানাতে চায়। বিএনপি একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবে না। যেহেতু দলীয় সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে, তাই দল ও দলের নেতা–কর্মীদের কর্তব্য আছে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালালে দলের নেতা–কর্মীরা দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না চাইলে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠ, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বা কামরাঙ্গীরচরের মাঠে যেতে পারে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
লক্ষ্মীপুরে সম্মেলন ছাড়াই ছাত্রলীগের চার কমিটি ঘোষণা, আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ
লক্ষ্মীপুরে সম্মেলন না করেই রামগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার চারটি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার রাত ১১টার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত একাধিক ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াই এভাবে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের সাবেক ও বর্তমান দুই নেতা দাবি করেন, রামগঞ্জের তিন কমিটিতে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকা থেকে গতকাল রাতেই তাঁরা এসব কমিটির অনুমোদন দেন বলে জানা গেছে। গতকাল রাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয় রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের তিনটি শাখার। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে অপু মালকে, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন সাজিদ হাসান। পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে রাকিবুল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রবিন মালের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে ফজলে রাব্বিকে, আর আহমেদ কাওসারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এদিকে কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদে নূর উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদে হারুনুর রশিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একসঙ্গে চার কমিটি ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নতুন কমিটিগুলোতে পদ পাওয়া নেতারা ফেসবুকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। আবার পদ পাওয়া নেতাদের অনুসারী-সমর্থকেরাও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তবে পদবঞ্চিত ও দলের সাবেক নেতারা এভাবে কমিটি ঘোষণার সমালোচনা করেছেন। অনেকেই এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে রামগঞ্জের তিনটি কমিটি গঠনে প্রায় দুই কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষস্থানীয় নেতা। এর মধ্যে শুধু উপজেলা কমিটিতেই ১ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের চার সাবেক নেতা বলেন, তাড়াহুড়া করে সম্মেলন ছাড়াই এক রাতে একের পর এক কমিটি ঘোষণা করেছেন সাইফুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন। এই ‘কমিটি–ঝড়’ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। তবে নিন্দা দেখা যাচ্ছে বেশি। লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন আল রশিদ গতকাল রাতে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘মুজিব আদর্শের আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রামগঞ্জ উপজেলা শাখার প্রিয় ভাইদের জন্য কিছুই করতে পারি নাই। মাফ করে দিস এই অযোগ্য লোককে। রাজনীতিতে এখন আর শ্রম, ঘাম কিংবা ত্যাগ লাগে না। রাজনীতি যখন মুক্তবাজার অর্থনীতির কাছে চলে যায়, তখন কিছুই করার থাকে না।’ সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠনকে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন না করে শুধু সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক রাতে উপজেলার চারটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা ছাত্রলীগের মতো বৃহৎ সংগঠনের কাছে কর্মীরা প্রত্যাশা করেন না। জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নভেম্বর মাসে ছাত্রলীগের ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিরোধ এড়াতে সম্মেলন করা হয়নি। কমিটি আগামী এক বছর মেয়াদে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এভাবে কমিটি গঠিত হওয়ায় সবাই সন্তুষ্ট বলে তিনি দাবি করেন। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাঁরা কমিটিতে পদ পাননি, তাঁরাই এই অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুরে সম্মেলন না করেই রামগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার চারটি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার রাত ১১টার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত একাধিক ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াই এভাবে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের সাবেক ও বর্তমান দুই নেতা দাবি করেন, রামগঞ্জের তিন কমিটিতে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
হতাশ বাবা, ডিবি-র‍্যাবের পরস্পরবিরোধী তথ্যে বিভ্রান্ত সহপাঠীরা
এক মাসেও বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর হত্যার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশার কথা জানিয়েছেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। আর ফারদিনের সহপাঠীরা লিখিত বক্তব্যে জানান, এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি এবং ছায়া তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে আসা পরস্পরবিরোধী তথ্য দেখে তাঁরা বিভ্রান্ত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন করে লিখিত বক্তব্যে তাঁরা ফারদিন হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন। মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। গত ৪ নভেম্বর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর নিখোঁজ হন। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৮ নভেম্বর ফারদিনের ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক বলেন, ফারদিনের বুকে ও মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আজ ফারদিনের মরদেহ প্রাপ্তির ২৯তম দিনে এসেও আমরা জানি না কী কারণে আমাদের বন্ধু ফারদিনকে হত্যা করা হলো। তদন্তের এই দীর্ঘসূত্রতা দেখে আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা অনেক আশাহত। ইতিমধ্যে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি এবং ছায়া তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে আসা পরস্পরবিরোধী তথ্য দেখে আমরা বিভ্রান্ত।’ বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ফারদিনের পরিবারের পাশে আছে জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফারদিনের পরিবারের পাশে আছি এবং থাকব। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ফারদিনের মতো আর কোনো মেধাবীপ্রাণ এভাবে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে না।’ মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসেও খুনিরা চিহ্নিত হয়নি, এটা দুঃখজনক। তদন্তকারী সংস্থা তদন্তে কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি, এতে হতাশ হয়েছি। আশা করি, তদন্তকারীরা ফারদিনের খুনিদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ ফারদিন খুনের পর বুয়েট প্রশাসনের সমালোচনা করে ফারদিনের বাবা বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করছেন, অথচ প্রশাসনের কেউ তাঁদের সহমর্মিতা জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ফারদিন হত্যার বিচার দাবি করেছে।
এক মাসেও বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর হত্যার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশার কথা জানিয়েছেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। আর ফারদিনের সহপাঠীরা লিখিত বক্তব্যে জানান, এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি এবং ছায়া তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে আসা পরস্পরবিরোধী তথ্য দেখে তাঁরা বিভ্রান্ত।
বোয়ালখালীতে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় রুমা আকতার (২০) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চরখিজিরপুর এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। রুমার ভাইয়ের দাবি, মানসিক নির্যাতনে রুমার মৃত্যু হয়েছে। রুমা পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়নের চরখিজিরপুর গ্রামের মোবারক আলীবাড়ির ওমানপ্রবাসী আবু তৈয়বের স্ত্রী। তাঁদের দুই বছরের এক ছেলে আছে। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক মো. ফারুক। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘরের ছাদের সিলিং ফ্যানের পেছনের থাকা রডের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় রুমাকে ঝুলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। ফাঁস লাগানোর কারণে তাঁর গলায় একটি দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। রুমার ভাই লোকমান অভিযোগ করে বলেন, শ্বশুরবাড়ির মানসিক নির্যাতনের কারণেই রুমার মৃত্যু হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন সম্পদশালী হওয়ায় তাঁর বোনকে প্রায় দিনই মানসিক নির্যাতন করা হতো। তাঁর বোনের স্বামী প্রবাসে থাকলেও স্ত্রীর সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতেন না। রুমার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নেই। তাই শাশুড়ির মুঠোফোন থেকে মাঝেমধ্যে স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে হতো। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রুমার শাশুড়ি লায়লা বেগম বলেন, রুমা তাঁর ছেলে ও ১০ বছরের ননদকে সঙ্গে নিয়ে রাতে এক কক্ষে ঘুমান। গতকাল রাতেও রুমা ছেলে ও ননদকে নিয়ে ঘুমাতে যান। এর আগে রাতে রুমা স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রুমার ছেলের কান্নার শব্দে সবার ঘুম ভেঙে যায়। পরে ঘরের বাইরে এসে তাঁরা দেখতে পান, বাড়ির অন্য একটি কক্ষে রুমার লাশ ঝুলে আছে। রাতে রুমা কখন আত্মহত্যা কখন করেছেন অথবা স্বামীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সেটা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের লাশ উদ্ধারের পর আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় রুমা আকতার (২০) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চরখিজিরপুর এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। রুমার ভাইয়ের দাবি, মানসিক নির্যাতনে রুমার মৃত্যু হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে কক্সবাজারবাসী আরও কিছু প্রত্যাশা করেন’
কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার শেষ নেই। কক্সবাজার নিয়ে তাঁর সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কক্সবাজারকে খুব বেশি পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন এখানকার বাসিন্দাদের। তাই এত উন্নয়নের পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে কক্সবাজারবাসী আরও কিছু প্রত্যাশা করেন। ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারে আগমন উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে শহরের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের মেগা প্রকল্পগুলোয় সরকারের খরচ হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে কক্সবাজারে। এবারের সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল সংযুক্তকরণ, কক্সবাজার-মহেশখালী সদরে সংযোগ সেতু নির্মাণ, বাঁকখালী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে ফেরি চলাচল শুরু করা, কক্সবাজারে পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন, মেরিন ড্রাইভকে চার লেনে এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা, কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করা ও কক্সবাজার সিটি কলেজকে সরকারীকরণ। কক্সবাজার পৌরসভার এই মেয়র বলেন, ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে শহরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জনসভাস্থলসহ পুরো শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। লিখিত বক্তব্যে মুজিবুর রহমান বলেন, করোনা মহামারিসহ নানা কারণে পাঁচ বছর পর কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ৬ মে এই স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে কক্সবাজারে ৪০টির বেশি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেললাইন সম্প্রসারণ, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, ২০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে পুর্নবাসনে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ হাসিনা নৌঘাঁটি, রামু হাইটেক পার্ক, জাতীয় সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র, কক্সবাজার ফুটবল স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় খুশি নয় বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টের চক্রান্ত করছে। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে চাইছে তারা। হাওয়া ভবনের মতো আরেকটি ভবন সৃষ্টি করে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনার পথ খুঁজছে। দুর্নীতিবাজ ও ফেরারি আসামি তারেক রহমান ও সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার এই নীলনকশা কখনোই সফল হতে দেবে না দেশের জনগণ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে দিয়েছেন অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৩টিই হচ্ছে কক্সবাজারে। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে কক্সবাজার। বিশ্বব্যাপী গুরুত্বও বাড়ছে পর্যটন শহরটির। গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী ৮ বার কক্সবাজারে এসেছেন। ৭ ডিসেম্বর আবার কক্সবাজারে আসছেন তিনি। এটা কক্সবাজারবাসীর জন্য মর্যাদার বিষয়। কক্সবাজারকে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার শহর উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্সবাজারে যতগুলো হোটেল–মোটেল রয়েছে, তিনটি ছাড়া বাকিগুলোর সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। মনুষ্য বর্জ্যসহ ময়লা–আবর্জনা যাচ্ছে শহরের বাঁকখালী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে। দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের পানি। মারা যাচ্ছে মাছসহ সামুদ্রিক প্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কক্সবাজারে কেন্দ্রীয় এসটিপি স্থাপনের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা বলেন, শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ থেকেও লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসবেন। ৭ ডিসেম্বরের শেখ হাসিনার জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে, স্টেডিয়াম ছাপিয়ে শহরেও তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না।
কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার শেষ নেই। কক্সবাজার নিয়ে তাঁর সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কক্সবাজারকে খুব বেশি পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন এখানকার বাসিন্দাদের। তাই এত উন্নয়নের পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে কক্সবাজারবাসী আরও কিছু প্রত্যাশা করেন।
‘কবিরাজবাড়ি’তে ঝাড়ফুঁকে চলে হাড়ভাঙার ‘চিকিৎসা’
সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আজুগড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে ঝুলছে ‘কবিরাজবাড়ি’ লেখা সাইনবোর্ড। এখানে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও হাড়ভাঙা রোগীদের ‘চিকিৎসা’ চলে। একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরা এমন ‘চিকিৎসাকেন্দ্র’ খুলে বসেছেন বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। কবিরাজদের দাবি, তাঁদের চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা অপচিকিৎসা। এসব কবিরাজবাড়ি রোগী আর তাঁদের স্বজনে সরগরম। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীরা ‘চিকিৎসা’ নিতে আসেন। এখানকার কবিরাজেরা ‘চিকিৎসা’ দিতে অন্যান্য এলাকায় যান। গ্রামের একটি কবিরাজবাড়িতে আছেন পাবনা থেকে আসা জহুরুল ইসলাম (৩৫)। তিনি বলেন, ১৪ দিন ধরে মাকে এখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাঁর একটি হাত বাঁশের কাঠি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সবার কাছে শুনেছেন যে এখানকার চিকিৎসা ভালো, তাই এসেছেন। তাঁর মায়ের হাতের অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে দাবি তাঁর। সব মিলিয়ে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হবে ১৮ হাজার টাকা। পাশের গ্রাম গোপালপুর থেকে শিশু গোপাল চন্দ্রকে (৭) নিয়ে এসেছেন তার বাবা, মা ও বড় ভাই। শিশুটির বাবা শিবেন চন্দ্র বলেন, স্কুলে খেলতে গিয়ে গোপালের হাত ভেঙে গেছে। সাত দিন হলো এখানে এসেছেন। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, কবিরাজেরা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে হাতুড়ে চিকিৎসা করে থাকেন। সাধারণ হাত ভাঙার চিকিৎসায় কবিরাজকে দিতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগে। প্রতিটি বাড়িতে রোগীদের থাকার জন্য একাধিক ঘর আছে। তবে খাবারের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হয়। বর্ষাকালে রোগীর সংখ্যা বাড়ে বলে তাঁদের তথ্য। এগুলোকে অপচিকিৎসা বললেন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন রাজিব মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কবিরাজদের ব্যান্ডেজের কারণে অনেক ক্ষেত্রে পচন ধরে যায়। পরে হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। আবার অনেক সময় ভুল ব্যান্ডেজের কারণে হাত বা পা কার্যকারিতা হারায়। অনুমাননির্ভর এ চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রে ভাঙা হাড় ঠিকমতো জোড়া লাগে না। রোগী সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এসব কবিরাজ কীভাবে দিনের পর দিন অনুমোদনহীন চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। এসব ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে প্রতারক ও দালাল চক্র কাজ করে। এ ছাড়া মানুষের অজ্ঞতা ও অন্ধ বিশ্বাসও দায়ী। সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের সঙ্গেই একে একে পাঁচটি বাড়ির সামনে ‘কবিরাজবাড়ি’ সাইনবোর্ড লাগানো। এসব সাইনবোর্ডের নিচে কবিরাজদের নাম লেখা। একটি বাড়িতে ৮০ বছর বয়সী কবিরাজ আবদুল হাইকে দেখা যায়, ঝাড়ফুঁক দিয়ে একজন হাতভাঙা রোগীর চিকিৎসা করছিলেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দেশের ৬০ জেলা থেকেই তাঁর কাছে রোগী আসেন। তাঁর বাবা জনাব আলী ও মা জহুরা খাতুনের কাছ থেকে পক্ষাঘাত ও হাড়ভাঙার কবিরাজি চিকিৎসা শিখেছেন। অন্যরাও একইভাবে বংশপরম্পরায় এ পেশায় এসেছেন। একবার পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হওয়ার পর খুব ঝামেলায় পড়েছিলেন জানিয়ে আবদুল হাই বলেন, এরপর ঢাকা থেকে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি মানুষের সেবা করছেন। কারও কোনো ক্ষতি করছেন না। গ্রামে তাঁর মতো অন্য যাঁরা আছেন, তাঁরা মানবসেবা করছেন। বাবার মৃত্যুর পর তাঁরা দুই ভাই ও এক বোন আলাদাভাবে কবিরাজি করেন। এখন ভাতিজারাও এ পেশায় এসেছেন। এখান থেকে ‘চিকিৎসা’ নেওয়া উপজেলার তামাই পশ্চিম পাড়া গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, গাছ কাটতে গিয়ে তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে যায়। কবিরাজি চিকিৎসায় হাড় জোড়া লেগেছে। কিন্তু খানিকটাই ছোট হয়ে গেছে পা। এ কারণে তাঁর হাঁটতে কষ্ট হয়। গ্রামের মোড়ে পল্লিচিকিৎসক ইউসুব আলীর ওষুধের দোকান। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসকেরা বলবেন, এটা অপচিকিৎসা। আর যাঁরা এখান থেকে সুস্থ হয়ে ফিরছেন, তাঁরা বলবেন, এখানে উপকার পাচ্ছেন। এখন কারটা মানবেন? পঙ্গু হাসপাতালে পা কেটে ফেলতে বলা হয়েছে, এমন অনেক রোগী এখানে এসেছেন বলে দাবি তাঁর। সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন রামপদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ওই গ্রামে যাবেন। এভাবে লাইসেন্স ছাড়া চিকিৎসা দেওয়া যায় না। এ অপচিকিৎসায় অনেক সাধারণ মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আজুগড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে ঝুলছে ‘কবিরাজবাড়ি’ লেখা সাইনবোর্ড। এখানে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও হাড়ভাঙা রোগীদের ‘চিকিৎসা’ চলে। একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরা এমন ‘চিকিৎসাকেন্দ্র’ খুলে বসেছেন বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। কবিরাজদের দাবি, তাঁদের চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা অপচিকিৎসা।
সচিবালয়ের প্রবেশ মুখেও বাড়তি নজরদারি
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রবেশে আজ বৃহস্পতিবার কিছুটা বাড়তি নজরদারি দেখা গেছে। সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশ প্রবেশের সময় পরিচয়পত্র (কার্ড) আছে কি না, তা জানতে চাইছে। সাধারণত মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকার পর ভেতরে যাচাই করার জন্য আলাদা জায়গায় পুলিশ পরিচয়পত্র দেখে। আজ প্রবেশের বাইরে এবং ভেতরে দুই জায়গায় পরিচয়পত্র আছে কি না, সেটি জানতে চাওয়া হচ্ছে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ সদস্য জানালেন আজ একটু বাড়তি চেক করা হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীমুখী প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। দূরপাল্লার বাস ও মোটরসাইকেলে বেশি তল্লাশি চলছে। যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও বস্তা খুলে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রবেশে আজ বৃহস্পতিবার কিছুটা বাড়তি নজরদারি দেখা গেছে। সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশ প্রবেশের সময় পরিচয়পত্র (কার্ড) আছে কি না, তা জানতে চাইছে।
পুলিশের তিন মামলা, আসামি পাঁচ শতাধিক
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের গতকাল বুধবার চলা সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল আটক বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অজ্ঞাতানামা আসামি করা হয়েছে কয়েক’শ জনকে। পল্টন থানায় গতকাল আটক ৪৫০ জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মতিঝিল থানায় ২৮ জন ও শাজাহানপুর থানায় ৫২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পল্টন থানায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান মামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: যে হাত মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে: শেখ হাসিনা নয়াপল্টন ‘ক্রাইম জোন’ চিহ্নিত, সাংবাদিকদেরও যেতে দিচ্ছে না পুলিশ ‘জামায়াতমুক্ত’ করার রাজনৈতিক প্রকল্প যে পরিণতি পেল ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে সরকার’ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি আছে। এই গণসমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিতর্ক-আলোচনার মধ্যেই গতকাল বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের গতকাল বুধবার চলা সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল আটক বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অজ্ঞাতানামা আসামি করা হয়েছে কয়েক’শ জনকে।
নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা হবে: পুলিশ
রাজধানীতে গতকাল বুধবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা হবে। আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান। হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, নয়াপল্টনে বিস্ফোরণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরক রাখা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও নাশকতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক মামলাগুলো করবে। মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এই উপকমিশনার বলেন, গতকাল বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে, তাঁরাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হবে। হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, গতকালের ঘটনায় শাহাজাহানপুর ও মতিঝিলে আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা গুরুতর। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, নয়াপল্টনে গতকাল সংঘর্ষের পর অভিযান চালিয়ে বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি আছে। এই গণসমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিতর্ক-আলোচনার মধ্যেই গতকাল বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
রাজধানীতে গতকাল বুধবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা হবে। আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান।
বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে পুলিশ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সিসি ক্যামেরা বসাতে দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, গতকাল বুধবার পুলিশ ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করতে এসব সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে যা করণীয়, তার সবই করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি আছে। এই গণসমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই গতকাল বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সিসি ক্যামেরা বসাতে দেখা গেছে।
ঢাবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্রতিবাদী মৌন অবস্থান
প্রতিবাদী মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। পরে পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ, নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশসহ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাদা দল। আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে মৌন অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। কর্মসূচিতে সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান, সাবেক আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, নেতা মামুন আহমেদ, আল-আমিন, আবুল কালাম সরকারসহ ৩০ জনের বেশি শিক্ষক অংশ নেন। ১৫ মিনিট মৌন অবস্থানের পর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন লুৎফর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে আমরা সাদা দলের শিক্ষকেরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। গতকালের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ জানাই। একজন মারা গেছেন, সে জন্য আমরা নিন্দা জানাই। আমরা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করি। নিশ্চয়ই সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’ লুৎফর রহমান বলেন, বিরোধী দলের যেকোনো কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিক আচরণ করা হবে, এটি তাঁদের প্রত্যাশা। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করেন। এই প্রক্রিয়ায় সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ করবে, সহযোগিতা করবে, সবার অংশগ্রহণে সমাবেশ সফল হবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করছেন। সাদা দলের এই কর্মসূচির আগে সকালে অপরাজেয় বাংলার সামনে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময়ের সহিংসতার কিছু ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রদর্শনীর আয়োজক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান। প্রদর্শনীর ছবির বিপরীত দিকে সাদা দল কর্মসূচি পালন করে। আজ সকাল থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা করেছেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘ছাত্রদলের গুন্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেন।
প্রতিবাদী মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
আ.লীগের বিরুদ্ধে বাবাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ যুবদলের সাবেক নেতার, পুলিশ বলছে স্ট্রোকে মৃত্যু
রাজধানীর ওয়ারীতে গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ঢুকে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ করেছেন যুবদলের সাবেক নেতা। তবে পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি স্ট্রোক করে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। আর এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম মিল্লাত হোসেন (৬৭)। নিহত ব্যক্তির ছেলে ফয়সল মেহেবুব ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফয়সল মেহেবুব প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৭০ থেকে ৮০ জন তাঁদের ওয়ারীর বাসায় ঢুকে পড়েন। তাঁরা ফয়সলের খোঁজ করেন। এ সময় তাঁর বাসার মালপত্র তছনছ করা হয়। ফয়সলকে না পেয়ে তাঁর চাচা শাহাদত হোসেনকে (স্বপন) ধরে মারতে মারতে নিচে নামান আওয়ামী লীগের লোকেরা। এ সময় ফয়সলের বাবা মিল্লাত হোসেন নিচে নেমে হামলাকারীদের কাছে শাহাদতকে মারধরের কারণ জানতে চান। তিনি বলেন, শাহাদত যুবদল করেন না। যুবদলের রাজনীতি করেন ফয়সল। একপর্যায়ে হামলাকারীরা মিল্লাত হোসেনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা শাহাদতকে ধরে পুলিশের ওয়ারী ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে আজ সকালে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিল্লাত হোসেন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাঁকে পেটানো হয়নি। তিনি স্ট্রোক করে নিচে পড়ে গেলে মাথায় আঘাত পান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি কবির হোসেন দাবি করেন, অজ্ঞাতনামা লোকজন ফয়সলকে না পেয়ে তাঁর চাচাকে আটক করে ওয়ারী ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। তারা ওয়ারী পুলিশকে বলে, গতকাল নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় শাহাদত জড়িত। পরে ওয়ারী ফাঁড়ির পুলিশ শাহাদতকে ওয়ারী থানায় সোপর্দ করে। তবে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় শাহাদতের জড়িত থাকার সত্যতা না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী নন বলে জানান ওসি। ‘অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা’ কারা, তাদের পরিচয় কী তা বলতে পারেননি ওসি। ফয়সলের কাছে জানতে চাওয়া হয় থানায় মামলা করেছেন কি না, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘থানার লোকতো আওয়ামী লীগের। কোথায় মামলা করব?’ মিল্লাত হোসেনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে। তাঁর দুই ছেলে।
রাজধানীর ওয়ারীতে গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ঢুকে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ করেছেন যুবদলের সাবেক নেতা। তবে পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি স্ট্রোক করে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। আর এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন, তরুণের মৃত্যু
রাজশাহীতে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগালে এক তরুণের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত তরুণের নাম মো. রাফি (২৪)। তাঁর বাড়ি নগরের হেতেমখাঁ এলাকায়। তাঁর বাবার নাম মো. বাবলু। তাঁর মা হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাঠে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগান রাফি। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তা দেখে দ্রুত রাফিকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান আফরোজা নাজনীন বলেন, আগুনে রাফির শরীরের ৯৯ শতাংশের বেশি পুড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিন ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিলেন তিনি। দিবাগত রাত একটার দিকে পরিবারের সদস্যরা লাশ বাড়ি নিয়ে দাফন করেন। পরিবারের বরাত দিয়ে চিকিৎসক আফরোজা নাজনীন আরও বলেন, রাফি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কোথাও কাজে যোগ দিলেও করতে পারতেন না। চার-পাঁচ বছর ধরে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের কাছে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বলেন, রাফির বিষয়টি তিনি শুনেছেন।
রাজশাহীতে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগালে এক তরুণের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
খুলনার হকার্স মার্কেটে আগুন, পুড়ে গেছে ৩ দোকান
খুলনায় বড় বাজার এলাকার খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ওই মার্কেটের তিনটি দোকান পুড়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাতে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা পাটোয়ারীর দোকান ও গুদামে আগুন দেখতে পান ব্যবসায়ীরা। পরে খবর পেয়ে নগরের টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও খুলনা সদর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে, সেটা কেউ বলতে পারছেন না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। খুলনা সদর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনটি দোকান পুড়েছে। এর মধ্যে একটি কসমেটিকসের দোকান, একটি তারের দোকান ও একটি রঙের দোকান রয়েছে। তবে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
খুলনায় বড় বাজার এলাকার খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ওই মার্কেটের তিনটি দোকান পুড়ে গেছে।
মিরসরাইয়ে ছাত্রদল নেতাকে ‘পিটিয়ে’ পুলিশে দিল ছাত্রলীগ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আসিফ নুর খান নামের এক ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে ছাত্রলীগ পুলিশে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে উপজেলা সদর বাস কাউন্টার এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। আসিফ উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মকসুদ আহাম্মদের ছেলে। তিনি মঘাদিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। আসিফ নুর খানের মা রাহেনূর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আসিফ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসিফ ঢাকায় যাওয়ার জন্য উপজেলা সদরের বাস কাউন্টারে গেলে সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেরা তাঁকে মারধর করেন। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছেলে ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও কোনো নাশকতার সঙ্গে যুক্ত নন বলে মায়ের দাবি। ঢাকায় সমাবেশে যাওয়ার পথে ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে অন্য এলাকার ছাত্রলীগের কর্মীরা এক ছাত্রদল নেতাকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন বলে তিনি জেনেছেন। তবে তাঁকে মারধর করার তথ্য সত্য নয় বলে তাঁর দাবি। এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কবির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে ব্যাগসহ সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে স্থানীয় কিছু ছেলে এক ছাত্রদল নেতাকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আসিফ নুর খান নামের এক ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে ছাত্রলীগ পুলিশে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে উপজেলা সদর বাস কাউন্টার এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সীতাকুণ্ডে একই দিনে বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা, যুবলীগ কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে নবনির্মিত যুবলীগের কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। উদ্বোধনের পাঁচ ঘণ্টার মাথায় গতকাল বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে যুবলীগের ওই কার্যালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে একই দিন বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওহিদুল ইসলাম ওরফে শরীফের বাড়িতে হামলা হয়। এ সময় ওই বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। যুবলীগের নেতাদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা ওহিদুলের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল যুবলীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ওহিদুল। তিনি বলেন, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলামের লোকজন প্রকাশ্যে তাঁর বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। এদিকে পরপর দুটি হামলার ঘটনার পর রাত সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোটদারোগাহাট ও পৌরসদরের ফকিরহাট এলাকায় দুটি ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। যুবলীগ নেতা সাইদুল প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পাঁচ ঘণ্টা পর রাত পৌনে আটটার দিকে ওহিদুলের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী ৫০ থেকে ৬০ যুবক যুবলীগ কার্যালয়ে হামলা চালান। প্রথমেই হামলাকারী ব্যক্তিরা একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এরপর তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কার্যালয়ের বেড়া কেটে ফেলেন। পরে হামলাকারী ব্যক্তিরা মিছিল করতে করতে সেখান থেকে চলে যান। যুবলীগের কার্যালয়ে হামলার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি ককটেলের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাহাজের সিগন্যাল লাইটেরও অংশ বিশেষ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল রাতে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা করেছে যুবলীগ। হামলার অভিযোগের বিষয়ে ওহিদুল ইসলাম বলেন, টেরিয়াইল এলাকায় যুবলীগের কার্যালয় আছে, সেটা তিনি জানেন না। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম শহরে আছেন। তাই ওই কার্যালয়ে হামলার প্রশ্নই আসে না। উল্টো সাইদুল ইসলামের লোকজন তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দাবি করে ওহিদুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এখন চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। গতকাল দুপুরে একাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে মুঠোফোনে জানায়, সাইদুলের লোকজন তাঁর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে। কেন হামলা হলো, সেটা তিনি জানেন না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যুবলীগের কার্যালয়ে হামলার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি ককটেলের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুবলীগের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ট্রাক ভাঙচুরের বিষয়ে জানে না পুলিশ গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোটদারোগাহাট ও পৌরসদরের ফকিরহাট এলাকায় দুটি ট্রাক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে একটি ট্রাকের চালক মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গার্মেন্টসের কাঁচামাল বোঝাই করে তিনি ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে ছোট দারোগাহাট এলাকায় পৌঁছানোর পর টয়লেটে যাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় বিপরীতমুখী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ৫ থেকে ৬ জন যুবক নেমে এসে ট্রাক ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁর মানিব্যাগ, লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ট্রাক ভাঙচুরের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামিউর রহমান।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নে নবনির্মিত যুবলীগের কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। উদ্বোধনের পাঁচ ঘণ্টার মাথায় গতকাল বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে যুবলীগের ওই কার্যালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে একই দিন বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওহিদুল ইসলাম ওরফে শরীফের বাড়িতে হামলা হয়। এ সময় ওই বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে বাধা, নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফিরে গেলেন মির্জা ফখরুল
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেননি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার কিছু আগে মির্জা ফখরুল নাইটিঙ্গেল মোড়ে আসেন। মির্জা ফখরুল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চান। তখন তাঁকে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধার কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেননি মির্জা ফখরুল। পরে নাইটিঙ্গেল মোড়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মির্জা ফখরুল কথা বলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকেও যেতে দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের পর নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে বিএনপির কার্যালয়মুখী সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১৫টি ককটেল উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো পুলিশ ও সরকারের ষড়যন্ত্র। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকেই ফিরে যান মির্জা ফখরুল। এর আগে আজ সকালে তিনি তিন বছর আগের নাশকতার মামলায় ঢাকার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি আছে। এই গণসমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই গতকাল বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশের অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর মির্জা ফখরুল কার্যালয়ের সামনে যান। তিনি ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন তিনি সামনের ফুটপাতে বসে পড়েন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল রাস্তা থেকে উঠে যান।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেননি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় যাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনে যাচ্ছেন, তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকতে পারছেন। পুলিশের বাধার কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেননি মির্জা ফখরুল। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকেই ফিরে যান তিনি। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘গতকাল বুধবারের অভিযানে বিএনপির কার্যালয় থেকে বিপুল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে আমরা কাউকে কার্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছি না। পুরো কার্যালয়ে পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট আছে। তারা জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। নিরাপদ ঘোষণা করলে কার্যালয়ে ঢোকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’ বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ উঠতেই পারে, তবে পুলিশ দায়িত্বপালন করছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় অফিস ও অন্যান্য প্রয়োজনে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছে। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় যাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনে যাচ্ছেন, তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকতে পারছেন।
সংস্কারে নিম্নমানের খোয়া
শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ রেখেছিলেন ঠিকাদার। আবারও কাজ শুরু করেছেন। তবে এবার নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেখান থেকে নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন পৌরসভার প্রকৌশলী। এটি কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র আর এ খান চৌধুরী সড়কের চিত্র। জানতে চাইলে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জুবাইর মাহবুব বলেন, গতকাল সকালে নিম্নমানের খোয়ার স্তূপ দেখার পর সেগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দুপুর পর্যন্ত সেগুলো ছিল। হয়তো কাজের তদারকিতে থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে সেগুলো ব্যবহার হতে পারে। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, পাঁচ রাস্তার মোড় থেকে ছয় রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৪২০ মিটার ও প্রস্থ ৪০-৫০ ফুট। গত বছর সড়কের দুই পাশে হাঁটাপথসহ ছয় ফুট চওড়া নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। পিচ ও পাথর উঠে ছোট-বড় গর্ত হয়ে তাতে পানি জমে থাকে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কয়েক বছর ধরে প্রায় আধা কিলোমিটারের সড়কটি বেহাল। তবে সংস্কারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। ব্যস্ততম সড়কটিতে চলতে ভোগান্তির শিকার লোকজন। কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে মুজিব চত্বর থেকে ছয় রাস্তায় যেতে এ সড়কের অবস্থান। শহরের সবচেয়ে বেশি চওড়া এ সড়কের দুই পাশে বহুতল একাধিক ভবন রয়েছে। রয়েছে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন হরিপুর ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন কাজের জন্য অসংখ্য মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। চলতি বছরের শুরুর দিকে মূল সড়কের উভয় পাশে মজবুতকরণসহ সড়ক চওড়া করার উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৩১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। কার্যাদেশ পান শহরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হান্নান এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশের মধ্যে আর এ খান সড়কসহ পাশে লরেন্স লেন নামের আরেকটি ১৩৫ মিটার সড়কের কাজও রয়েছে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এ কার্যাদেশ দেয় পৌরসভা। কাজ শেষ করার কথা রয়েছে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। কার্যাদেশ পাওয়ার সাড়ে সাত মাসেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। গত সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করেন ঠিকাদার। এক সপ্তাহ পর কাজ বন্ধ করে দেন। তিন দিন আগে আবারও কাজ শুরু করে ঠিকাদার। গতকাল বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে গভীর গর্ত করে বালু ও ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ঠিকাদারের কাজ তদারকির জন্য সেখানে ছিলেন সবুজ হাসান নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, খোয়ার মান সম্পর্কে তিনি জানেন না। তাঁকে বলা হয়েছে দেখাশোনা করতে। তাই তিনি এখানে রয়েছেন। কুষ্টিয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহিন উদ্দীন বলেন, সড়কে নিম্নমানের কাজ করার সুযোগ নেই। ঘটনাস্থলে প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়েছে। সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া হবে। কোনো গাফিলতি হলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ রেখেছিলেন ঠিকাদার। আবারও কাজ শুরু করেছেন। তবে এবার নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেখান থেকে নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন পৌরসভার প্রকৌশলী।
রাজবাড়ীতে আগের মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে বিএনপির ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মিছিলে বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে পাংশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার চারজন হলেন কসবামাজাইল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল মতিন বিশ্বাস (৪৭), মাছপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক (৩১), পাট্টা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সম্পাদক তৌহিদুর রহমান (৩০) ও বিএনপির সদস্য আকরাম হোসেন ওরফে সুমন (৪১)। এই চার ব্যক্তিকে মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ৩ ডিসেম্বর রাতে উপজেলা যুবলীগের কর্মী আকমল হোসেন (৪০) বাদী হয়ে পাংশা থানায় মামলা করেন। আকমল যুবলীগের সক্রিয় কর্মী, তবে দলীয় কোনো পদে নেই। তিনি উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরঝিকড়ি গ্রামের বাসিন্দা। ওই মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খানসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে ৩ ডিসেম্বর বিকেলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল বের করেন। ওইদিন পাঁচটার দিকে পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পাংশা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নারায়ণপুর দ্বীপ অ্যাগ্রোফুডের সামনে পৌঁছালে আসামিরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। একপর্যায়ে হামলকারীরা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। এতে মামলার বাদী (আকমল) ও রাজীব (২৬) নামের আরেকজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ককটেলের অংশবিশেষ উদ্ধার করে। পাংশা থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, মিছিলে বোমা হামলার অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছিল। গতকাল রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, বিশেষ কারণে বা শত্রুতার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা অন্যায়। রাজবাড়ীতে বিএনপির বিভিন্ন নেতা–কর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেও হানা দিচ্ছে। জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা–কর্মী কখনোই উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না, ভবিষ্যতেও জড়িত থাকবে না।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মিছিলে বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে পাংশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
সুপেয় পানির আশায় ২৩ বছর
২৩ বছর আগে রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা গঠিত হয়। এত দিন পরও এই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ৭২ লাখ টাকার পাইপলাইন মাটির নিচে রেখে নতুন করে আবার প্রায় ২৫ কোটি টাকা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বাঘা পৌরবাসীর আক্ষেপ, শুধু প্রকল্পের পর প্রকল্পই হাতে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা পানি পাচ্ছেন না। বাঘা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ২৪ জুন বাঘা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক। ২০০৬ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্কাছ আলীর কাছে আবদুর রাজ্জাক পরাজিত হন। আক্কাছ আলীর আমলে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে উন্নীত হয়। ২০১৭ সালে আক্কাছ আলী আবার আবদুর রাজ্জাকের কাছে হেরে যান। আগামী ২৯ ডিসেম্বর আবার নতুন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। বাঘা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস সরকারের বাড়ি পৌর এলাকার দক্ষিণ মিলিক বাঘায়। তাঁর তিনতলা বাড়ি। কীভাবে খাবার সংগ্রহ করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় নিজস্ব মোটর লাগিয়েছেন। এর মাধ্যমে সুপেয় পানি ওঠান। অন্যদিকে পৌরসভার চকছাতারি মহল্লার ভ্যানচালক মো. মোজাম্মেল হক একটি টিনের ছাপরাঘরে বাস করেন। তিনি বলেন, এলাকার নলকূপ থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সংগ্রহ করেন। ফলে সরবরাহের পানি এলে তাঁদের সুবিধা হতো। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এই পৌর এলাকায় প্রথম পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। সেই সময়ে ৭২ লাখ টাকা খরচ করে মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানো হয়। কিন্তু নগরবাসী এর কোনো সুবিধা পাননি। ২০১৭ সালে আবার আবদুর রাজ্জাক মেয়র নির্বাচিত হলে নতুন প্রকল্পের শুরু হয়। এ প্রকল্পের অধীন প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন একটি ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলছে। আরও ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুনভাবে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পৌর এলাকায় ৩২ কিলোমিটার পাইপ বসানো হবে। তার মধ্যে ১০০ মিটার পাইপ প্রস্তুত করা হয়েছে। বাঘা পৌর ভবনের পাশে একটি, উত্তর মিলিক বাঘায় একটি ও নারায়ণপুর বাজারে একটি পানি উৎপাদন নলকূপ বসানো হয়েছে। সব মিলে এ প্রকল্পে প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। মুর্শিদপুর মহল্লার এক বাসিন্দা বলেন, পানি সরবরাহের প্রকল্প করতে করতেই ২৩ বছর পার হয়ে গেল। পৌরবাসী একফোঁটা পানিও পায়নি। নির্বাচনের পর আবার কী হবে, কে জানে। মেয়র আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে ৭২ লাখ টাকা খরচ করে মাটি খুঁড়ে পাইপ বসান। তার পরের মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আক্কাছ আলী। নালা নির্মাণের জন্য ওই সময় পাইপগুলো কেটে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে আক্কাছ আলী বলেন, আবদুর রাজ্জাক কোথায় পাইপ বসিয়েছিলেন, তাঁর তা জানা নেই। নালা নির্মাণের সময় কোনো পাইপ নষ্ট করা হয়নি। তাঁর কাজ তিনি করেছেন।
২৩ বছর আগে রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা গঠিত হয়। এত দিন পরও এই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ৭২ লাখ টাকার পাইপলাইন মাটির নিচে রেখে নতুন করে আবার প্রায় ২৫ কোটি টাকা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বাঘা পৌরবাসীর আক্ষেপ, শুধু প্রকল্পের পর প্রকল্পই হাতে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা পানি পাচ্ছেন না।
তিন বছর আগের নাশকতার মামলায় আদালতে হাজিরা দিলেন মির্জা ফখরুল
তিন বছর আগের নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) আদালতে হাজির হন মির্জা ফখরুল। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন তাঁর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। সকাল আটটার পর মির্জা ফখরুল আদালত চত্বরে আসেন। পরে তিনি আদালতে হাজির হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে হাজিরা দিয়ে চলে যান তিনি। আইনজীবীরা জানান, নাশকতার অভিযোগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। এই দুই মামলার আসামি মির্জা ফখরুল। মামলা দুটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দলটির অনেক নেতার বিরুদ্ধে থাকা মামলায় শুনানির দিন ধার্য আজ। তাঁরা এসব মামলায় আজ আদালতে হাজিরা দেন। আজ সকাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অভিযানে ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
তিন বছর আগের নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।
বীজের সংকট, দামও বেশি
আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে ঠাকুরগাঁও দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা। কিন্তু এ জেলারই চাষিরা চাহিদামতো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গমবীজ পাচ্ছেন না। আর পেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এবার প্রতি কেজি গমবীজের মূল্য ৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। কিন্তু চাষিদের সে বীজ কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের জাতীয় তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হয়। সেই অনুযায়ী ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম আবাদের জন্য ৫ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন গমবীজ প্রয়োজন। বিএডিসি ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালকের (বীজ) কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় বিএডিসির ১৬১জন বীজ পরিবেশক রয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির জন্য তাঁদের ৫৫৭ মেট্রিক টন গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএডিসির বুথ থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছে বিক্রির জন্য ৪০ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থাৎ চাহিদার মাত্র ১১ ভাগ বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বিএডিসি থেকে। গতকাল বুধবার সকালে শহরের গোবিন্দনগর এলাকার বিএডিসির পরিবেশক তরিকুল ইসলামের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি দোকানি থেকে বিএডিসির গমবীজ কিনছেন। ২০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা প্রত্যয়িত বীজের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি বীজের দাম দাঁড়ায় ৭০ টাকা। যদিও বস্তার গায়ে প্রতি কেজি গমবীজের দাম ৫৮ টাকা লেখা রয়েছে। সে সময় ক্রেতা হাসান আলী বলেন, বীজগুলো সদর উপজেলার ফাঁড়াবাড়ি বাজারের এক দোকানের জন্য কেনা হচ্ছে। তরিকুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে ফাঁড়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে একটি সার, বীজ ও কীটনাশকের দোকানে সেই বীজের বস্তার স্তূপ দেখা যায়। গমবীজের দাম কত জানতে চাইলে দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. আল আমীন বলেন, দেড় হাজার টাকা প্রতি বস্তা। পরে দোকানের মালিক খাইরুল ইসলাম বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। শহরের মন্দির পাড়ায় কৃষি বাণিজ্যালয়ে বিএডিসির গমবীজ কিনতে এসেছেন হরিহরপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেন। বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে তিনি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে তিন বস্তা গমবীজ কিনলেন। তিনি বলেন, ১ বস্তা গমবীজের দাম ১ হাজার ১৬০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে কিনতে হলো ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কৃষকদের দুর্ভাগ্য তাঁরা ফসলের ন্যায্য দাম পান না। আবার বীজ কিনতে গেলে সস্তায় পান না। চাষিদের অভিযোগ, বিএডিসির পরিবেশকেরা বরাদ্দের গমবীজ  তুলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁরা এখন চাষিদের জিম্মি করে বেশি দাম আদায় করছেন। সদর উপজেলার ফাঁড়াবাড়ি এলাকার গমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি পাটিয়াডাঙ্গী এলাকার একজন খুচরা বীজ বিক্রেতার কাছ থেকে বিএডিসির ২০ কেজি ওজনের গমবীজ কিনেছেন। বস্তার গায়ে ৫৮ টাকা কেজি লেখা থাকলেও দোকানি তাঁর কাছ থেকে প্রতি কেজি ৭৫ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো রসিদও দেননি। শহরের গোবিন্দনগরের তামিম এন্টারপ্রাইজে গিয়ে বিএডিসির গমবীজের দাম জানতে চাইলে দোকানের ব্যবস্থাপক আমির হোসেন বলেন, এলাকায় যে পরিমাণ বিএডিসির গমবীজের চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় বরাদ্দ নেই। তাঁদের বিভিন্ন এলাকা থেকে গমবীজ সংগ্রহ করতে হয়। ফলে দামটা একটু বেশি নিতে হয়। বিএডিসি বীজ পরিবেশক মো. ফরিদউদ্দিন জানান, তিনি এবার তিন টন গমবীজ বরাদ্দ পেয়েছেন। দুদিনেই তা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন অনেক চাষি বীজের খোঁজ করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বিএডিসির বীজ না পেয়ে বেশি দামে অন্য কোম্পানির বীজ কিনে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএডিসির উপপরিচালক (বীজ বাজারজাতকরণ) আবদুর রশিদ  বলেন, কোন জেলায় কত বীজ উৎপাদন করা হবে ও বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা সিড প্রমোশন কমিটি নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই। তবে জেলায় আরও গমবীজ বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জেনেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল আজিজ বলেন, এবার চাষিরা হঠাৎ করে গম চাষে ঝুঁকেছেন। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার গম বীজের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এবার কৃষি বিভাগ চাষিদের গমবীজ প্রণোদনা দিয়েছে। তাতে বীজের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর কৃষক পর্যায়েও কিছু বীজ মজুত আছে।
আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে ঠাকুরগাঁও দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা। কিন্তু এ জেলারই চাষিরা চাহিদামতো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গমবীজ পাচ্ছেন না। আর পেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এবার প্রতি কেজি গমবীজের মূল্য ৫৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। কিন্তু চাষিদের সে বীজ কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।
মদদদাতারা এখনো চিহ্নিতই হয়নি
আজ ৮ ডিসেম্বর। নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। ১৭ বছর আগে এই দিনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেত্রকোনা কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এতে আটজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৩ মিনিট স্তব্ধ থাকবে নেত্রকোনা শহর। সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত ৩ মিনিট শহরের রাস্তায় কোনো যানবাহন চলবে না, কোনো পথচারীও হাঁটবেন না। ১০টা ৪০ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নিজেদের কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসবেন। সড়কের যানবাহনগুলো চলাচল থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। দোকানিরাও এ সময় নেমে আসবেন রাস্তায়। ১৭ বছর আগে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে তাঁরা শ্রদ্ধা জানাবেন। নেত্রকোনা উদীচী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের এই দিনের সকালে শহরের অজহর রোড এলাকায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে চলছিল ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে উদীচীর মহড়ার প্রস্তুতি। এ সময় শিল্পীরা জানতে পারেন উদীচী ও সংলগ্ন শতদল নামের অপর একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভবনের পাশে একটি স্কচটেপ জড়ানো কৌটা ও হাতের লেখা চিঠি রয়েছে। খবর পেয়ে প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার সময় এটি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় কেউ হতাহত হয়নি। এ অবস্থায় সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিল্পীসহ স্থানীয় উৎসুক জনতার মধ্যে জটলা বাঁধে। এ সময় আত্মঘাতী এক বোমা হামলাকারী সাইকেলে করে এসে আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রাণ হারান জেলা উদীচীর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল, মোটরসাইকেল মেকানিক যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া, ভিক্ষুক জয়নাল ও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল বাকি মো. কাফি। আহত হন অর্ধশতাধিক। হামলায় নিহত যাদব দাসকে বানানো হয় ‘হিন্দু জঙ্গি’। এমনকি জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘটনাস্থলে এসে যাদবের গোপন অঙ্গ দেখিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘এটি একটি নিউ ডাইমেনশন, এটি হিন্দু জঙ্গি। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।’ বাবরের এ কথায় পরিস্থিতি অন্য রূপ ধারণ করে। চলে যাদবের পরিবারসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর নানা হয়রানি। তারপর গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা প্রমাণ করেন যাদব জঙ্গি নন। একপর্যায়ে বাবর তাঁর ভুল স্বীকার করেন। ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে আসামি জেএমবির কমান্ডার সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সোহেল এবং শুরা সদস্য আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে আসাদ ওরফে পনিরের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সালাউদ্দিন ও ইউনুছ আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২। একই বছরের ২৩ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ একই রায় দেন। মামলার অপর আসামি সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানা ওরফে রোকেয়াকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনিরের ২০২১ সালের ১৫ জুলাই রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীনকে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নেত্রকোনা উদীচীর সহসভাপতি তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করতে হলে আরও শিকড়ে যেতে হবে। স্থানীয় ব্যক্তিদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব হবে না।’ দিবস পালন কমিটির সদস্যসচিব মারুফ হাসান খান জানান, সকাল সোয়া নয়টায় কালো পতাকা উত্তলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, সাড়ে নয়টায় উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ৩ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা, ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী মিছিল, দুপুর ১২টায় শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধা ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিকেল সাড়ে ৫টায় সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আজ ৮ ডিসেম্বর। নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। ১৭ বছর আগে এই দিনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেত্রকোনা কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এতে আটজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৩ মিনিট স্তব্ধ থাকবে নেত্রকোনা শহর।
অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাফল্য
অনুশীলন করার মতো নেই মাঠ, নেই কোনো প্রশিক্ষক। চোট পেলে উন্নত চিকিৎসার সামর্থ্য নেই, পায় না পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও ফুটবল খেলায় তেমন আগ্রহী নন। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট বরিশাল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের অদম্য মেয়েরা এখন জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাউফল উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নে মাধবপুর গ্রাম। খুদে ফুটবলাররা গ্রামের বিদ্যালয়টির পরিচিতি এনে দিয়েছে। গত রোববার বিকেলে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েরা ফুটবল নিয়ে ছোটাছুটি করছে। স্থানীয় লোকজন এই ছোট ছোট মেয়েদের খেলা দেখছেন। কমল সজ্জাল নামে স্থানীয় এক ফুটবলার মেয়েদের নিয়ে মাঠে খেলাধুলার কলাকৌশল বোঝাচ্ছেন। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাপরিয়া আক্তার ফুটবল নিয়ে দৌড় যেতে গিয়ে মাঠে পড়ে যায়। তাপরিয়া বলে, তাদের স্কুলের সামনে এই একটি মাঠ, তাও আবার উঁচু-নিচু, কোথাও গর্ত, দৌড়াতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। এই মাঠে খুব কষ্টকর। তৃতীয় শ্রেণির কমলিকা বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের অধিনায়ক। জেলা পর্যায়ে কমলিকা সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিল। চটপটে কমলিকা হাসিমুখে বলে, ‘ফুটবল খেলতে খুব ভালো লাগে। উপজেলা, জেলা ও বরিশাল বিভাগে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সামনে ঢাকায় খেলতে যাব। কিন্তু ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারছি না। প্রশিক্ষণ দেওয়ার কেউ নেই।’ এই গ্রামে অনেকটা নীরবে নিভৃতেই ফুটবলার গড়ার কাজটি করে যাচ্ছেন স্থানীয় ফুটবলার কমল সজ্জাল। তিনি পটুয়াখালী শহরে ফুটবল খেলেন। তাঁর বাড়ি মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কমল সজ্জালকে মেয়েদের ফুটবলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন। এক বছর ধরে তিনি বিদ্যালয়ের ১৮টি মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কমল সজ্জাল বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ খুবই খারাপ। এখানে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় না। এই মেয়েদের ফুটবল খেলায় ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে কেউ কেউ একদিন জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবে। এদিকে মেয়েরা যখন মাঠে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত, তখন মাঠের এক পাশে বিদ্যালয়ের বারান্দায় পায়ে প্লাস্টার নিয়ে বসে খেলা দেখছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী লিমা আক্তার। লিমা এই দলের মধ্য মাঠের খেলোয়াড়। সে বিভাগীয় টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছে। কয়েক দিন আগে মাঠে অনুশীলনের সময় গর্তে পড়ে তার ডান পায়ের গোড়ালি মচকে গেছে এবং হাড়ে ফাটল ধরেছে। লিমার মা রুমা বেগম বলেন, তাঁদের তিন মেয়েই ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। বড় মেয়ে খাদিজা জেলায় অনূর্ধ্ব ১৪ দলে জায়গা পেয়েছে। ছোট মেয়ে সুমাইয়াও (৫) ফুটবল নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেছে। আক্ষেপ করে রুমা বেগম বলেন, সবাই ঢাকা খেলতে যাবে। কিন্তু লিমা পা মচকে এখন মাঠের বাইরে। সে সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে। মেয়েদের ভালো খাবারই দিতে পারেন না। উন্নত চিকিৎসা হবে কীভাবে? বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, এখানে যে মেয়েরা ফুটবল খেলে, তাদের অধিকাংশের পরিবারই দরিদ্র। অনুশীলনে খেলোয়াড়দের যে রকম পরিশ্রম করতে হয়, সেভাবে খেতে দিতে পারে না তারা। অভিভাবকেরাও ফুটবল খেলায় তেমন আগ্রহ দেখান না। সরকারিভাবে ও বিত্তবানদের সহায়তা পেলে বিদ্যালয়ের মেয়েদের জাতীয় পর্যায়েও ভালো করতে পারবে। অদম্য এই মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেখতে গিয়েছিলেন ফুটবল প্রশিক্ষক বাদল হালদার। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই সদস্য বলেন, এই মেয়েরা জেলার সুনাম এনে দিয়েছে। অনেক সংকটের ভেতরও জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখছে। এদের জেলা শহরে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে আরও ভালো করবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল রানী পাল বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিভাগীয় পর্যায়ে মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। তাই দিয়ে কোনোরকমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
অনুশীলন করার মতো নেই মাঠ, নেই কোনো প্রশিক্ষক। চোট পেলে উন্নত চিকিৎসার সামর্থ্য নেই, পায় না পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও ফুটবল খেলায় তেমন আগ্রহী নন।
গ্রামবাসীর আশ্রয়ে দিঘিতে পরিযায়ী পাখির কলরব
হঠাৎ করে কারও চোখ পড়লে মনে হবে, দিঘিজুড়ে ভেসে আছে পোষা হাঁসের দল। খয়েরি হাঁসের ঝাঁক দিঘির পানিতে সাঁতার কাটছে। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। পালক নেড়ে ঝরাছে পানি। কচুরিপানার মধ্যে এদিক-ওদিক লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করছে। কিন্তু এরা পোষা নয়, এরা পরিযায়ী পাখির দল। পুরো শীতকাল এখানেই তাদের বসবাস। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামে শের খাঁ দিঘিজুড়ে পরিযায়ী পাখির রাজত্ব। সারাক্ষণ পাখির কিচিরমিচির ও কলরবে মুখর আশপাশ এলাকা। গ্রামের মানুষ পরম মমতা, ভালোবাসায় এসব পাখি আগলে রাখছেন। গ্রামবাসীর নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে আনন্দে দিন কাটছে পরিযায়ী পাখিগুলোর। টেংরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. টিপু খান বলেন, এখানে পাখিরা নিরাপদে আছে। রাস্তার পাশে হলেও কেউ ডিস্টার্ব করে না। যারা শিকারে উৎসাহী, তাদের নিষেধ করা আছে। মঙ্গলবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে। শের খাঁ দিঘির কাছে যেতেই শোনা গেল পাখিদের ডাক। অনেক হাঁস দিঘির জলে সাঁতার কাটছে। ভেসে আছে। কিছু হাঁস দিঘিতে ভেসে থাকা কচুরিপানার ফাঁকে ফাঁকে আছে বসে। শান্ত ও নিশ্চুপ বসে থাকার প্রাণী এরা নয়। এরা পরিযায়ী পাখি। একটু পরপরই কারণে-অকারণে দীঘির নানা দিকে উড়ছে, ঘুরছে। কখনো একটি-দুটি পাখি উড়ছে, আবার কখনো উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। দিঘির ওপর মালার মতো চক্কর দিয়ে আবার দিঘির জলে নেমে আসে পাখির দল। সারাক্ষণ যেন খুনসুটিতে মেতে থাকে পাখিরা। দিঘির পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে গেছে টেংরা-তারাপাশা গ্রামীণ পাকা সড়ক। দিঘির চারপাশেই গ্রামের বাড়িঘর। এখানে অনেক বছর ধরেই গ্রামবাসী ও পরিযায়ী পাখির সহাবস্থান তৈরি হয়েছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। দিঘির পাড়েই বাড়ি সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া নাজমুস ছাকিবদের। মঙ্গলবার বিকেলে ছাকিব প্রথম আলোকে বলে, ‘ছোটবেলা থেকে আমি এই পাখিদের দেখছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডাকাডাকি করে, ওড়াউড়ি করে। কেউ এখানে পাখি মারে না। এখানে পাখি মারা নিষেধ।’ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামভদ্রপুর গ্রামের শের খাঁ দিঘিটি বেশ পুরোনো। ৮ থেকে ১০ বছর আগের কথা। হঠাৎ করেই দিঘিতে অল্প কিছু পরিযায়ী পাখি আসে। সংখ্যায় ৮-১০টি হবে। প্রথম প্রথম কেউ খেয়াল করেননি। পাখিরা এসেছে, শীতকাল কাটিয়ে আবার চলেও গেছে। এভাবে দু-তিন বছর গেছে। বছর সাতেক আগে পাখির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসে দিঘিতে। এরপর থেকে প্রতিবছরই পাখির সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিবছরই একটু একটু করে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। শুরুর দিকে পাখিদের বিদায় করার ভাবনা ছিল দিঘির মালিকদের। দু-একজন পাখি শিকারের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে মত বদলান সবাই। পাখিদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন গ্রামের মানুষও। গ্রামের কেউ যেমন পাখি শিকার করেন না, তেমনি অন্যদেরও মারতে দেন না। সবাই মিলে পাখিদের পাহারা দেন। কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি করতে না পারে, এ জন্য সবাই সতর্ক। এখানে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাখিরা থাকে। দিঘির কচুরিপানায় তারা বাসা বুনে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। তারপর একসময় উড়ে যায়। এখানে দু-তিন জাতের হাঁস আসে। আছে পানকৌড়িও। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওখানে (রামভদ্রপুরে) আমরা পাখি সম্পর্কে আরও সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেব। গ্রামের মানুষকে নিয়ে বৈঠক করব। প্রচারপত্র বিতরণ করব। অনেকে তো জানে না পাখি শিকার নিষিদ্ধ। এতে জেল-জরিমানা হতে পারে।’ দিঘিটির অংশীদারদের একজন অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাদিক আহমদ। মঙ্গলবার প্রথম আলো তিনি বলেন, সাত বছর থেকে পাখির উপস্থিতি বেড়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন পুকুরে মাছ খেয়ে ফেলবে। পরে দেখলেন মাছ খায় না। এরপর প্রতিবছর পাখিও বাড়তে থাকে। পাখি চলে যেতে পারে, এ জন্য কচুরিপানা পরিষ্কার করতে চাইলে গ্রামের মানুষই বাধা দেন। সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে অনেক মানুষ গাড়ি থামিয়ে পাখি দেখেন। ছবি তোলেন। রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে যতটুকু প্রশাসনিক তদারকি দরকার, তাঁরা সেই তদারকি করবেন।
হঠাৎ করে কারও চোখ পড়লে মনে হবে, দিঘিজুড়ে ভেসে আছে পোষা হাঁসের দল। খয়েরি হাঁসের ঝাঁক দিঘির পানিতে সাঁতার কাটছে। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। পালক নেড়ে ঝরাছে পানি। কচুরিপানার মধ্যে এদিক-ওদিক লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করছে। কিন্তু এরা পোষা নয়, এরা পরিযায়ী পাখির দল। পুরো শীতকাল এখানেই তাদের বসবাস।
‘পরিবার ছেড়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি’
‘মামলার পর থেকে বাড়িতে থাকতে পারি না। সন্তানের মুখ দেখতে পাই না। পরিবার ছেড়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’ বলছিলেন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আমসরা ইসলামিয়া দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক ও তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার। তাড়াশে গত ২৯ নভেম্বর রাত ৯টায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপির ১৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন। সেই মামলায় শাহ রেজা সেতারসহ ১৪ আসামি গতকাল বুধবার আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে এসেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বেলা দুইটার দিকে শাহ রেজা সেতার প্রথম আলোকে বলেন, হামলা বা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পুরো বিষয়টি সাজানো। যে সময়ে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন। মামলার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ঘুরে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মীকে পাওয়া যায় যাঁরা আগাম জামিন নিতে এসেছিলেন। এর মধ্যে ছয়টি উপজেলার অন্তত ২৫ নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের নামে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার ধরন মোটামুটি একই—ককটেল বিস্ফোরণ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগ। মামলাগুলোর বাদী পুলিশ অথবা আওয়ামী লীগের নেতারা। এজাহারে অনেকের নাম দেওয়া হয়েছে। আবার অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে যাঁকে ইচ্ছা হয়রানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আইনজীবী ও দলটির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ২৫টির মতো মামলায় আগাম জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। সেগুলোতে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়েছে। আদালত জামিন আবেদনের আদেশের জন্য আগামী রোববার ধার্য করেছেন। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান। বিএনপি দাবি করছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে তাঁদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিচ্ছেন। বিশেষ অভিযানের নামে পুলিশ ঢাকায় গণসমাবেশের আগে তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন। অবশ্য পুলিশ বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করছে। পুলিশের দাবি, বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে ঢাকায় পুলিশ হেফাজত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া, মহান বিজয় দিবস, খ্রিষ্টানদের বড়দিন ও খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদ্‌যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে। এই অভিযান চলবে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পুলিশের দাবি, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁরা নাশকতা, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাড়াশের মামলার বাদী মোজাম্মেল হোসেনও দাবি করেছেন, ঘটনা ঘটেছে বলেই তিনি মামলা করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১০ থেকে ১২ যুবককে দাঁড়িয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই বিএনপি ও যুবদলের নেতা। বাড়ি নরসিংদীর মাধবদী থানার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নে। তাঁরা হাইকোর্টে এসেছেন ১ ডিসেম্বর ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় আগাম জামিনের আশায়। জটলার মধ্যে ছিলেন নরসিংদী জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিয়েছে পুলিশ। মামলার কারণে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গতকাল দুপুরে আগাম জামিন নিতে আসা নেতা-কর্মীদের খোঁজ নিতে আসেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির। তিনি প্রথমআলোকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়ার কারণে তাঁরা এলাকাছাড়া হয়েছেন।
‘মামলার পর থেকে বাড়িতে থাকতে পারি না। সন্তানের মুখ দেখতে পাই না। পরিবার ছেড়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’ বলছিলেন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আমসরা ইসলামিয়া দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক ও তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার।
‘আমার বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিন ভাই’
সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিট। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয় থেকে দলটির নেতা–কর্মীদের আটক করে প্রিজনভ্যানে তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা। কয়েকজন নারীকেও তোলা হচ্ছিল প্রিজনভ্যানে। তাঁদের মধ্যে এক নারীর সঙ্গে ছিল একটি শিশু। এ সময় ওই নারী শিশুটিকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দেন। চিৎকার করে বলেন, ‘আমার বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিন ভাই। কাল ছেলেটার পরীক্ষা। সে মনিপুর স্কুলে পড়ে। তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।’ পরে প্রিজনভ্যানটি নয়াপল্টন থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছেন। পরে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। সেখান থেকে দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলে পুলিশের আটক অভিযান। পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে তল্লাশি চালায়, যা শেষ হয় রাত নয়টায়। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নয়াপল্টনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এই অভিযানে ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বুধবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা, গুলি ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁর বাসা ঢাকার মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধ এলাকায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষের সময় নয়াপল্টনে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বিএনপির আহত নেতা-কর্মীদের উদ্ধারে কাজ করেছেন। নিহত মকবুল আহমেদকে তিনি হাসপাতালে নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলো বলেন, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মকবুল আহমেদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল পৌনে চারটায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মকবুলের শরীরে ছররা গুলির আঘাতের অনেকগুলো চিহ্ন রয়েছে। সংঘর্ষে কতজন আহত হয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মকবুলসহ ২৬ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশ ও দুই বিএনপির নেতাকে ভর্তি করা হয়। বাকিরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবার শরীরে কমবেশি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও অনেককে নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া একজন সাংবাদিকও আহত হন বলে জানা গেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিট। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয় থেকে দলটির নেতা–কর্মীদের আটক করে প্রিজনভ্যানে তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা। কয়েকজন নারীকেও তোলা হচ্ছিল প্রিজনভ্যানে। তাঁদের মধ্যে এক নারীর সঙ্গে ছিল একটি শিশু।
তিন মাসে নয়াপল্টনে ১১ সমাবেশ বিএনপির, এখন কেন পারবে না
বিএনপিকে কিছুতেই রাজধানীর নয়াপল্টনে গণসমাবেশ (১০ ডিসেম্বর) করতে না দেওয়ার কথা সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে এখন যেভাবে বলা হচ্ছে, সে রকম পরিস্থিতি গত নভেম্বর মাসেও ছিল না। এমনকি গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই তিন মাসে নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে হাজারো নেতা–কর্মীর উপস্থিতিতে বিএনপি বড়–ছোট মিলিয়ে সমাবেশ করেছে ১১টি। কোনোটির আয়োজক ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। আবার কোনোটি করেছে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল বা কৃষক দলের ব্যানারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দুটি (১৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর), অক্টোবর মাসে দুটি (২০ ও ২৭ অক্টোবর) এবং গত নভেম্বর মাসে শুধু নয়াপল্টনে মোট সাতটি সমাবেশ (২, ৭, ৮, ১০, ১৭, ১৮ ও ৩০ নভেম্বর) করেছে বিএনপি। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি নয়াপল্টনে যে সমাবেশ করেছে, নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি বিবেচনায় নিলে তা ছিল ‘বেশ’ বড়। নেতা–কর্মী–সমর্থকদের ভিড় নয়াপল্টন ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। স্বাভাবিক কারণেই সেদিন নয়াপল্টন এলাকায় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ হয়েছে। রাজধানীর অন্য এলাকার মানুষকেও যানজটের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। ফলে নয়াপল্টনের ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের পেছেনে জনদুর্ভোগের বিষয়টিই একমাত্র কারণ হলে পুলিশ কেন তখন নীরব ছিল, সে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে নয়াপল্টনে যেসব সমাবেশ করেছে বিএনপি, এর কোনো কোনোটিতে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর সমাগম ঘটেছিল। আর গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নয়াপল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত বর্ণিল ও বিশাল শোভাযাত্রা করেছিল দলটি। হাজারো নেতা–কর্মীর দীর্ঘ শোভাযাত্রার কারণে সেদিনও রাজধানীতে তীব্র যানজট ছিল। এসব সমাবেশ–শোভাযাত্রা সরকার বা পুলিশের অগোচরে হয়েছে এমনটি নয়। তবে সরকার তখন নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি। অনুমতি দেওয়া নিয়েও পুলিশের শর্তের এতটা কড়াকড়ি ছিল না। এমনকি নয়াপল্টন ছেড়ে অন্য কোথাও সমাবেশ করার পরামর্শও দেয়নি। গত তিন মাসে নয়াপল্টনের প্রতিটি সমাবেশে থেকেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এসব সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সরাসরি সরকারকে দায়ী করেছেন বিএনপির নেতারা এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, টাকা পাচারের জন্য সরকার–ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা, দেশে ভয়ের রাজত্ব তৈরি করা, ভয় দেখিয়ে ও জোর করে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে—এসব অভিযোগ করেছেন। একই সঙ্গে নয়াপল্টনের সমাবেশগুলো থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছেন বিএনপির নেতারা। নয়াপল্টনের বিভিন্ন সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতাদের কঠোর বক্তব্য তখন সরকার ‘হজম’ করতে পারলে এখন আপত্তি উঠছে কেন? ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারলে আগের কথাগুলোই হয়তো আরও জোরের সঙ্গে বলবে। কেউ পরিবহন ধর্মঘট না ডাকলে বিএনপির ঢাকার সমাবেশ অন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর চেয়ে হয়তো ‘একটু বড়’ হবে। তবে এবার নয়াপল্টনে বিএনপিকে কিছুতেই যে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না, এর খানিকটা নমুনা দেখা গেছে গতকাল (৭ ডিসেম্বর)। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একজন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পাশাপাশি আটক করা হয় দলটির ৩০০ নেতা–কর্মীকে। গত জুলাই মাস থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ধারাবাহিক আন্দোলন করে এলেও দলটির কিছু করার ‘সামর্থ্য’ নেই—এমন বক্তব্য সকাল–বিকেল অনবরত দিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতারাও। সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, বিএনপিকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগ লাগবে না, যুবলীগই যথেষ্ট। পরিস্থিতি এমনই হলে, নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিলে সমস্যাটি আসলে কোথায়, সেটি স্পষ্ট করে কেউ বলছেন না। যানজট, জনদুর্ভোগের যে কথা এখন বলা হচ্ছে, সেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশ করলেও হবে, সেখানে না (অন্য জায়গায়) করলেও হবে। গত ১১ নভেম্বর যুবলীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সমাবেশ করেছে, তাতে সকাল থেকেই রাজধানীর একাংশ কার্যত অচল ছিল। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও (শুক্রবার ছিল) যানজটের দুর্ভোগ সইতে হয়েছিল। রাজধানীর বাইরে থেকে শত শত বাসে হাজারো নেতা–কর্মীরা ঢাকায় এসেছিলেন। লাখো মানুষের সমাগমের কথা তখন বলা হয়েছিল, ফলে অসহনীয় যানজট ছিল। আর ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের কারণে দিনের কিছু সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। যানজটের শহরে কিছু সময় কোনো সড়ক বন্ধ রাখা হলে এর প্রভাব কী হতে পারে, সেটি কারও অজানা নয়। আর সড়কে সমাবেশ করতে না দেওয়ার যে যুক্তি এখন দেওয়া হচ্ছে, সেটি সবার জন্য সমভাবে প্রয়োগ কেন হয় না, সে প্রশ্নও আছে। গত নভেম্বরে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় প্রগতি সরণিতে এবং উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে দুটি বড় সমাবেশ করেছিল আওয়ামী লীগ। গত ৫ ও ২০ নভেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কে ওই দুই সমাবেশের কারণে ব্যাপক জনদুর্ভোগ হলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তখন নীরব ছিল। এমনকি ওই দুটি সমাবেশ রাস্তার পরিবর্তে খোলা মাঠে করা বা সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো শর্ত দেওয়ার কথাও শোনা যায়নি। ফলে জনদুর্ভোগ হবে—এই বিবেচনার চেয়েও এখানে (নয়াপল্টনে) ‘ক্ষমতা দেখানোর’ বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, এমন আলোচনা রাজনীতিতে রয়েছে। গত তিন মাসে যখন বিএনপি নয়াপল্টনে একের পর এক সমাবেশ করছে, তখন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না। আন্দোলনের কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে মামলা না দিতে এবং গ্রেপ্তার না করারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এমনকি গত জুলাই মাসে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমনও বলা হয়েছিল, বিএনপি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিও দেয়, তাতেও বাধা দেওয়া হবে না। আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে দলটির নেতারা যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যান, তাহলে তাঁদের ডেকে নিয়ে চা খাওয়ানোর ইচ্ছাও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের সমাবেশ নিয়ে ‘নাশকতা’ হতে পারে—আকারে–ইঙ্গিতে এমন কথা এখন সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আবার এমনও বলা হচ্ছে, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে ১০ লাখ লোক জড়ো করে বিএনপির নেতা–কর্মীরা সেখানে বসে পড়বেন। যদিও বিএনপি বলে আসছে, অন্য বিভাগীয় সমাবেশের মতোই ঢাকায় সমাবেশ করতে চেয়েছে দলটি। এরপরও সরকারের কাছে যদি ‘নাশকতার’ কোনো তথ্য থাকে, সেটি জনস্বার্থে দ্রুত প্রকাশ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু কোন দল কোথায়, কখন সমাবেশ করবে এবং কত লোক নিয়ে করতে পারবে—সেটিও সরকার ঠিক করে দিলে দেশে ‘গণতন্ত্রের’ আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। ইমাম হোসেন সাঈদ, ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং, প্রথম আলো
বিএনপিকে কিছুতেই রাজধানীর নয়াপল্টনে গণসমাবেশ (১০ ডিসেম্বর) করতে না দেওয়ার কথা সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে এখন যেভাবে বলা হচ্ছে, সে রকম পরিস্থিতি গত নভেম্বর মাসেও ছিল না। এমনকি গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই তিন মাসে নয়াপল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে হাজারো নেতা–কর্মীর উপস্থিতিতে বিএনপি বড়–ছোট মিলিয়ে সমাবেশ করেছে ১১টি। কোনোটির আয়োজক ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। আবার কোনোটি করেছে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল বা কৃষক দলের ব্যানারে।
নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে পোস্টার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
‘নারীর প্রতি সহিংসতা ও তার প্রতিকার’ বিষয়ে আয়োজিত পোস্টার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সুফিয়া কামাল ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস  পালন (গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত) উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, মহিলা পরিষদ নারী আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজে নারী নির্যাতনের বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। সেগুলো পোস্টারের মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছে। নারীর প্রতি সমাজের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিযোগিতায় ফুটে উঠেছে। ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, নারী–পুরুষ দুজনেই পরিবার ও সমাজ থেকে প্রাপ্ত রীতিনীতি ও শিক্ষা থেকে নারী নির্যাতনকারী হয়ে উঠতে পারে। তাই সেদিকে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন চিত্রশিল্পী ও প্রথম আলোর প্রধান শিল্পনির্দেশক অশোক কর্মকার। তিনি বলেন, পোস্টারে নারী, শিশুসহ সমাজের নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। যাঁরা পোস্টারের মাধ্যমে এমন কাজ করতে পেরেছেন, তাঁরা নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিহত করতে ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বিশ্বে ক্রমে উদ্বেগে পরিণত হচ্ছে। নারীকে সহিংসতামুক্ত করতে প্রতিটি দেশ নানান উপায় খুঁজছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলনে তরুণদের আরও সম্পৃক্ত করতে প্রথমবারের মতো এ পোস্টার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে অনেক তরুণ সাড়া দিয়েছেন। নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমষ্টিগত ভাবনার যে প্রতিফলন ঘটেছে, তা নারী আন্দোলনের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সায়েদ কবির; দ্বিতীয় পুরস্কার জেতেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশী মিত্র এবং তৃতীয় হন সিদরাতুল আফিয়া। বিজয়ীদের এ সময় সনদ, স্মারক এবং বই প্রদান করা হয়। এতে বিশেষ পুরস্কার পান সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের উম্মে হাবিবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুরিমা নিয়োগী ও মৌমিতা দাস। অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা, পাড়া কমিটি ও পাঠচক্রের সদস্য, সংগঠনের কর্মকর্তাসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান।
‘নারীর প্রতি সহিংসতা ও তার প্রতিকার’ বিষয়ে আয়োজিত পোস্টার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সুফিয়া কামাল ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রামে ছাত্রদলের ঝটিকা মিছিল, গাড়ি ভাঙচুর-আগুন
চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন এবং দুটি প্রাইভেট কারে ইটপাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার আলমার সিনেমা হলের সামনে সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা এ ঘটনায় জড়িত। তবে ছাত্রদল অস্বীকার করছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনা এবং বিএনপি নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আলমাস সিনেমা হলের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পেছনে থাকা কয়েকজন দুটি প্রাইভেট কারে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে গাড়ি দুটির কাচ ভেঙে যায়। এ সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের বের করা ঝটিকা মিছিল থেকে দুটি প্রাইভেট কারে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। গাড়ি দুটির মালিক থানায় এসে অভিযোগ করেছেন। একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন লাগার খবর পুলিশ শুনেছে। তবে মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নয়াপল্টনে বর্বরোচিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের কিছু কর্মী মিছিল বের করে। কিন্তু কেউ কোনো গাড়িতে আগুন কিংবা ইটপাটকেল ছুড়ে মারেনি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে আমরা বিশ্বাসী।’
চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন এবং দুটি প্রাইভেট কারে ইটপাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার আলমার সিনেমা হলের সামনে সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা এ ঘটনায় জড়িত। তবে ছাত্রদল অস্বীকার করছে।
মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষার আহ্বান জাতিসংঘের
জাতিসংঘের একটি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে মতপ্রকাশ, গণমাধ্যম ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকারের কথা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উইন লুইস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে এক বিবৃতিতে উইন লুইস এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার এক ঘণ্টা পর উইন লুইস এ বিবৃতি দেন। ওই সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়ে ২৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উইন লুইস বলেন, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, রাজনৈতিক ও অন্য যেকোনো বিষয়ে মতপার্থক্য দূরে রেখে বিশ্বের সবার মানবাধিকার রক্ষায় ঐকমত্যে পৌঁছায়। উইন লুইস আরও বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছর সারা বিশ্বে অসহায় মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, তাদের সুরক্ষা ও শান্তিতে বসবাস করার অধিকারের বিষয়টি আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।’ জন্মগতভাবে সব মানুষ স্বাধীন এবং মর্যাদা ও অধিকারের ক্ষেত্রে সমান—সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের এই বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সব মানুষের সঙ্গে এ ব্যাপারে একাত্মতা প্রকাশ করছে এবং সবার সমান অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে অতীতের মতোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে।
জাতিসংঘের একটি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে মতপ্রকাশ, গণমাধ্যম ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকারের কথা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উইন লুইস।
বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশের সানজিদা
চলতি বছর বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে বিবিসি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া ইউক্রেনের নারী যেমন এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন, তেমনি স্থান পেয়েছেন ইরানের তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীও। এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের সানজিদা ইসলাম। চারটি বিভাগে এই ১০০ নারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতি ও শিক্ষা; সংস্কৃতি ও খেলাধুলা; অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা এবং স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান। সানজিদা ইসলাম স্থান পেয়েছেন অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা বিভাগে। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে এই নারীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সানজিদা ইসলাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে কাজ করেন তিনি, তাঁর সহপাঠী ও শিক্ষকেরা। সানজিদা ইসলাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পড়াশোনা করছেন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন তিনি। নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালে ২০১৪ সালে তিনি তাঁর ছয় সহপাঠীকে নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে সাড়া ফেলেছিলেন। এরপর প্রথম আলো সানজিদার ওই দলকে ‘সাত সাহসী’ উপাধি দিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিল।সানজিদাসহ এই সাত সাহসী ২০১৪ সালেই ঘাসফড়িং নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এর পর থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন তাঁরা। তবে এখন সবাই আলাদাভাবে কাজ করেন। বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় সানজিদা ইসলামের নাম আসার পর প্রথম আলোর এই প্রতিনিধি মঙ্গলবার তাঁর বাড়ি যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই এখন আলাদাভাবে কাজ করি। কিন্তু প্রত্যেকেই তাঁদের জায়গা থেকে সক্রিয়।’ এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছেন সানজিদারা। বাল্যবিবাহ ঠেকানো ছাড়া যৌতুক প্রথা বন্ধেও কাজ করেন সানজিদা। তিনি জানালেন, পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হতে চান। তাঁর মতে, এই বাল্যবিবাহ ঠেকানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকতে হলে স্বাবলম্বী হতে হবে। ২০১২ সালের ভারতের দিল্লিতে ‘নির্ভয়া’ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিবিসি এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এ বছর ছিল এ তালিকা প্রকাশের ১০ বছর পূর্তি। বিবিসির এ তালিকায় এবার স্থান পেয়েছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা, বলিউডের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ইরানের পর্বত আরোহী এলনাজ রেকাবি।
চলতি বছর বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে বিবিসি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া ইউক্রেনের নারী যেমন এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন, তেমনি স্থান পেয়েছেন ইরানের তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীও। এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের সানজিদা ইসলাম।
বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষ, আহত ২২ জন ঢামেকে চিকিৎসাধীন
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত ২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আজ বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ঠিক কতজন আহত হয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি। যদিও সংঘর্ষে একজনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি। পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বাচ্চু মিয়া বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন রবিন খান (৩০), মনির (২৬), জুনায়েদ (৩০), জুবায়ের (৩০), খোকন (৪১), জুয়েল (৩০), শামীম (৩৫), হানিফ (৩০), আরিফ (২৮), মনির (২৫), সুলতান (৩৫), সাইফুল (৩৫), মামুন (৩৬), আসাদ (২৮), বিপ্লব (২৮), মনির (২৮), আশরাফুল (২৮), মেহেদী হাসান (২৯), রাকিব (২২), জহির (৩৫), অজ্ঞাত (৩৫)। আহত ব্যক্তিদের শরীরে কমবেশি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের সময় নয়াপল্টনে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বিএনপির আহত নেতা–কর্মীদের উদ্ধারে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, পার্টি অফিসের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মকবুল আহমেদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল পৌনে চারটায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, নিহত মকবুলের শরীরে ছররা গুলির আঘাতের অনেকগুলো চিহ্ন রয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত ২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুলিশের তল্লাশি, হয়রানির অভিযোগ
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশমুখ গাজীপুরের টঙ্গী সেতুর সামনে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা ১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। এতে হয়রানির অভিযোগ করেছেন তল্লাশির শিকার যাত্রী ও পথচারীরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে টঙ্গী সেতু পার হলেই রাজধানীর আবদুল্লাপুর। গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকা প্রবেশের এটিই একমাত্র রাস্তা। এর মাঝে পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রমটি শুরু হয়েছে ঠিক টঙ্গী সেতুর মাথায়। ফলে ঢাকায় প্রবেশ করতে হলে তল্লাশিচৌকিটি উপেক্ষার সুযোগ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী সেতুর সামনে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য। কোনো যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা কোনো পথচারী বড় কোনো ব্যাগ-বস্তা নিয়ে আসতে দেখলেই তাঁদের গতিরোধ করছেন। এ সময় দেহ তল্লাশি থেকে শুরু করে তাঁদের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদে কারও কথায় কোনো প্রকার সন্দেহ হলেই তাঁদের পথ আটকে দিচ্ছেন। বেলা ১টা ১৫ মিনিট। একটি মোটরসাইকেলে রাজধানীর মিরপুরে যাচ্ছিলেন মো. পলাশ নামের একজন। সঙ্গে ছিল তাঁর কিশোর ছেলে মো. অনিক (১৫)। টঙ্গী সেতুর সামনে আসতেই যথারীতি তাঁদের গতিরোধ করে পুলিশ। প্রথমে তাঁদের দুজনেরই দেহ তল্লাশি করা হয়। পরে ব্যাগ ও মুঠোফোনে থাকা বিভিন্ন ছবি, বার্তা যাচাই করে দেখছেন। এ সময় তাঁদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে করে তাঁদের আটকে রাখা হয়। পরে প্রায় আধঘণ্টা পর অনেক কাকুতিমিনতি করে ছাড়া পান তাঁরা। জানতে চাইলে পলাশ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর বাসায় আজ সন্ধ্যায় জন্মদিনের উৎসব আছে। এ জন্য ছেলেকে নিয়ে টঙ্গীতে জন্মদিনের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বিএনপির লোক বা নাশকতা করতে পারেন, এমন সন্দেহ করে আটকে রাখে। পরে অনেক অনুরোধ করে ছাড়া পান। পলাশ বলেন, ‘আমি সাধারণ শ্রমিক। কোনো দলের রাজনীতি করি না। তারপরও পুলিশ আমাদের এভাবে হয়রানি করল।’ একইভাবে মো. ইমন নামের একজন মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন রাজধানীর ইস্কাটন রোড এলাকায়। টঙ্গী সেতুর কাছে এলে তাঁরও গতিরোধ করে পুলিশ। প্রথমে তাঁর দেহ তল্লাশি ও মুঠোফোন যাচাই করা হয়। এরই একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে ড্রোন ও ড্রোনসংশ্লিষ্ট কিছু যন্ত্রপাতি পায় পুলিশ। এ নিয়ে তাঁদের সন্দেহ হয়। বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরই একপর্যায়ে তাঁকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় টঙ্গী পূর্ব থানায়। থানায় যাওয়ার আগে কথা হলে মো. ইমন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ভিডিও তৈরির কাজ করেন। একটি ভিডিওর কাজে যাচ্ছিলেন রাজধানীর ইস্কাটন রোড এলাকায়। কিন্তু এর মাঝেই পুলিশ তাঁর পথ আটকে ধরে। তিনি বারবার বলার পরও পুলিশ কোনো কথা না শুনে তাঁকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। ইমনের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে এটা পুলিশের হয়রানি। এটা নিয়ে তিনি চরমভাবে ব্যথিত। সড়কটিতে বেলা ২টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে যানবাহন আটকে এমন অনেককেই তল্লাশি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে তল্লাশির শিকার প্রায় সবারই বক্তব্য, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। জরুরি কাজে যে যাঁর মতো ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশ তাঁদের পথ আটকে দেহ তল্লাশিসহ মুঠোফোনের ব্যক্তিগত তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ, ছবি ঘাঁটাঘাঁটি করে, তা রীতিমতো অন্যায়, বিব্রতকর। এটা চরম হয়রানির শামিল। তবে এসব হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তল্লাশির দায়িত্বে থাকা টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিলন। তিনি বলেন, ‘কেউ যেন নাশকতা তৈরি করতে না পারে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কাউকে কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি। যারা এটা বলছে, তা সঠিক নয়।’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশমুখ গাজীপুরের টঙ্গী সেতুর সামনে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা ১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। এতে হয়রানির অভিযোগ করেছেন তল্লাশির শিকার যাত্রী ও পথচারীরা।
রুহুল কবির রিজভীসহ শতাধিক আটক
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে রিজভীকে নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। রিজভী ছাড়াও বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়। আজ বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত একজন নিহত হয়েছেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। তখন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। আজ সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান শুরু হলে বেলা সাড়ে চারটার দিকে মির্জা ফখরুল সেখানে আসেন। এ সময় কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মির্জা ফখরুলকে সেখানে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। তিনি কার্যালয়ের সামনে বসে পড়েন। পুলিশের এই অভিযানের এক পর্যায়ে রুহুল কবির রিজভীকে আটক করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও শতাধিক নেতা–কর্মীকে পুলিশ আটক করে নিতে দেখা গেছে।আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সরকার চায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ হোক। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কথাবার্তা চলছিল। এরই মধ্যে আজকের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটল। আজ নেতা–কর্মীদের আটকের পর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ১০ তারিখের সমাবেশের প্রচারের কাজে থাকা দুটি ট্রাক র‌্যাকার দিয়ে টেনে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে রিজভীকে নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। রিজভী ছাড়াও বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়।
সব জায়গাকে ঢাকা বানাবেন না: নসরুল হামিদ
দেশের অনেক এলাকাতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, গ্রামগুলো নগরে পরিণত হচ্ছে, নগর মেগাসিটিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রামকে গ্রামের মতো রাখতে হবে। সব জায়গাকে ঢাকা বানানো যাবে না। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নসরুল হামিদ এসব কথা বলেন। সেমিনারটি ছিল ‘জিওইনফরমেশন ফর আরবান প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডাপ্টেশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে। এই যৌথ কারিগরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ও জার্মানির ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর জিওসায়েন্স অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস। নসরুল হামিদ বলেন, দেশে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। অনেকের ধারণা, গ্রামকে শহর বানাতে হবে। আসলে গ্রাম গ্রামই রাখতে হবে। গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছাতে হবে। সব জায়গাকে ঢাকা বানিয়ে ফেলা যাবে না। সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর এলাকায় নগরায়ণ ছড়িয়ে পড়েছে। নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে একসময় অনেক পুকুর ছিল, সেগুলো ভরাট করে প্লট করা হয়েছে। বিগত দিনগুলোতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম সুউচ্চ ভবন করার জন্য উপযোগী এলাকা নয়, কিন্তু সেখানে উঁচু ভবন করা হয়েছে। এলজিইডি লোকজনের জমি, খেতখামারের ওপর দিয়ে সড়ক করেছে। বিগত দিনগুলোতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পুরো দেশের বিশদ পরিকল্পনা থাকা দরকার। কোথায় কৃষিজমি হবে, কোথায় উন্নয়ন হবে, নদী–খালগুলো কেমন থাকবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সড়ক, অবকাঠামো করছে। তাদের নির্দিষ্ট করে দিতে হবে কোথায় নগরায়ণ করা হবে। নগরায়ণ ও বড় অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূতাত্ত্বিক জরিপকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প, বিশেষ করে বিদ্যুৎ প্রকল্পে পৌনে দুই শ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ভূমি উন্নয়নে। জিওইনফরমেশন নেওয়ার পরে বোঝা গেল, লোকেশনটা ‘ভেরি ভালনারেবল’। তাই পূর্ণধারায় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে জিওইনফরমেশন নেওয়া প্রয়োজন। সেখানে আদৌ এমন প্রকল্প নেওয়া সম্ভব কি না। বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ণকে বড় সমস্যা উল্লেখ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে নগরবাসীকে বিভিন্ন দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নগরে বসবাস করবে। ভূতাত্ত্বিক তথ্য কাজে লাগিয়ে নগরায়ণ করতে হবে। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক ও ‘জিওইনফরমেশন ফর আরবান প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডাপ্টেশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল কামাল। তাতে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ফরিদপুর ও সাতক্ষীরা শহর ও এর আশপাশ এলাকার ভূপৃষ্ঠ ও ভূনিম্নস্থ মাটির বিস্তারিত ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য জরিপ করা হয়েছে। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক, ভূপ্রকৌশল, অবকাঠামো উন্নয়ন উপযুক্ত মানচিত্রায়ণ, ত্রিমাত্রিক মডেল ও তথ্যভান্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব তথ্য স্থানীয় নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজে ব্যবহার করা যাবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ভেতরে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে। লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এই ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য এসব এলাকার পরিকল্পনা করতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সহায়তা করবে।সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোসটার প্রমুখ।
দেশের অনেক এলাকাতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, গ্রামগুলো নগরে পরিণত হচ্ছে, নগর মেগাসিটিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রামকে গ্রামের মতো রাখতে হবে। সব জায়গাকে ঢাকা বানানো যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদে পরিবর্তন
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। আজ বুধবার এ বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বিদায়ী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। আহমদ কায়কাউস বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যাচ্ছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য মুখ্য সচিবের পদমর্যাদায় তাঁকে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদেও পরিবর্তন আসছে বলে প্রশাসনে আলোচনা চলছে। এ মাসের মাঝামাঝিতে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই পদে নতুন মুখ আসতে পারে বলে প্রশাসনের সূত্রগুলো জানিয়েছে। যদিও এ বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের শীর্ষপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন মুখ্য সচিব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
একটা ভয়াবহ, উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে: মির্জা ফখরুল
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।’ আজ বুধবার বিকেল ৫টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে দলটির মহাসচিব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। এই পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কি করা সম্ভব—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই তো এগুলো হচ্ছে। তারা সমাবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে আমার কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের লোকজন ঢুকছে, বের হচ্ছে। আমরা সন্দেহ করছি, তারা ভেতরে বোমা জাতীয় কিছু রেখে এর দায় আমাদের ওপর চাপাবে।’ আজ বেলা সাড়ে ৪টার দিক থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক দফায় বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে থেকে ৫০-৬০ জনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তারা সন্ধ্যার দিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের প্রচারের জন্য থাকা দুটি ট্রাকও নিয়ে যায়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।’
নারায়ণগঞ্জে ঢাকাগামী যাত্রীরা তল্লাশি ও জেরার মুখে, গ্রেপ্তার ১৫
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা পুলিশের তল্লাশি ও জেরার মুখে পড়ছেন। আজ বুধবার দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন চেকপোস্টে ঢাকামুখী যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা করা হচ্ছে। এ দিকে গতকাল বিকেল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নবীর হোসেন (৪২), থানা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান (৩৫) ও বিএনপির কর্মী মেহেদী হাসান (২৪)। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা করতে না পারেন, এ কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সন্দেহভাজন বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন তাঁরা। এর আগে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই মৌচাক এলাকায় মশালমিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তাই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তাঁরা মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছেন। যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি ও ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে পুলিশ। ৫০ বছরের নিচে প্রায়ই সবাইকে তল্লাশি ও জেরা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন অনেককে বাস থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী এশিয়া পরিবহন বাসের সুপারভাইজার মহিউদ্দিন বলেন, পুলিশ তাঁদের গাড়ির যাত্রীদের তল্লাশি করেছে। অনেক যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তাঁরা কী উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছেন। দলবদ্ধ হয়ে কেউ বাসে যাত্রী হিসেবে উঠে ঢাকায় যাচ্ছেন কি না, তাঁদের কাছে এসব জানতে চেয়েছে পুলিশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একদল পুলিশ দূরপাল্লার বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ১০ সদস্যের একটি দল চেকপোস্টে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। শুধু দূরপাল্লার বাস নয়, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ছোট পরিবহনেও তল্লাশি করছে পুলিশ। চেকপোস্টে পুলিশের তল্লাশি নিয়মিত অভিযানের অংশ উল্লেখ করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে দুটিসহ জেলায় সাতটি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক বাসে ও যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্টে তল্লাশি চলছে। তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আবু কালাম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, জুলুমেরও শেষ আছে। এত জুলুম জনগণ মেনে নেবেন না।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে মেঘনা টোল প্লাজা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজার উপজেলার ছনপাড়া, জালাকান্দি এলাকা, রূপগঞ্জ থানার তিন শ ফুট, বালু সেতু ও তারাব বিশ্বরোড এবং ফতুল্লার সাইনবোর্ডে চেকপোস্ট রয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টে তল্লাশি ও ঢাকামুখী যাত্রীদের জেরা অব্যাহত আছে। তিশা পরিবহনের বাস থামিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. রাসেল। তিনি বলেন, ৫০ বছরের নিচে যাত্রীদের ঢাকায় যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বোমা বা নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কেউ যাতে কিছু নিয়ে ঢাকায় যেতে না পারেন, এ কারণে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অযথা কাউকে তাঁরা হয়রানি করছেন না। নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যতই সমাবেশের সময় ঘনিয়ে আসছে, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান আরও বাড়ছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া। তিনি আরও বলেন, পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্বাভাবিক কাজকর্মে যেতেও মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা পুলিশের তল্লাশি ও জেরার মুখে পড়ছেন। আজ বুধবার দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন চেকপোস্টে ঢাকামুখী যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা করা হচ্ছে।
চকরিয়ায় পুকুরে ভাসছিল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। ওই ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। তাঁর পরনে শুধু লুঙ্গি ছিল। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশের পুকুরে এক ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পুলিশ জানায়, তিন দিন আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি এলাকার এক বৃদ্ধ নিখোঁজ হয়েছেন বলে ছবিসহ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। প্রচারিত বিজ্ঞপ্তির ছবির ব্যক্তির সঙ্গে লাশের ব্যক্তির মিল রয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা ওই পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা চকরিয়া থানায় পৌঁছার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
ভোলায় আর্জেন্টিনা সমর্থক দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, তরুণ নিহত
ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের চেউয়াখালী গ্রামে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। মো. হৃদয় (২০) নামের ওই তরুণ গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। তাঁকে আজ বুধবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ভোলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত হৃদয় উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভ্যানচালক ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে। ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, হৃদয়ের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ সংঘর্ষে আহত আরও সাতজন একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা চলছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফুটবলের আর্জেন্টিনা–অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ম্যাচের আগে চেউয়াখালী গ্রামের আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা নুডলস খাওয়ার আয়োজন করেন। নুডলস খাওয়া নিয়ে আর্জেন্টিনা সমর্থক মো. আশিকের পক্ষের সঙ্গে মো. আকবরের (লাল্টু) পক্ষের কথা–কাটাকাটি হয়। এ সময় আশিক আকবরকে চড় মারেন। এ ঘটনা কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ইয়ামিন নামের একজনের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাত নয়টার দিকে ধনিয়ার চেউয়াখালী এলাকায় তাফসির মাহফিল চলাকালে আকবরের পক্ষ বহিরাগত যুবকদের নিয়ে এসে আশিকের পক্ষের ওপর হামলা করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। প্রায় এক ঘণ্টার সংঘর্ষে আশিকের পক্ষের তালহা, হৃদয়, আশিক, রুবেল এবং আকবরের পক্ষের আকবর, মহিউদ্দিন, নয়ন, শাহাবুদ্দিন ও অলি আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ জনকে রাত ১১টার দিকে ভোলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত আরেকজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হৃদয় সংঘর্ষে আহত হয়ে পুকুরের পানিতে পড়ে ছিলেন। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোররাতের দিকে তাঁকে অচেতন অবস্থায় পুকুরে পাওয়া যায়। তাঁকে আজ ভোর ৫টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদয় মারা যান। নিহত হৃদয়ের বাবা ইব্রাহীম মিয়া আহাজারি করে বলেন, ভ্যানগাড়ি চালিয়ে ছেলেকে বিএ পাস করিয়েছেন। আজ তাঁর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চান।
ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের চেউয়াখালী গ্রামে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। মো. হৃদয় (২০) নামের ওই তরুণ গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন। তাঁকে আজ বুধবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ভোলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মানিকগঞ্জে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ছেড়ে দিল পুলিশ
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতার এক মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পরে আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতাকে গতকাল সন্ধ্যায় ছেড়ে দিয়েছে। ওই আসামির নাম কামরুল হাসান (৩২)। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। তিনি পশ্চিম বাস্তা গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার নাশকতার অভিযোগ এনে সিঙ্গাইর থানায় মামলাটি করেন আকাশ আহমেদ ওরফে নয়ন নামের এক ব্যক্তি। তিনি পরিবহন শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ২০ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কামরুল হাসানকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিঙ্গাইরের গাজিন্দা এলাকায় মানিকগঞ্জ-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। তাঁরা ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার গণসমাবেশে সামনে রেখে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়ার সময় বাদী আকাশ আহমেদকে দেখার পরপরই সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান মিছিলকারীরা। পরে বাদী পুলিশকে ঘটনা জানান। পুলিশ ঘটনাস্থল আসার পরপরই মিছিলকারীরা পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর দিন আকাশ আহমেদ বাদী হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে সিঙ্গাইর থানায় ওই মামলা করেন। মামলার আসামি কামরুল হাসান আজ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম বাস্তা গ্রামে বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমানের সুপারিশে সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। কামরুল হাসান দাবি করেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাদী এ মামলায় তাঁকে আসামি করেছেন। এ ব্যাপারে মামলার বাদী আকাশ আহমেদের বক্তব্য জানার জন্য আজ দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তারের পর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান বলেন, কামরুল স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার সময় সেখানে তাঁর থাকার কথা নয়। বাদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে এ মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়ে থাকতে পারে। পরে এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এ বিষয়ে সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বাদী ভুল করে এজাহারে তাঁর (কামরুল) নাম দিতে পারেন। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন। মামলার আসামি গ্রেপ্তারের পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাশকতার এক মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পরে আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতাকে গতকাল সন্ধ্যায় ছেড়ে দিয়েছে।
ধর্ষণ-হত্যার পর শিশুটিকে কাদামাটির মধ্যে পুঁতে রাখেন আসামি: আদালতে স্বীকারোক্তি
বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাড়ির সামনে বসে খেলছিল শিশুটি। গত বুধবার দুপুরে তাকে কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ির মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করেন সুলাইমান। তখন তাঁর স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। ধর্ষণের একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে একটি লাগেজে ভরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া বাঁধে নিয়ে যান সুলাইমান। সেখানে গিয়ে লাগেজ খুলে দেখেন শিশুটি বেঁচে নেই। পরে লাশটি কাদামাটিতে পুঁতে রাখেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শোয়েব উদ্দিন খানের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি মোহাম্মদ সুলাইমান এসব কথা বলেন। মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত শনিবার পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া এলাকা থেকে সাত বছর বয়সী ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বুধবার নিখোঁজ হয় সে। তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশের তদন্তে শিশুটি অপহৃত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার দিবাগত রাতে শিশুর বাবা মহেশখালী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ মুক্তিপণের জন্য করা মুঠোফোন কলের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার বিকেলে সুলাইমান ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা না থাকায় তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুলাইমান টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল গ্রামের সৈয়দ করিমের ছেলে। ওসি প্রণব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুলাইমানকে গতকাল বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। সুলাইমানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে প্রণব চৌধুরী বলেন, ধর্ষণের সময় শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে অজ্ঞান অবস্থায় শিশুটিকে লাগেজভর্তি করে বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে লাগেজ খুলে দেখেন শিশুটি মারা গেছে। পরে লাশটি কাদামাটিতে পুঁতে রাখেন সুলাইমান। এরপর ওই দিন রাতে মুঠোফোনে সুলাইমান শিশুটির বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ঘটনার পর কৌশলে শিশুটির চাচার ভাড়া করা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সুলাইমান। ওসি আরও বলেন, যেহেতু শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাই শিশুটির বাবার করা অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু হয়েছে। এ ছাড়া চার বছর আগে টেকনাফে আসমা বেগম নামের এক কিশোরীকে হত্যা করেছিলেন সুলাইমান। ওই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পলাতক ছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মহেশখালীর মাতারবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান মাহমুদ বলেন, জবানবন্দি শেষে সুলাইমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাড়ির সামনে বসে খেলছিল শিশুটি। গত বুধবার দুপুরে তাকে কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ির মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করেন সুলাইমান। তখন তাঁর স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। ধর্ষণের একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে একটি লাগেজে ভরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া বাঁধে নিয়ে যান সুলাইমান। সেখানে গিয়ে লাগেজ খুলে দেখেন শিশুটি বেঁচে নেই। পরে লাশটি কাদামাটিতে পুঁতে রাখেন তিনি।
রাতে ‘মনের মানুষকে না পাওয়া’র হতাশা লিখে স্ট্যাটাস, সকালে ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ‘মনের মানুষকে না পাওয়া’র হতাশা থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর অন্তর রায় (২২) নামের এক ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। অন্তর রায় আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগরের সাহা পাড়ার পল্টু রায়ের ছেলে। তিনি এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বেগ প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর রায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। স্থানীয় একাধিক তরুণ জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টা ৪৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে হতাশা প্রকাশ একটি স্ট্যাটাস দেন অন্তর। এতে তিনি লেখেন, ‘জীবনটাকে অনেক সুন্দরভাবে গুছাইতে চাইছিলাম। কিন্তু মনের মানুষকে না পাওয়া, ব্যর্থতা, আপন মানুষগুলোর ভুল বোঝা, চাপা, নিজের সম্মানে দাগ লাগা সব মিলিয়ে আমি আর টিকে থাকতে পারলাম না। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয় মানুষ, ভাই-বোন, আত্মীয়–স্বজন, যদি আমি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে মাফ করে দেবেন। এই পৃথিবী আমাকে বাঁচতে দিল না। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ পরিবারের সদস্যরা বলেন, গতকাল রাতের খাবার শেষে নিজ রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে যান অন্তর। আজ সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে জাগাতে তাঁকে ডাকাডাকি করা হয়। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একপর্যায়ে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন তাঁরা। এতে দরজা খুলে গেলে অন্তরকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই তরুণ প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ‘মনের মানুষকে না পাওয়া’র হতাশা থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর অন্তর রায় (২২) নামের এক ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নয়াপল্টনে বিএনপি–পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনের সংঘর্ষে আহত আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে মকবুল মারা গেছেন। অন্যদের মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল ও খোকন। প্রথম আলোর ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় মকবুলকে এক ব্যক্তি হাসপাতলে নিয়ে আসেন, যিনি নিজের নাম মোস্তাফিজুর রহমান বলে জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি পথচারী, রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মকবুলকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: নয়াপল্টনেই আটকে যাবে গণতন্ত্র! বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান শুরু বিকল্প ভেন্যু না দিলে নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ: মির্জা আব্বাস আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল সোয়া চারটার দিকে পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এরে আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হন। বিএনপির দাবি, তাদের বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বিকেল চারটায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা সুমাইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা এসেছি। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করছিলাম। পুলিশ অতর্কিতভাবে দুই দিক থেকে আমাদের ওপর হামলা করে। ছররা গুলি ও কাঁদানের গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এখন আমাদের যাকে যেখানে পাচ্ছে, পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন এই সংঘর্ষ শুরু হলো। আজ পল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভিড় করতে শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।’ তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান শুরু
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটার  দিকে পুলিশের একটি দল বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে। পুলিশের একটি দল বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে পড়েছে। এরপরই কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বসে পড়লেন ফখরুল, আটক এ্যানি ও শিমুল বিশ্বাস নয়াপল্টনে বিএনপি–পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১ আজ বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে। আজ সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে জমায়েত বড় হয়ে রাস্তার এক পাশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর পুলিশের এ গুলি চালানো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন এই সংঘর্ষ শুরু হলো। আজ পল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভিড় করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাঁদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা করেন। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের সামনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ জন্য তারা অনুমতিও চেয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। এতে অবশ্য বিএনপি রাজি নয়। তারা সোহরাওয়ার্দীর একটি বিকল্প স্থান চায়।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটার  দিকে পুলিশের একটি দল বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে।
ঘুমের মধ্যেও ক্রিকেট খেলতেন মিরাজ
‘ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। ক্রিকেটটা ছিল ঘুমের মধ্যেও। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘মা মা জানালা আটকাও, ক্যাচ ধরো, ক্যাচ ধরো।’ এভাবেই ছেলে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্রিকেট-পাগলামির কথা বলছিলেন মা মিনারা বেগম। গণমাধ্যম এড়িয়ে চলা মিনারা বেগমের সঙ্গে কথা হয় মিরাজের ছোট বোন রুমানা আক্তারের সহায়তায়। দুজন মিলেই জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই মিরাজ অনেক শান্ত। কখনো কারও কথার অবাধ্য হতো না। পড়াশোনায়ও ছিল ভালো।’ তবে বাবাকে খুব ভয় পেতেন মিরাজ। এ কারণে বাবা বাড়ি ফেরার আগেই বাড়ি আসতেন। বাবা খেলা পছন্দ করতেন না, তাই বাবার কাছে কখনো ছেলের খেলা নিয়ে নালিশ করেননি মা। বরং সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছেন। আর বোনের চোখে মিরাজ সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা ভাই। ভাইবোনের বয়সের ব্যবধান তিন বছর। মাঝেমধ্যে দুজনের ঝগড়া লাগলেও সেটা সাময়িক। মাঝেমধ্যে একে অপরের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ নয়। মিরাজই আগবাড়িয়ে কথা বলতেন বলে জানান রুমানা। মিরাজের খেলা-সম্পর্কিত বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং বড় ডায়েরির আকারে যত্ন করে বাঁধাই করে রেখেছেন বোন। একপর্যায়ে সেটি বের করে দেখান। রুমানার কাছ থেকেই জানা যায়, মাঝেমধ্যে ভাইবোন মিলে খাটের ওপর পাখা দিয়ে ক্রিকেট বল খেলতেন। প্রায়ই তাঁদের রেসলিং রূপ নিত সত্যিকার মারামারিতে। এ নিয়ে থাকত অভিমানও। মা কখনো ভাইবোনের এসব ব্যাপার নিয়ে বকাবকি এমনকি বাবার কাছেও নালিশ করতেন না। মিরাজের জন্ম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে। জন্মের তিন বছর পর ২০০০ সালে চাকরির জন্য পরিবার নিয়ে খুলনায় বসবাস শুরু করেন মিরাজের বাবা মোহাম্মদ জালাল হোসেন। এরপর তাঁদের সবকিছু খুলনাকেন্দ্রিক। বর্তমানে থাকেন খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কের দক্ষিণ কাশিপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে। মিরাজের খেলাধুলার হাতেখড়িও সেখানেই। গত রোববার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর সাংবাদিক আর মানুষের ভালোবাসার ‘অত্যাচারে’ অনেকটা ক্লান্ত মিরাজের পরিবার। তারপরও হাসিমুখেই সবার সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা। সঙ্গে চলছে মিষ্টিমুখ। মিরাজের বাবা পেশায় ছিলেন একজন গাড়িচালক। বর্তমানে অসুস্থতার কারণে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রিকেট খুব বেশি ভালো বোঝেন না। আর মা গৃহিণী। আর্থিক অনটনের সংসার। তাই বাবা চেয়েছিলেন ছেলে লেখাপড়া শিখে বড় সরকারি চাকরি করবেন। গানের প্রতি আগ্রহ থাকায় মিরাজকে বানাতে চেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পীও। তাই ছেলের খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকাটা খুব ভালো চোখে দেখতেন না তিনি। খেলার ‘অপরাধে’ মিরাজকে অনেক মারধরও করেছেন তিনি। বাবা মিরাজের খেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন যখন মিরাজ অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলার সুযোগ পান। তারিখটা মনে না থাকলেও মিরাজের বাবা বলেন, ‘মিরাজ যখন অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলার সুযোগ পেল, তখন সে যে একাডেমিতে খেলত ওই একাডেমির প্রশিক্ষক আল মাহমুদ আমাকে একটি পত্রিকা নিয়ে এসে মিরাজের সুযোগ পাওয়ার কথা জানান। পত্রিকায় সেটা দেখে চোখে পানি এসে গিয়েছিল।’ এ কথা বলতে বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিরাজের বাবা। কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নেন। আবার শুরু করেন, ‘পত্রিকায় ওই খবর দেখার পর আর মিরাজকে খেলা নিয়ে কখনো কিছু বলিনি। বরং উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ মিরাজ তাঁর বাবাকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতেন। খেলার সরঞ্জাম রেখে আসতেন কোনো বন্ধুর বাসায়। বাবা বাড়ি আসার আগেই বাড়ি ফিরে বসে যেতেন পড়তে। দক্ষিণ কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর এসএসসি পাস করেছেন ওই এলাকারই নয়াবাটি হাজী শরীয়তউল্লাহ বিদ্যাপীঠ থেকে। আর চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ থেকে। মিরাজের ক্রিকেট খেলার আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি কাশিপুর ক্রিকেট একাডেমি থেকে। এখনো ওই একাডেমির অধিনায়ক তিনি। ওই ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক মোহাম্মদ আল মাহমুদ বলেন, ‘আট বছর বয়সে এলাকার রাসেল নামের একটি ছেলের হাত ধরে একাডেমিতে আসে মিরাজ। ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহ আর প্রচণ্ড খেলোয়াড়ি মনোভাব ছিল তার। নির্দেশনাও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলত। ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের মিরাজকে মাঝেমধ্যে ওর বাবা খেলার মাঠ থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করতেন। এত প্রতিবন্ধকতার পরও খেলা থেকে এতটুকু পিছপা হয়নি মিরাজ। আজ তারই ফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ।’ খালিশপুর বিআইডিসি সড়কের দক্ষিণ কাশিপুর এলাকার যে গলি দিয়ে মিরাজদের বাড়িতে ঢুকতে হয়, সেটি দিয়ে রিকশাও যেতে পারে না। টিনের চালার ওই ভাড়া বাসায় মাত্র দুটি কক্ষ। এরই একটি ঘরের শেলফের ওপর ও মধ্যে সারি সারি সাজানো রয়েছে নানা জায়গা থেকে পুরস্কার পাওয়া তাঁর ট্রফিগুলো। দেয়ালে ঝোলানো রয়েছে অনেকগুলো মেডেল। এগুলোই যেন ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোর মতো ঠিকরে জানান দিচ্ছে আগামী দিনের ক্রিকেটে আরও কিছু দেওয়ার প্রত্যয়।
‘ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। ক্রিকেটটা ছিল ঘুমের মধ্যেও। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘মা মা জানালা আটকাও, ক্যাচ ধরো, ক্যাচ ধরো।’ এভাবেই ছেলে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্রিকেট-পাগলামির কথা বলছিলেন মা মিনারা বেগম।
মোটরসাইকেলে নৌকার প্রতিকৃতি বেঁধে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় এসেছেন সেলিম
কক্সবাজার শহরের পর্যটন করপোরেশনের হোটেল শৈবালের সামনের সড়কে তখন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ঢল। ঘড়িতে বেলা দেড়টা বাজে। সবাই তখন যাচ্ছেন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায়। নেতা-কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে সবার মনোযোগ কাড়ছেন সড়কের পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির নাম মো. সেলিম। পরনে বাদামি রঙের পাঞ্জাবি আর ‘মুজিব কোট’। মাথায় লাল–সবুজ রঙের টুপি। সবার আকর্ষণ মূলত সেলিমের সজ্জিত মোটরসাইকেলের দিকে। তাই মোটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে রাখা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি। পুরো নৌকাটি জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিলিয়ে লাল–সবুজ রং করা হয়েছে। নৌকার ওপরে লেখা—‘নৌকায় ভোট দিন’। পথচারী ও নেতা-কর্মীরা সেলিমের নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। শেখ কামাল  স্টেডিয়ামগামী অনেক নেতা–কর্মী সেলিমকে ডাক দিয়ে বলছেন, তাঁর মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে থাকতে। কিন্তু সেদিকে সাড়া নেই সেলিমের। সেলিমের বাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আদর্শ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অনুপ্রেরণা। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে এসেছেন। এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন। প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি কক্সবাজার শহরে পৌঁছান। পুরো পথ একা মোটরসাইকেল চালিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এত দূর আসার কারণ জানতে চাইলে সেলিম বলেন, জনসভাস্থলে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৯ ঘণ্টার বেশি। এত দূর আসার উদ্দেশ্য একটাই—নৌকার প্রচারণা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ যেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট দেন। আজ বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা। জনসভায় যোগ দিতে আজ সকাল থেকে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জনসভাস্থলে আসছেন। বেশির ভাগ নেতা–কর্মীদের পরনে লাল, হলুদ, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের টি–শার্ট ও মাথায় একই রকম টুপি দেখা গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল পৌনে চারটার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছছেন। তবে এর আগেই শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিশাল মাঠ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ভরে গেছে।
কক্সবাজার শহরের পর্যটন করপোরেশনের হোটেল শৈবালের সামনের সড়কে তখন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ঢল। ঘড়িতে বেলা দেড়টা বাজে। সবাই তখন যাচ্ছেন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায়। নেতা-কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে সবার মনোযোগ কাড়ছেন সড়কের পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি।
মেয়র তাপসের মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উপস্থিতিতে একটি মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের একটি মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি ঘটে। মাঠ উদ্বোধনের সময় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এতে স্থানীয় কাউন্সিলরের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুুল আজিজ ও ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠটির মালিকানা দাবি করে আসছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠটির মালিক তারা। তারা মাঠটি প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মাঠের মালিকানা নিয়ে মাদ্রাসা ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মাঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কারণ, আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকার মাঠ দেখার দায়িত্ব ডিএসসিসির। মাঠটির সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েন ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, মাঠটির নাম হোক ‘ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ’। কিন্তু ডিএসসিসি নাম দিয়েছে ‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’। মাঠের নামকরণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আপত্তি ছিল। এ কারণেই আজ তাঁরা হামলা চালিয়েছেন। সংস্কারকাজ শেষে মাস দেড়েক আগে মাঠের মূল ফটকে নামফলক বসাতে গিয়েছিলেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। তখন অবশ্য হামলার ঘটনা ঘটেনি। ডিএসসিসির এই প্রকৌশলী বলেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আজ দুপুরে মাঠটি উদ্বোধনের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। খবর পেয়ে আজ সকাল থেকে মাদ্রাসার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাঠ এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক অ্যাকশন’ বলেও তাঁরা স্লোগান দেন। বকশীবাজার এলাকায় মেয়র পৌঁছার পরও তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। নামফলকের সামনে লাগানো কাপড়টি যখন মেয়র সরিয়ে উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে আসা লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার পরই সেখান থেকে চলে যান মেয়র। ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মেয়রের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি নামফলক উদ্বোধন শেষে নিরাপদে নগর ভবন এসেছেন।’ কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ বলেন, হামলার ঘটনায় তাঁর এক কর্মীর চোখের ওপর ইটের অংশ এসে পড়ে। এতে তাঁর চোখ জখম হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়ের খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে মাঠটির মালিকানা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। এখন এই মাঠের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিএসসিসি বলে, তারা মাঠের সংস্কারকাজ করবে। আমরা প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলাম। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ডেকে ডিএসসিসি বলে, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই করা হবে। কিন্তু হঠাৎ আজ নামফলকে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ নামকরণ করে মাঠের উদ্বোধন করা হচ্ছে শুনে শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা এই নামকরণের প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’ হামলার বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে জামাত-বিএনপির লোকজন থাকতে পারেন। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে তাঁরা হামলা চালাতে পারেন। কিন্তু এই ঘটনার পর ছাত্রলীগ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, মাঠটিতে আগে অপরাধমূলক কাজ হতো। এ জন্য তারা মাঠের চারপাশের দেয়াল ভেঙে এমনভাবে সীমানা প্রাচীর করেছে, যাতে বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। মাঠে বালু ফেলে খেলার উপযোগী করেছে ডিএসসিসি। এ জন্য ডিএসসিসির এখন পর্যন্ত ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন বকশিবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের আয়তন ২.৯১ একর। এর মধ্যে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মালিকানা রয়েছে মাত্র ০.৫১ একরের। তারা কিভাবে পুরো মাঠের মালিকানা দাবি করে ঘৃন্য এই কাজ করছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উপস্থিতিতে একটি মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বরিশালে গভীর রাতে ডাকাত পড়ার কথা বলে মসজিদ থেকে মাইকিং
বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ডাকাত পড়ার কথা জানিয়ে মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। এ সময় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাও কোনো ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। মাইকিং শুনে অনেকে পাশের থানায় ফোন করেন। কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। পরে পুলিশ নগরের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে। এ বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন পাওয়ায় নগরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শুধু নগর নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা, এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলার অনেক স্থানে এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে।’ গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সব কটি মসজিদ থেকে মাইকিংয়ে বলা হয়, এলাকায় ডাকাত পড়েছে। পাশাপাশি ২২, ২৩, ১৪, ১৫, ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও মসজিদ থেকে এলাকায় ডাকাত পড়েছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং হচ্ছিল। মাইকিং শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি মেয়রকে জানিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিলে ডাকাত পড়ার বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে মসজিদে লোক পাঠিয়ে দেখা যায় সেখানে তালা। হুজুরদের ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছি না। তাহলে মাইকিং করল কারা? রাত আড়াইটার দিকে অপর এক ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুনছি গুজব, তাই লাইভে চলে এসেছি। আমরা ঢাকায় ছাত্রলীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম, বরিশালে আসার সময় পথে লঞ্চে বসেও শুনেছি এখানেও নাকি ডাকাতি হবে। তাই আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছি। আমাদের মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন জাল বিছিয়েছে। সারা বাংলাদেশে নাকি একসঙ্গে ডাকাতি হবে—এই ভুয়া ও গুজব খবর কারা ছড়াতে পারে, তা আপনারা আমাদের থেকে ভালো জানেন। বরিশালের অলিগলিতে যত মসজিদ আছে, সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে সব জায়গায় অপপ্রচার করছে যে সব শহরে ডাকাত পড়েছে। বরিশাল শহরে আমরা ৮ লাখ লোক বাস করি, কয়জন ডাকাত আসবে আর কতজন মিলে এই শহরের সবাইকে ডাকাতি করবে। এই ডাকাতির খবরের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব মনে হচ্ছে, ডাকাতি হওয়ার মতো পরিস্থিতি বরিশালে নেই। আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা এই গুজব ছড়িয়ে দেশকে নতুন কোনো দিকে ধাবিত করতে চাচ্ছে।’ বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও ডাকাতির গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালের উজিরপুর, বানারীপাড়া উপজেলার কিছু অংশ ও বরিশাল সদর উপজেলারও কিছু অংশে ডাকাত পড়ার বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকেও আতঙ্কের কথা তুলে ধরে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ডাকাত পড়ার কথা জানিয়ে মসজিদ থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। এ সময় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাও কোনো ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি।
পিরোজপুরে ককটেল বিস্ফোরণের দুই মামলায় বিএনপির ৩ নেতা গ্রেপ্তার
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি ও কাউখালী উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৯৮ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির এক নেতা বলছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ আওয়ামী লীগের লোকজনকে দিয়ে এসব ‘গায়েবি মামলা’ দিচ্ছে। ইন্দুরকানি থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে উপজেলার বালিপাড়া বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কার্যালয়ে থাকা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল বাশার (৬০), ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন ফরাজী (৩৯), সদস্য আলাউদ্দিন হাওলাদার (৩০) ও বেলায়েত হোসেন (৪৪) আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতে আহত আবুল বাশার বাদী হয়ে বিএনপির ৭৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মোট ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে স্থানীয় থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ওই মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফরিদ আহমেদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে। ইন্দুরকানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রাতে বিস্ফোরিত ককটেলের খোসা ও সাতটি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাউখালী থানার পুলিশ জানায়, উপজেলার শিয়ালকাঠি চৌরাস্তা এলাকায় গতকাল রাতে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় রাতে উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কামাল আকন বাদী হয়ে বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বনি আমিন বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজন আহত হন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শরিফুল আজমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ আওয়ামী লীগের লোকজনদের দিয়ে ‘গায়েবি মামলা’ দিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ ঘিরে কর্মীদের হয়রানি করতে এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে। তবে বিএনপির গণসমাবেশ সফল হবে।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি ও কাউখালী উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৯৮ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির এক নেতা বলছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ আওয়ামী লীগের লোকজনকে দিয়ে এসব ‘গায়েবি মামলা’ দিচ্ছে।
শরীয়তপুরে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে অনিয়ম, তদন্ত কমিটি গঠন
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে ‘অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ‘অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’র বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। তাঁর বিরুদ্ধে শ্রমিকের তালিকায় পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘অতিদরিদ্রদের তালিকায় ইউপি সদস্যর স্ত্রী, সন্তান, পুত্রবধূ, ভাই-ভাতিজাসহ ১১ স্বজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকল্পটির অনিয়মের বিষয়ে জানতে কয়েকজন সাংবাদিক গত রোববার ওই ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের কাছে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। আর ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করার দাবিতে শরীয়তপুর প্রেসক্লাব থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন স্থানে চলছে। নীতিমালায় রয়েছে উপকারভোগী ব্যক্তিদের দরিদ্র হতে হবে এবং এক পরিবারের একাধিক সদস্য প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন না। ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র আরও বলেন, গণমাধ্যমে একটি প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান উপজেলা প্রকৌশলী। জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, অতিদরিদ্রদের অভাব দূর করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প দিয়েছে। তা নিয়ে কেউ নয়ছয় করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আংগারিয়া ইউনিয়নের প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ জন শ্রমিক দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। সেখানে শ্রমিকের নামের তালিকায় ইউপি সদস্যর স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক, মেয়ে সোনিয়া বেগম, ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার, ভাই আবু সিদ্দিক, ছেলের শাশুড়ি, শ্যালিকাসহ ১১ স্বজনের নাম রয়েছে। তাঁদের নামের বিকাশ নম্বরে (মোবাইল ব্যাংকিং) মজুরি বাবদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে ‘অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
লক্ষ্মীপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে মাহবুব আলম ওরফে শিপুল (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহর থেকে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাহবুব আলম লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি। গত সোমবার রাতে কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের ওই কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। আজ বুধবার সকালে মাহবুবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর চাচা বাদী হয়ে মাহবুবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোরী বাক্প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে মাহবুব ওই কিশোরীকে ইশারা-ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একাধিকবার ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন মাহবুব। সোমবার সকালে ওই কিশোরীর বাড়িতে কেউ ছিল না। এই সুযোগে মাহবুব বাড়িতে ঢুকে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরীর এক স্বজন বাড়িতে ফিরে এসে মাহবুবকে ধরে ফেলেন। এ সময় কিশোরীর স্বজন চিৎকার শুরু করলে কৌশলে মাহবুব সেখান থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর গতকাল সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর চাচা বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরে অভিযান চালিয়ে মামলার একমাত্র আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই মামলা হতে পারে। তবে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি ছাত্রলীগ খতিয়ে দেখবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে মাহবুব আলম ওরফে শিপুল (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহর থেকে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অস্ত্রোপচারের সময় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আঙুলের অস্ত্রোপচারের সময় শিশু মারুফা জাহান ওরফে মাইশার (৬) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মারুফার বাবা মোজাফফর হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রূপনগর থানায় এ মামলা করেন। রূপনগর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। মারুফা (৫) কুড়িগ্রাম পৌরসভার ভেলাকোপা গ্রামের মোজাফফর হোসেন ও বেলি বেগমের মেয়ে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে চুলার আগুনে তার ডান হাতের আঙুল পুড়ে যায়। সে সময় চিকিৎসা করালে ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যায়। কিন্তু পরে তার তিন আঙুল কুঁকড়ে যায়। এ অবস্থায় গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার রূপনগর এলাকার আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করার সময় তার মৃত্যু হয়। লাশ বাসায় এনে গোসল দেওয়ার সময় পরিবারের সদস্যরা দেখেন তার পেট কাটা, সেলাই করা। এ ঘটনায় গত সোমবার মোজাফফর হোসেন রূপনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। মামলায় মোজাফফর হোসেন দাবি করেন, শিশু মারুফাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাই অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম, চিকিৎসক রনি ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীবসহ আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের মালিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মারুফার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মারুফার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলেই লাশ উত্তোলন ও ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রামে সরেজমিনে যাওয়া হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে গতকাল আহসান হাবীব বলেছিলেন, এলাকার রোগী হিসেবে কম খরচে তিনি ওই শিশুর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থানে নতুন চামড়া যুক্ত করতে হয়। শরীরের অন্য স্থানের চামড়া কেটে সেখানে লাগাতে হয়। মারুফা ছোট হওয়ায় তাঁর শরীরের অন্য অংশের চামড়া কেটে নেওয়া যাচ্ছিল না। তাই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেই পেট থেকে চামড়া কেটে নিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। মারুফা ‘হত্যা’র বিচার চেয়ে মানববন্ধন মারুফার মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে এর বিচারের দাবিতে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুড়িগ্রাম জেলা কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে মারুফার মা বেলি বেগম ও বাবা মোজাফফর হোসেন বক্তব্য দিয়েছেন। মানববন্ধনে বেলি বেগম বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এ জন্য ঘাতক আহসান হাবীবের ফাঁসির দাবি করছি। আমার সন্তানকে চিকিৎসার নামে হত্যা করা হয়েছে।’ মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। আমার মেয়েকে ডাক্তার আহসান হাবীবসহ তাঁর সহযোগীরা হত্যা করেছেন। আমি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের আশায় ঢাকার রূপনগর থানায় মামলা করেছি। আমি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঠিক বিচার চাই।’
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আঙুলের অস্ত্রোপচারের সময় শিশু মারুফা জাহান ওরফে মাইশার (৬) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মারুফার বাবা মোজাফফর হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রূপনগর থানায় এ মামলা করেন। রূপনগর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
রাজধানীর বংশালে ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীর বংশালের মাহুতটুলি থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ীর নাম জাবেদ হোসেন। শুক্রবার সকালে মাহুতটুলির চাঁন মসজিদ এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি পেশায় একজন জর্দা ব্যবসায়ী ছিলেন। পুলিশ বলছে, পায়ের রগ কেটে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জাবেদকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে তাঁকে কোনো স্বজন হত্যা করেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বংশাল থানার উপপরিদর্শক মাইনুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীর জাবেদ হোসেনের বাসা মাহুতটুলির চাঁন মসজিদ গলির কাছেই। সকালে তিনি বাসা থেকে বের হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি খবর পান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাঁন মসজিদ গলিতে একজনের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জাবেদ হোসেনের ছোট ভাই আজিজুল হক বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিকটাত্মীয় এক পরিবারের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ চলছে। এর জেরেই তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। পুলিশ বলছে, জাবেদের ভাই আজিজুলের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর বংশালের মাহুতটুলি থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ীর নাম জাবেদ হোসেন। শুক্রবার সকালে মাহুতটুলির চাঁন মসজিদ এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি পেশায় একজন জর্দা ব্যবসায়ী ছিলেন।
মানবাধিকারকর্মী ও বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও দেশের সরকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার নাগরিক অধিকারও সংকুচিত করছে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব কথা উল্লেখ করেছে। গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দেওয়া সংগঠনগুলো হলো—অ্যান্টি–ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম–এশিয়া), এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি), এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি), সিভিসাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইন্টার‍ন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), মায়ের ডাক,  রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, অধিকার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টরচার (ওএমসিটি)। বিবৃতিতে বলা হয়, এমন সময়ে এবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেই সব ব্যক্তি ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও একত্মতা প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো। বিবৃতিতে  আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ করেছে। এর ফলে দেশের জনগণ সুশাসন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই রাজনীতিকরণের কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সভা–সমাবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে বলা হয়, এই দমনমূলক আইন ব্যবহার করে অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিরোধী দলের নেতা–কর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষদের ওপর নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদীত ও মিথ্যা মামলা করছে বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও দেশের সরকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার নাগরিক অধিকারও সংকুচিত করছে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব কথা উল্লেখ করেছে।
যুক্তিতর্কে বিজয়ী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
যুক্তির ওপর পাল্টাযুক্তি। আবার এ যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকানোর চেষ্টা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দিনভর এ যুক্তিতর্কের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা আয়োজিত আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২২–এ প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইংরেজি বিভাগের শ্রেণিকক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি বিভাগের ২৪ বিতার্কিক অংশ নেন। রানার্সআপ হয়েছে লোকপ্রশাসন বিভাগ। তিনটি পর্বে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় বেলা তিনটায়। এ পর্বের বিতর্কের বিষয় ছিল ‘এ সংসদ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে আবদ্ধ।’ এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে লোকপ্রশাসন বিভাগ আর বিপক্ষে যুক্তি দেয় শিক্ষা অনুষদ ইনস্টিটিউট। বিজয়ী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হলেন শেখ মাহমুদ হাসান, নাফিসা সাদাফ ও সাইমা বিনতে ইসলাম। রানার্সআপ লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা হলেন আবদুল্লাহ আল জুবায়ের, কাসফিয়া তাহসিন ও তাসমিয়া মোস্তফা। প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সাঈদ আহসান, বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়, সাবেক বিতার্কিক ফাল্গুনি মজুমদার, শাখা স্কুল অব ডিবেটের সভাপতি নাজমুল হাসান তুষার, ডিবেটিং সোসাইটির সহসভাপতি অমিত হাসান, মিনহাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক কায়েস মুহাম্মদ, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন মুন্না প্রমুখ। বিকেল পাঁচটায় বিতর্ক উৎসবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শাখা বন্ধুসভার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক বর্ণিক বৈশ্যের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি নাজনীন নাহার। তিনি বলেন, নারীরা রাজনীতিতে পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে। তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। নারীরও পুরুষের মতো সব ধরনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। অতিথির বক্তব্যে উত্তম রায় বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি সংগঠন। বাংলাদেশের যেকোনা মানবিক উন্নয়নে ও মানবিকতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে বন্ধুসভা। শীতকাল শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, গৃহহীনকে গৃহ দেওয়াসহ বিভিন্ন মানবিক কাজ এ সংগঠন করে থাকে। এ সংগঠনের সবচেয়ে বড় অর্জন নারী-পুরুষের সমান অংশীদারত্ব। সাঈদ আহসান বলেন, ‘মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে। মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিলে নারী তার মর্যাদা এমনিতেই লাভ করবে। নারী ও পুরুষ আলাদা কোনো সত্তা নয়। নারী ও পুরুষের অধিকারকে আলাদা করতে গিয়ে আমরা যেন পারস্পরিক বিদ্বেষমূলক অবস্থায় চলে না যাই।’
যুক্তির ওপর পাল্টাযুক্তি। আবার এ যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকানোর চেষ্টা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দিনভর এ যুক্তিতর্কের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।
হিয়াকু অভিযান
৯ ডিসেম্বর আমরা শুভপুর অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রাভিযান শুরু করি। ওই দিনই করের হাটে রাত আটটায় কে ফোর্সের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এবং ভারতীয় ৮৩তম পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপের সভাপতিত্বে সব ইউনিট কমান্ডারদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফোর্স কমান্ডার তাঁর অপারেশন পরিকল্পনা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। সিদ্ধান্ত হয় যে আমি চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল ও মুজিব ব্যাটারিকে নিয়ে হিয়াকু–ফটিকছড়ি–নাজিরহাট–হাটহাজারী–চট্টগ্রাম অক্ষে অগ্রাভিযান করব। অন্যদিকে ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপের সরাসরি নেতৃত্বে দশম ইস্ট বেঙ্গল ও অন্য দুটি ভারতীয় পদাতিক ব্যাটালিয়ন ভারতীয় গোলন্দাজদের সহায়তায় সীতাকুণ্ড–কুমিরা–ভাটিয়ারী–ফৌজদারহাট–হাটহাজারী–চট্টগ্রাম অক্ষে অগ্রাভিযান করবে। ঠিক হয় যে আমাদের উভয় বাহিনী হাটহাজারীতে একত্র হয়ে একযোগে চট্টগ্রামে শত্রুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ব। পরিকল্পনা মোতাবেক ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার সময় আমি আমার নির্ধারিত অক্ষে অগ্রাভিযান শুরু করি এবং ১০ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ছয়টায় হিয়াকুতে পৌঁছাই। হিয়াকু বাজারে শত্রুর একটা প্লাটুন ডিলেইং অবস্থানে ছিল। তারা প্রথমে আমাদের কিছুটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মুজিব ব্যাটারি ও আমাদের মর্টার প্লাটুনের তুমুল গোলাবর্ষণের মুখে অতি দ্রুতই তারা অবস্থান তুলে নিয়ে ফটিকছড়ির দিকে পালিয়ে যায়। ফলে আমরা খুব সহজেই হিয়াকু শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হই। হিয়াকু থেকে পরের রাস্তা ছিল খুবই অনুন্নত, জঙ্গলঘেরা এবড়োখেবড়ো পাহাড়ি পথ। অত্যন্ত বিপৎসংকুল এই পথে মাঝেমধ্যেই আমাদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে অগ্রসর হতে হচ্ছিল। ফলে আমাদের অগ্রাভিযানের গতি ধীর হয়ে পড়ছিল। অগ্রসর হওয়ার পথে বিবিরহাট ও হিয়াকুর মাঝামাঝি একটি চৌরাস্তায় আমি দেখি একজন সশস্ত্র পাঞ্জাবি সৈনিক আমার গাড়িকে আসার জন্য ইশারা করছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মনে হলো, সৈন্যটি আমাদের গাড়িটিকে তাদের পক্ষের বলে মনে করেছে। সম্ভবত তার নিজের দলের সৈন্যরা তাড়াহুড়া করে পশ্চাদপসরণ করার সময় তাকে ডাকতে ভুলে গিয়েছিল। আমি নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত না নিলে শত্রুসৈন্যটি বুঝতে পেরে গুলি ছুড়তে শুরু করলে আমাদের গাড়ির সবাই মারা পড়ব, এমনই অবস্থা। আমি চকিতেই সৈন্যটির ওপর গাড়ি চালিয়ে দিলাম ও তাকে গুরুতর আহত করলাম। যদিও আমি সঙ্গে সঙ্গেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মৃত্যুবরণ করল। বিকেল চারটা নাগাদ আমরা নারায়ণহাটে শত্রুর একটি ডিলেইং পজিশনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হই। প্রায় আধঘণ্টা ধরে গোলাগুলির পর শত্রুরা পিছু হটতে থাকে এবং একসময় ফটিকছড়ির দিকে পালিয়ে যায়। আমরা নারায়ণহাট মুক্ত করার পর সেখানেই ব্যাটালিয়নকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়ে রাত কাটাই। সূত্র: স্মৃতিময় মুক্তিযুদ্ধ ও আমার সামরিক জীবন, এইচ এম আবদুল গাফফার, বীর উত্তম, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৬ লে. কর্নেল এইচ এম আবদুল গাফফার, বীর উত্তম: বীর মুক্তিযোদ্ধা; অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
৯ ডিসেম্বর আমরা শুভপুর অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রাভিযান শুরু করি। ওই দিনই করের হাটে রাত আটটায় কে ফোর্সের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এবং ভারতীয় ৮৩তম পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপের সভাপতিত্বে সব ইউনিট কমান্ডারদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে ঢাবিতে ছাত্রলীগের অবস্থান–মহড়া
আগামীকাল শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এই অবস্থান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার দিনভর ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। কালকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় বিএনপি বা ছাত্রদলের যেকোনো ধরনের তৎপরতা রুখতেই ছাত্রলীগ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই অবস্থান ও মহড়াকে ‘শান্তির সপক্ষে লড়াই’ বলা হচ্ছে। ৩ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর কয়েক দিন শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল না। গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন সনজিত-সাদ্দাম। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার পর গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যানটিন, নীলক্ষেত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কার্জন হল, হাইকোর্ট মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ছাত্রদল ও বিএনপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলে করে শোডাউন দিতেও দেখা গেছে।আজ শুক্রবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের হল শাখার নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেলের শোডাউন দিচ্ছেন। তাঁদের ‘ছাত্রদলের গুন্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলা জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আগামীকাল রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিজয় মঞ্চ: সন্ত্রাস রুখতে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রতিবাদী গান, নৃত্য, আবৃত্তি, মঞ্চনাটক, মূকাভিনয়, বিতর্কসহ নানা পরিবেশনা থাকবে। আয়োজনে সচেতন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে আগামীকালের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে বলে জানা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের এক বৈঠকের পর এই আয়োজনের ঘোষণা আসে। ক্যাম্পাসে অবস্থান ও সাংস্কৃতিক আয়োজনকে ‘শান্তির সপক্ষে লড়াই’ বলে অভিহিত করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। শান্তির সপক্ষে এই লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন করতে হবে।
আগামীকাল শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ।
গ্রামের মোড়ে মোড়ে চলছে যুক্তি–তর্কের লড়াই, মিলেমিশে খেলা দেখার আয়োজন
গোটা দুনিয়া ভাসছে ফুটবলের উন্মাদনায়। সেই উন্মদনা ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের কোনায় কোনায়। আজ শুক্রবার সাতসকালে খুলনার ভৈরব নদের বার্মাশীল খেয়াঘাট পার হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে পৌঁছাতেই উন্মাদনার আঁচ টের পাওয়া গেল। খেয়াঘাট থেকে শুরু করে যতই সামনের দিকে এগোনো হলো, কিছুদূর পরপর ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার বড় বড় পতাকা পতপত করে উড়ছে। মাঝেমধ্যে কিছু ফ্রান্স ও পর্তুগালের পতাকারও দেখা মিলল। রাস্তায় চলাফেলা করা মানুষের বড় একটা অংশের পরনেই প্রিয় দলের জার্সি। জার্সি পরে কাজে যাচ্ছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মোড়ে মোড়ে, দোকানে দোকানে আলোচনায় শুধু ফুটবল। মেসি-নেইমারদের সফলতা-ব্যর্থতা, অর্জন আর না পাওয়ার গল্প, আড্ডা আর তর্ক-বিতর্ক। সেনহাটি মোড় থেকে কিছুদূর সামনে এগোতেই কলের পুকুরপাড় মোড়। পুকুরের বড় পাকা ঘাটলার সামনে পুকুরের মধ্যেই বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। পর্দার দুই প্রান্তে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বড় বড় দুটি পতাকা ঝুলছে। পুকুরপাড়ের ওয়ার্কশপের দোকানদার মো. নাসিম জানালেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য, দোকানদার, চাকরিজীবী—সবাই মিলে এই বড় পর্দার ব্যবস্থা করেছে। খেলার সময় পুরো রাস্তা ব্লকড হয়ে যায়। আর আজ তো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলেরই খেলা। খেলা ব্যাপক জমবে। দুই দলের সমর্থকেরাই উন্মুখ হয়ে আছেন। কলের পুকুর মোড় থেকে কিছুটা সামনে কাগজী বটতলা বাঁশেরহাট মোড়। মোড়ের ওপর বড় বড় পতাকা উড়ছে। সমর্থকদের ছবি দিয়ে প্যানা করা রয়েছে। সেখানকার চায়ের দোকানে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলছে তর্ক-বিতর্ক। বাঁশেরহাট মোড় থেকে সামনে পানিগাতি পশ্চিমপাড়া গ্রামের সাদেকের বটতলা। মোড়ের রাস্তার মাঝে প্রচীন বটগাছের চারদিকে চারটা রাস্তা চলে গেছে। গাছের নিচে ইটের পাকা বেদি করে বসার জায়গা। বেদির গায়ে পরপর ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা আঁকানো। মোড়ের ওপর আল্পনা আঁকা হয়েছে। পাশের দোকানগুলোতে রংতুলি দিয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা পতাকা আর মেসি–নেইমারদের ছবি আঁকা হয়েছে। বেদির নিচে বসে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জনা দশেক সমর্থক তুমুল তর্কে লিপ্ত। মূলত তর্কে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থক আবদুল্লাহ আর ব্রাজিলের সমর্থক শেখ রিয়াজ হোসেন। রিয়াজ হোসেন আবদুল্লাহকে বলছিলেন, ‘তোমরা এত ভালো দল। তোমাদের ভিন গ্রহের প্লেয়ার তো পেনাল্টি মিস করে। শোনো শুধু শুধু তর্ক করো না, বিশ্বে যত দল আছে ব্রাজিলের মতো অত তারকাবহুল প্লেয়ার তো কোনো দলে নেই।’ আবদুল্লার পাল্টা জবাব, ‘মিস তো করতেই পারে। মেসি তো পরে জিতাইছে। আর আপনারা যতই পাঁচবারের গল্প দেন না কেন, আপনারা তো মূলত বিশ্বকাপ জিতেছেন দুইবার, বাকি তিনবার তো জুলে রিমে কাপ।’ পাশ থেকে ব্রাজিল সমর্থক মোশারফ হোসেন বলে ওঠেন, ‘ওই মিয়া, তাহলে ব্রাজিলের জার্সিতে পাঁচ তারকা লাগানো হইছে কীভাবে। হাত দিয়ে গোল দিয়ে বড় কথা কও। আর কথায় কথায় সাত গোলের কথা কও। নিজের যোগ্যতায় তো সাত গোল দেওনি।’ আবদুল্লাও কম যান না। মোশারফের কথার পিঠে বললেন, ‘ওই স্টার দিয়ে বসে থাকেন। আর হাত দিয়ে গোল দিতে যোগ্যতা লাগে। যার কাছেই খান, সেভেন আপ তো খাইছেন। আর গায়ে বল লাগার আগে জবাই করা মুরগির মতো লাফায় আপনাদের নেইমার।’ ব্রাজিলের একজন সমর্থক বলে উঠলেন, ‘লেভেলে আসো। তোমাদের তো কোনো লেভেল নাই, নিজেদের তো কিছু নেই। অর্জন বলতে ওই সেভেন আপ।’ তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই দুই দলের অনেকেই হাজির হয়ে যান। মোড়ের ওপর দিয়ে পথের বাজারে বাজার করতে যাচ্ছিলেন রহমত গাজী ও দাউদ শেখ। তর্ক দেখে রহমত গাজী সাইকেল থামিয়ে বললেন, ‘ওসব গল্পে, ইতিহাস-ফিতিহাসে কাজ হবে না। মাঠে আসো খেলা হবে। আর্জেন্টিনা কম করে চার গোল দেবে।’ দাউদ শেখও সাইকেলে থেকেই বলে উঠলেন, ‘অতো লাফাইয়ো না। আমাদের কাছেই দুই গোল খাইছো, দেখো আজ কি হয়।’ দাউদ জানালেন তিনি সৌদি আরবের সমর্থক। তর্ক-বিতর্ক যেন আর থামে না। তুমুল তর্কের মধ্যে এক অপরকে পরাস্ত করতে মুঠোফোনে নেট ঘেঁটে পুরোনো ইতিহাস ঘাঁটার চেষ্টায় মরিয়া দুই দলের সমর্থকেরা। এর মধ্যেই টিভিতে বিশ্বকাপের খবর শুরু হলো। সবাই দোকানের টিভির সামনে এলেন। দোকানের টিভি থাকার পরও খেলা দেখার জন্য সমর্থকেরা মিলে টিভি কিনেছেন। খেলার খবর শেষ হতেই দুই দলের সমর্থকেরা ব্যস্ত হয় পড়লেন রাতের খাবারের আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে। মোশারফ হোসেন বলেন, চার বছর পরপর খেলা হয়। ফুটবল সবাই বোঝে। প্রতিটা মুহূর্তেই উন্মাদনা থাকে। রাস্তার ওপর বসে অনেকে খেলা দেখেন। খাওয়াদাওয়া চলে। আজকে রাতেও বড় খাওয়ার আয়োজন আছে। আর দল যদি জিতে যায়, কাল আরও বড় করে খাওয়ার আয়োজন চলবে। এখানে খেলার সময় খাওয়াদাওয়া বেশি হয়। প্রতি মোড়ে আয়োজন থাকে। পাশে থাকা ফাতেমা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর্জেন্টিনার সমর্থক মনজুরুল হাসান বলেন, পথের বাজার মাঠে সকালে খেলা হয়েছে। আর্জেন্টিনার লোকজন সেখানে চার গোল দিয়ে ব্রাজিলের কাছ থেকে হাজার টাকা জিতে নিয়েছে। টান টান উত্তেজনা। সবাই মিলে দেখবেন। আর্জেন্টিনা তো জিতবেই। তিনি চান ব্রাজিলও জিতুক। সেমি ফাইনালে তাহলে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে। ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বক্কর বলেন, ‘আমরা আয়োজন করেছি এক শ মানুষের। তেহারি হবে। আগের দিন আর্জেনিটনার খেলার দিনও ছিল। সেদিন ব্রাজিল সমর্থকদেরও খাইয়েছি। সবাই তো ভাই-ব্রাদার। একসঙ্গে খেলা দেখি। ব্রাজিল গোল খাইলে আমরা আনন্দে ফেটে পড়ি। আমরা হেরে গেলে তাঁরা উল্লাস করে।’ফাতেমা মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্রাজিলের সমর্থক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এখানে প্রচুর উন্মাদনা। প্রতি খেলায় পিকনিকের আয়োজন হয়। গতকাল রাতে রাজহাঁসের আয়োজন ছিল। আজকেও আয়োজন হবে। সকালই আমরা সাড়ে চার হাজার টাকা উঠিয়েছি। রাতে পিকনিক হবে। বাজার করা হয়ে গেছে।’ আজ দুই দলের সমর্থকদেরই প্রত্যাশা নিজ নিজ দলের জয়। তারপরও খেলার উন্মাদনা যাতে খেলার মধ্যেই থাকে সে ব্যাপারে সমর্থকেরা বেশ সচেষ্ট। রিয়াজ হোসেন যেমন বলছিলেন, ‘খেলায় চরম উন্মাদনা আছে। সব সময় থাকবে। আমরা পচাব, হয়তো আবার পচানি খাব। আরপরও সব সময় আমরা সচেষ্ট থাকি, খেলা যেন খেলার মধ্যেই থাকে। খেলা শেষে, রাত শেষে আমরা তো সবাই ভাই ভাই, প্রতিবেশী। মেসি–নেইমারের মধ্যে যদি অটুট বন্ধুত্ব থাকতে পারে, আমরা কেন এর বাইরে ভাবব।’
গোটা দুনিয়া ভাসছে ফুটবলের উন্মাদনায়। সেই উন্মদনা ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের কোনায় কোনায়। আজ শুক্রবার সাতসকালে খুলনার ভৈরব নদের বার্মাশীল খেয়াঘাট পার হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে পৌঁছাতেই উন্মাদনার আঁচ টের পাওয়া গেল।
লড়াইয়ের সময় এসেছে: মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের সময় এসে গেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’ আজ শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মান্না বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের জন্য সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং অসাংবিধানিক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি করে, হামলা করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার শেষ চেষ্টা করছে। তারাও জানে, সময় ফুরিয়ে এসেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করার প্রতিবাদ জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার করে গণ–অভ্যুত্থান ঠেকানো যাবে না। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিএনপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা–কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন তিনি। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মান্না বলেন, ‘বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় জনগণ রাজপথে ফয়সালা করবে। ১৪ বছর ধরে যে জনগণের সকল অধিকার হরণ করেছেন, সিদ্ধান্ত এখন সেই জনগণের হাতে।’ জনগণের উদ্দেশে মান্না বলেন, ‘আমাদের ভয় পাবার কিছু নেই। ভয় পেয়েছে স্বৈরাচার সরকার। যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ দলমত–নির্বিশেষে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রকামী জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের সময় এসে গেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
মৌলভীবাজার থেকে ঢাকামুখী যাত্রী কম, নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না বাস
ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকামুখী বাসের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। গত দুই দিনে আতঙ্কে অনেকেই ঢাকামুখী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এতে যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক বাসই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ের পর যেসব বাস ছাড়ছে, সেগুলোতেও যাত্রীসংখ্যা আসনের তুলনায় অনেক কম। আজ শুক্রবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, বেশকিছু বাস দাঁড়িয়ে আছে। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী আর পরিবহন–সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাঘুরি করছেন। কিছুক্ষণ আগে হানিফ পরিবহনের সকাল ছয়টার বাস নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আধা ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। আসনসংখ্যার চেয়ে অনেক কম যাত্রী ছিল ওই বাসে। সকাল সাতটায় যে বাস ছাড়ার কথা, ওই বাসে মাত্র ছয়জন যাত্রী। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাসের চালক। ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের পরিবহন সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে ঢাকাগামী যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন হলেও বাসে তেমন যাত্রী ছিল না। অন্য সময় প্রায় সব বাসেই বৃহস্পতিবার অন্তত ৫-৭টি টিকিটের আগাম বুকিং থাকে। তবে গত দুই দিনে কোনো বুকিং নেই। গতকাল রাতে একজন যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ঢাকার বাইরের অন্য জেলার বাসগুলোর চিত্র স্বাভাবিক। ওই বাসগুলোতে অন্যদিনের মতোই যাত্রী হচ্ছে। যাত্রীরা দরদাম করে ভৈরব, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলার বাসে উঠছেন। হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় গাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু যাত্রী হলে যাচ্ছে। গতকাল থেকে যাত্রী কম। আজ একটা গাড়ি ছেড়েছে কম যাত্রী নিয়ে। পরের গুলোর যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। শাহ পরান পরিবহনের কর্মী মো. টুটুল বলেন, ‘প্রতিদিন চার-পাঁচটা অ্যাডভান্স (অগ্রিম টিকিটের বুকিং) থাকে। আজকে একটাও অ্যাডভান্স নাই। গতকাল থেকেই যাত্রী নাই। যাত্রীর জন্য বসে আছি। আজ কটা গাড়ি যাবে, এখনো জানি না।’ শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সুহেল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের ভেতর আতঙ্ক। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক যাত্রী কমে গেছে। অতি জরুরি ছাড়া কেউ যাচ্ছে না। দুই-তিন দিন ধরেই এই অবস্থা শুরু হয়েছে।’ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তাঁরা আতঙ্কিত। এ জন্যই এখন অনেকে ঢাকা যেতে চাচ্ছেন না। আর যাঁরা বাসস্ট্যান্ডে আসছেন, তাঁরা জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই ঢাকায় যাচ্ছেন। ঢাকাগামী যাত্রী হুমায়ূন কবীর বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু কী করব! রোগী আছে, তাই যেতেই হবে। না হলে এই বিপদে কে আর যায়।’
ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকামুখী বাসের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। গত দুই দিনে আতঙ্কে অনেকেই ঢাকামুখী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এতে যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক বাসই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ের পর যেসব বাস ছাড়ছে, সেগুলোতেও যাত্রীসংখ্যা আসনের তুলনায় অনেক কম।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার দিল টিআইবি
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাঁক বদল ঘটছে ডেটা (উপাত্ত) সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ডেটা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে। রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আটকে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নীতি প্রণয়ন করলেও ডেটার প্রকাশ, সহজপ্রাপ্যতা ও ব্যবহার বাড়াতে পারেনি। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে ডেটা সাংবাদিকতা: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব মতামত তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে টিআইবি। একই সঙ্গে ২০২২ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বাক্‌স্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশ নিয়ে একটা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তবে তা শুধু কাগজ-কলমে থাকলে হবে না। যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত, তাদের বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে, তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। সভায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে ডেটা সাংবাদিকতা: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তাতে বলা হয়, ক্ষমতাশালীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, কর ফাঁকি ও পাচার, জটিল নেটওয়ার্ক উন্মোচনে ডেটা সাংবাদিকতা নতুন পথ দেখিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ সাংবাদিকেরই ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি।প্রবন্ধে বলা হয়, ডেটা উন্মুক্ত করতে সরকার কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, কি ধরনের আইনি কাঠামো ও পরিবেশ ব্যবহার করছে, তা পরিমাপে গ্লোবাল ডেটা ব্যারোমিটারের সূচক জনপ্রিয়। চলতি বছরের ডেটা ব্যারোমিটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৩ দশমিক ৮ পেয়েছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গড় স্কোর ৩২ দশমিক ৭৯ থেকে বেশ কম। প্রাপ্যতা, সক্ষমতা, ব্যবহার ও ফলাফল, উন্মুক্ত ডেটা নীতি এসব মানদণ্ড ব্যবহার করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। তবে বাংলাদেশে ডেটা সাংবাদিকতার ভালো সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজিএন) রোভিং এশিয়া এডিটর মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিতে ডেটা সাংবাদিকতা নতুন মাত্রা যোগ করবে। দুর্নীতি এখন বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে, দেশের সাংবাদিকদের সেই অনুযায়ী সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে এ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা। ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং নতুন হতে যাওয়া ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টও ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা। বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলী বলেন, কী করলে বিপদে পরে যাই, সাংবাদিকদের মধ্যে এমন মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। সাহস নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে পেশাগত জীবনে সৎ থাকার বিকল্প নেই। সভায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্টের পরামর্শক সুমাইয়া খায়ের, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন ও ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের প্রধান বদরুদ্দোজা বাবু। সভায় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম। ২০২২ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন প্রিন্ট বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান। তিনি ‘সাইবার অপরাধ-১: ৯৭ ভাগ মামলাই টেকেনি’, ‘সাইবার অপরাধ-২: মামলা সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, পরে চট্টগ্রাম’ ‘সাইবার অপরাধ-৩: পরিকল্পিত সাইবার অপরাধ তুলনামূলক কম।’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য এ পুরস্কার পান। আজ আঞ্চলিক পর্যায়ে টিআইবির এ পুরস্কার পান খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল হাসান এবং টেলিভিশন মিডিয়াতে যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন দলের এডিটর অপূর্ব আলাউদ্দিন। প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইট।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাঁক বদল ঘটছে ডেটা (উপাত্ত) সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ডেটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ডেটা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে। রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আটকে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নীতি প্রণয়ন করলেও ডেটার প্রকাশ, সহজপ্রাপ্যতা ও ব্যবহার বাড়াতে পারেনি।
গোলাপবাগ মাঠে কাল সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে আগামীকাল শনিবার বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন আজ শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি তাঁদের জানিয়েছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ের ফটকের সামনে বেলা ৩টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তাঁরা রাজধানীর কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে খেলা চলার কারণে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। পুলিশ গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। জাহিদ হোসেন বলেন, আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ হবে। প্রায় তিন মাস আগে বিএনপি ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করতে নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছিল বিএনপি। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। কিন্তু ডিএমপি বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলে। পরে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প ভেন্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এর পর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে আগামীকাল শনিবার বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করছেন।
কোনো মুসল্লিকে বাধা দেওয়া হয়নি: পুলিশ
মুসল্লিদের ছদ্মবেশে জামায়াতে ইসলামী পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বিপ্লব কুমার সরকার।  আজ শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান। মুসল্লিদের জুমার নামাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে—এমন প্রশ্ন করা হলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ। কোনো মুসল্লিকে বাধা দেওয়া হয়নি। বরং পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করে যে যাঁর মতো বাসায় চলে যাবেন, পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে। এই স্লোগান কারা দেয় এটা আপনাদের বুঝতে হবে। এটা দেয় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ একটি দল জামায়াতে ইসলামী। যে রাজনৈতিক দলটি ১০ তারিখের সমাবেশের ডাক দিয়েছে, জামায়াত ওতপ্রোতভাবে তাদের সঙ্গে যুক্ত। বিপ্লব সরকার বলেন, ‘জামায়াতই নারায়ে তাকবির স্লোগান দিয়ে এখানে ঢোকার চেষ্টা করেছে। কারণ, এটা বিএনপির স্লোগান নয়। জামায়াতে ইসলামী এখানে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে ঝগড়া বা ঝামেলায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা তাদের ডেসপাস করে দিয়েছি।’ সাধারণ মুসল্লি বেশে নয়াপল্টন এলাকায় আজকে জামায়াত ঝামেলা বা আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে জানিয়ে বিপ্লব কুমার বলেন, কোনো অপরাধী বা দুষ্কৃতকারী নাশকতার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। জামায়াতকে তো ছাড় দেওয়া হবেই না। নয়াপল্টন এলাকায় নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘টাইম টু টাইম নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। যখন আমরা মনে করি কোনো শঙ্কা আছে, নিরাপত্তা জোরদার করি।’
মুসল্লিদের ছদ্মবেশে জামায়াতে ইসলামী পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বিপ্লব কুমার সরকার।  আজ শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
রাজধানীর প্রবেশপথে পুলিশের চৌকি, ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি
রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে বেশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আগামীকাল শনিবার বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশ এসব তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। তবে পুলিশের দাবি, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আজ শুক্রবার গাবতলী এলাকায় দেখা যায়, গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর মুখে গাবতলী অংশে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, রাজবাড়ী, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার প্রতিটি বাস থামিয়ে ভেতরে গিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে, ওই যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ কিংবা বস্তা খুলে দেখা হচ্ছে। এই প্রতিবেদক আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গাবতলী এলাকায় ছিলেন। সেখানে দেখা যায়, দুই ঘণ্টায় প্রায় ৩০টি বাসসহ কয়েকটি প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে তল্লাশি চালানো হয়। আর তল্লাশি চালাতে গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর ওপর চারটি ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ সময় পুলিশের তল্লাশিচৌকির পাশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য করা দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের প্যান্ডেলও দেখা গেছে। গাড়ির ভেতর অন্তত দুজন করে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) যাচ্ছেন। আর তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তল্লাশিচৌকির পাশেই টানানো একটি প্যান্ডেলের নিচে পুলিশের আরও সাতজন এসআই, এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) এবং কনস্টেবল অবস্থান করছেন। আনসার সদস্য রয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৫ জন। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। যাত্রীদের তল্লাশির সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও চালকের কাগজপত্র যাচাই করছেন। পাবনা থেকে আসা হাসিব পরিবহনের একটি গাড়ির চালক মো. রুবেল মিয়া বলেন, ঢাকায় আসার পথে তিনি চারটি স্থানে তল্লাশির মুখে পড়েছেন। এগুলো হচ্ছে—ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেউহাটা এলাকা, চন্দ্রা মোড়, নবীনগর এবং সবশেষ গাবতলীতে। তবে তাঁর বাসের কোনো যাত্রীর কাছেই পুলিশ সে রকম কিছু পায়নি। তাই কাউকে আটক করাও হয়নি বলেও জানান তিনি। অভি ট্রাভেলস নামের আরেকটি বাসের সুপারভাইজার মো. রিকাত আলী বলেন, টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙা ও সাভারের আমিনবাজারে তাঁর বাসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুলিশ যে যাত্রীদের সন্দেহ করে, তাঁদের শরীর ও ব্যাগ তল্লাশি করে দেখছে। সেতু থেকে গাবতলীতে নামার ঢালেই তল্লাশিচৌকি বসানোর কারণে রাজধানীতে ঢোকার আগে সামান্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহনচালক ও শ্রমিকেরা। মৌমিতা পরিবহনের সুপারভাইজার আশিক হাসান বলেন, এমনিতেই শুক্রবার, এর মধ্যে আবার বিএনপির সমাবেশ। তাই রাস্তায় অন্য শুক্রবারের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। শুধু আমিনবাজারে এসে সেতুতে ওঠার আগে তিনি কিছুটা যানজট পেয়েছেন। একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি মো. সোহাগ আলী। তিনি সাভারে একটি এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে যন্ত্রাংশ রাখার একটি প্লাস্টিকের বাক্স এবং ব্যাগে আরও কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিল। পুলিশের সদস্যরা প্লাস্টিকের বাক্স এবং ব্যাগ খুলে যন্ত্রাংশ বের করে তল্লাশি চালান। এ সময় তাঁর দেহেও তল্লাশি চালানো হয়। সোহাগ আলী বলেন, ‌‘পুলিশ তাঁদের কাজ করছে। আমরা তো কোনো অপরাধী নই। তাঁরা অপরাধীদের ধরে বিচার করুক।’ গাবতলীতে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছেন দারুসসালাম থানার পুলিশের সদস্যরা। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এসআই প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিজয় দিবস ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা নাশকতা না হয়। ব্যাগে সন্দেহজনক কিছু আছে মনে হলে, সেগুলো খুলে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে বেশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যানবাহনেও তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নয়াপল্টনে সন্দেহ হলেই তল্লাশি, বিএনপির কর্মীসহ আটক ৪
রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় আজ শুক্রবার কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করছে পুলিশ। কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিতেও দেখা গেছে। আজ দুপুরে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে তিন যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিএনপির মিছিল থেকে দলটির এক কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নয়াপল্টন এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেন অবস্থান নিতে না পারেন, সে জন্য পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাঁরা নিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই এলাকায় সাধারণ মানুষকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এমনটা করা হচ্ছে। আজ বেলা পৌনে ১টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার কারণে সরফরাজ নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। তিনি নিজেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের যুবদল নেতা বলে পরিচয় দিয়েছেন। বেলা ১টার দিকে নাজমুল ও আল আমিন নামের দুজনকে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে আটক করা হয়। আল আমিন নিজেকে গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নাজমুল বলেছেন, তিনি ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ভাইয়ের কাছে এসেছেন। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকেই তিনি নয়াপল্টন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। এই এলাকায় কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে তাঁরা তৎপর রয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে এই এলাকায় সন্দেহজনকভাবে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে তাঁরা তল্লাশি করছেন। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে। আজ পল্টনের ফকিরাপুল এলাকা থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করেন। মিছিলে ২০ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, মিছিল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক হওয়া ব্যক্তির নাম তিনি জানাননি। সাঁজোয়া যান নিয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকায় পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড। এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ সড়কেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলছে। দুপুর পর্যন্ত কাউকে কার্যালয়ে যেতে দেখা যায়নি। আগামীকাল শনিবার ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু এখনো সমাবেশের স্থান বুঝে পায়নি বিএনপি। সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২ হাজার ৯৭৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। চার মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮৫ জনকে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় আজ শুক্রবার কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করছে পুলিশ। কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিতেও দেখা গেছে।
ধাওয়া করে পথ আটকাতে গেলে র‍্যাবের গাড়িতে ধাক্কা দেয় মাদকবাহী পিকআপটি
থামার সংকেত পেয়েও না থামায় পিকআপটিকে ধাওয়া করেন তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত র‌্যাব সদস্যরা। ধাওয়া করে একপর্যায়ে পিকআপকে ওভারটেক করে র‌্যাবের মাইক্রোবাসটি। এরপর সামনে গিয়ে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে গতি রোধ করার চেষ্টা করলে পিকআপটি র‌্যাবের গাড়ির মাঝবরাবর ধাক্কা দেয়। এতে দুই দিকে দুটি গাড়ি ছিটকে গেলে তিনজন প্রাণ হারান। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাগুরা সদর উপজেলার সাঁইত্রিশ বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন র‍্যাবের দুই সদস্য করপোরাল আনিচুর রহমান (৩৫) ও কনস্টেবল ওমর ফারুক (৩৮) এবং পিকআপের চালক মো. আনোয়ার। দুর্ঘটনায় আহত র‍্যাব সদস্য নাজমুলকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। করপোরাল আনিচুরের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। কনস্টেবল ওমর ফারুকের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই। পিকআপচালক আনোয়ার শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কলমিচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকা মেট্রো ন ২১-৫১১০ নম্বরের পিকাপটি চালাচ্ছিলেন। র‍্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার এম নাজিউর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের চালান আসছে—এমন এক তথ্যের ভিত্তিতে ‍র‍্যাব-৬–এর একটি দল ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পের পাশে একটি জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসায়। সন্দেহভাজন একটি গাড়িকে তারা গতি রোধ করে। কিন্তু গাড়িটি না থামিয়ে মাগুরার দিকে ছুড়তে থাকে। পেছনে একটি র‍্যাবের মাইক্রোবাস পিকআপটিকে ধাওয়া করে। মাগুরার সাঁইত্রিশ এলাকায় পৌঁছলে, র‍্যাবের গাড়িটি ওই পিকআপের সামনে এসে রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে পথ আটকানোর চেষ্টা করে। এ সময় মাদকবাহী পিকআপ র‍্যাবের গাড়ির মাঝবরাবর আঘাত করে। এতে রাস্তার দুই পাশে ছিটকে যায় দুটি গাড়ি। ওই পিকআপ থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়েছে। মাদকের চালানটি ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাগুরা রামনগর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিহত ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ থেকে ৩৯১ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
থামার সংকেত পেয়েও না থামায় পিকআপটিকে ধাওয়া করেন তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত র‌্যাব সদস্যরা। ধাওয়া করে একপর্যায়ে পিকআপকে ওভারটেক করে র‌্যাবের মাইক্রোবাসটি। এরপর সামনে গিয়ে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে গতি রোধ করার চেষ্টা করলে পিকআপটি র‌্যাবের গাড়ির মাঝবরাবর ধাক্কা দেয়। এতে দুই দিকে দুটি গাড়ি ছিটকে গেলে তিনজন প্রাণ হারান।
বিদেশিদের পরামর্শ অনুসারে এ দেশে রাজনীতি হবে না: শেখ সেলিম
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এ দেশের জনগণই নির্ধারণ করবেন। বিদেশিদের পরামর্শ অনুসারে এ দেশে রাজনীতি হবে না। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে অভ্যর্থনা উপকমিটির প্রস্তুতি সভায় শেখ সেলিম এ কথা বলেন। শেখ সেলিম বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে এ দেশের সংবিধান অনুসারে। এর বাইরে নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের নাক না গলাতে অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রের কোনো ব্যাপারে বাংলাদেশ নাক গলায় না। বাইরের দেশে অনেক কিছু ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় অনেক গন্ডগোল হয়েছে। বাংলাদেশ নাক গলায়নি। শেখ সেলিম বলেন, ‘তারা (বিদেশি) একটা সাইডে মোটিভেটেড হয়ে আছে। ঘটনা ঘটার আগেই তারা একটা বিবৃতি দেয়।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ হলো, পুলিশের রক্ত ঝরল, টেলিভিশনে দেখা গেছে। সেটার বিষয়ে তাঁদের (বিদেশি) কোনো কথা নেই। তাঁদের বক্তব্য এমনভাবে এসেছে, মনে হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে একেবারে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শেখ সেলিম বলেন, তাঁদের (বিদেশি কূটনীতিক) দেশে মিটিং করতে হলে কী হয়? হোয়াইট হাউসের সামনে বসে গিয়ে কেউ মিটিং করতে পারেন? লন্ডনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়ে কেউ মিটিং করতে পারেন? সরকার তো বলেছে, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করুক। অভ্যর্থনা উপকমিটির প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এ দেশের জনগণই নির্ধারণ করবেন। বিদেশিদের পরামর্শ অনুসারে এ দেশে রাজনীতি হবে না।
চারজন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বাসচালক নূরুল ইসলাম, চার স্থানে তল্লাশি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকাল থেকে মহাসড়কের তিনটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো তল্লাশিচৌকিতে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চালক নূরুল ইসলাম। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার তল্লাশিচৌকি পার হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। নূরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আতঙ্কে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি, মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর, মেঘনা টোল প্লাজা ও মৌচাক—এই চার এলাকায় বাস থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকার তল্লাশিচৌকিতে দূরপাল্লার বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। সন্দেহভাজন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুর হোসেনের নেতৃত্বে আটজনের একটি দল সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে মহাসড়কের অন্য দিনের তুলনায় গাড়ি খুবই কম চলাচল করছে। এসআই মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কের গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। যেসব গাড়ি ঢাকা যাচ্ছে সেব গাড়িতে সন্দেহভাজন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতার উদ্দেশ্যে বোমা বা অন্য কিছু নিয়ে যেতে না পারে সে কারণে তারা এই তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। চাঁদপুরের মতলব থেকে জৈনপুর পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসচালক মোহসীন মিয়া জানান, বাসে অর্ধেক যাত্রীও নেই। পথে কয়েকটি স্থানে পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়েছেন। পুলিশ যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা কোথায় যাচ্ছেন? কেন যাচ্ছেন? তাদের সঙ্গে আর কেউ আছেন কি না? বাসের যাত্রী রুবেল হোসেন বলেন, যেভাবে পুলিশ জায়গায় গাড়ি আটকে তল্লাশি চালাচ্ছে ও জেরা করছে এতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুলিশ অনেক যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। রূপগঞ্জ ভুলতা-গুলিস্তান রুটের চলাচলকারী মেঘনা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এই বাসের চালক ইমরান হোসেন বলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কের কারণে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের সাইনবোর্ড এলাকায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের একটি দল তল্লাশিচৌকির দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সেখানে দায়িত্বরত ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তল্লাশি চালানো হলেও সন্দেহভাজন কিছু পাননি তাঁরা। এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পাগলায় চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আজ ভোর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপির আরও ১০ কর্মী–সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাই উ মারমা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, কেউ যাতে নাশকতার উদ্দেশ্যে কোন কিছু বহন করে নিয়ে যেতে না পারে এ কারণে নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চেকেপাস্টে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকাল থেকে মহাসড়কের তিনটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো তল্লাশিচৌকিতে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে।
মানিকগঞ্জে বিএনপির আরও ৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠনের আরও তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গত ১২ দিনে জেলায় বিএনপির অন্তত ৩৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বানচাল ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ ব্যবহার করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। এমন অবস্থায় অনেক নেতা–কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ ঢাকায় অবস্থান করছেন। অবশ্য পুলিশ বলছে, ১০ ডিসেম্বর নয়, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গতকাল রাতে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীরা হলেন সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মো. হুমায়ুন কবির, দিঘুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী মো. রেজা মিয়া ও সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী মো. রজ্জব আলী। সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে গত ২৯ নভেম্বর রাতে ২৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির প্রথম আলোকে বলেন, সামান্য একটা সমাবেশের ভয়ে আওয়ামী লীগ সরকার অস্থির হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনীতি বিশ্বাস করে না। তারা পুলিশকে ব্যবহার করে ‘কাল্পনিক মামলায়’ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি সঠিক নয়। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় বিস্ফোরণ ও নাশকতার ঘটনায় মামলা আছে। বিজয় দিবস, থার্টি ফাস্ট৴ নাইট ও জঙ্গিবিরোধী তৎপরতা চালাতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। মাসব্যাপী এই অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। কেউ আত্মগোপনে, কেউ ঢাকায় দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অনেকেই ঢাকা বা ঢাকার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরতাজ আলম বলেন, পুলিশ প্রতিদিন রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে কয়েক দিনে জেলার সাতটি উপজেলায় বিএনপির দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে বিস্ফোরণ ও নাশকতার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে নেতা-কর্মীরা যাতে যেতে না পারেন, সে জন্য এসব মামলায় তাঁদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দলীয় নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ছাড়া কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় দলের গণসমাবেশে উপস্থিত থাকতে আগেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সাতটি থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মামলা করে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এসব মামলা ১৪৪ জন বিএনপির নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠনের আরও তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গত ১২ দিনে জেলায় বিএনপির অন্তত ৩৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু, ক্লাস ১ ফেব্রুয়ারি
একাদশ শ্রেণিতে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হবে না। অনলাইনে হবে ভর্তির কাজ। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের গ্রহণের এই তারিখসহ অন্যান্য বিষয় ঠিক করা হয়। অনলাইনে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। ২৮ নভেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। বিপুল এই শিক্ষার্থীরা এখন উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির অপেক্ষায় আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে নীতিমালার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণসহ অন্যান্য বছরের শিক্ষার্থীরাও ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে। বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক তার সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। ভর্তির জন্য কোনো বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। শুধু শিক্ষার্থীর এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। যদি আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। মোট আসনের ৫ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি–নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। উপর্যুক্ত কোটায় যদি প্রার্থী না পাওয়া যায়, তবে এ আসন কার্যকরী থাকবে না। সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গ্রেড পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বর সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সালের গ্রেড পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বর সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে। স্কুল অ্যান্ড কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত যোগ্যতা সাপেক্ষে নিজ নিজ বিভাগে (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগে ভর্তি নিশ্চিত করেই শুধু অবশিষ্ট শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ভর্তিই অনলাইনেই হবে। সব কলেজ/উচ্চমাধ্যমিক/সমমানের প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয় তথা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ও সময় অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। কোনো প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয় ও বোর্ড নির্ধারিত তারিখের বাইরে নিজ ইচ্ছেমাফিক ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা সাপেক্ষে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি মাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি গ্রহণ করতে হবে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান কোনোক্রমেই উন্নয়ন ফি গ্রহণ করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি পাঁচ হাজার টাকা; মেট্রোপলিটনে (ঢাকা ছাড়া)  বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা; জেলায়  বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি দুই হাজার টাকা এবং উপজেলা/মফস্‌সলে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। নন এমপিও/আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি নিতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে ভর্তি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি ৮ হাজার ৫০০ টাকা; মেট্রোপলিটনে (ঢাকা ছাড়া) বাংলা ভার্সনে ভর্তি ফি পাঁচ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি ছয় হাজার টাকা; জেলায় বাংলা ভার্সনে ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি চার হাজার টাকা এবং উপজেলা/মফস্‌সলে বাংলা ভার্সনে ভর্তি ফি ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা। সরকারি কলেজগুলো সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি সংগ্রহ করবে। দরিদ্র, মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উল্লিখিত ফি যতদূর সম্ভব মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ (যারা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করবে, আবেদনের যোগ্য হলে তাদেরও এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে) ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর। আবেদন যাচাই–বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর। পুনঃনিরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ ও সবার পছন্দক্রম পরিবর্তনের সময় ২৬ ডিসেম্বর। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ৩১ ডিসেম্বর। শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন এবং আবেদন বাতিল হবে এবং তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে) ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল ও দ্বতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ১২ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন এবং আবেদন বাতিল হবে এবং তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে) ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ১৬ জানুয়ারি। পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ১৮ জানুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন (শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন না করলে তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচন এবং আবেদন বাতিল হবে) ১৯ ও ২০ জানুয়ারি। ভর্তিপ্রক্রিয়া ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি এবং ক্লাস শুরু হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিস্তারিত নীতিমালা এই লিংকে দেখা যাবে।
একাদশ শ্রেণিতে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হবে না। অনলাইনে হবে ভর্তির কাজ।
রায়পুরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হওয়ার ২০ দিন পর এক ব্যক্তির মৃত্যু
নরসিংদীর রায়পুরার শ্রীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ২০ দিন পর বাচ্চু হক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ১৮ দিন চিকিৎসা নিয়ে গত বুধবার উপজেলার চরসুবুদ্ধিতে এক স্বজনের বাড়ি ফেরেন বাচ্চু। বাড়ি ফেরার দুই দিনের মাথায় আজ শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। বাচ্চু হক রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে। এর আগে ঘটনার দিন একই গ্রামের মো. আজগর আলী (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। গত ১৯ নভেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে গজারিয়াকান্দি গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া টেঁটায় বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আজগর আলীর মৃত্যু হয় ও দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, গজারিয়াকান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ সক্রিয়। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান সদস্য খালেক মিয়া ও আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম। নিহত বাচ্চু ও আজগর দুজনই খালেক মিয়ার সমর্থক ছিলেন। পুলিশ ও দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জুলাই দুই পক্ষের সংঘর্ষে মফিজ উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি ছিলেন শাহ আলমের পক্ষের সমর্থক। এ ঘটনার পর থেকেই মামলা-হামলার ভয়ে খালেকের পক্ষের শতাধিক লোক গা ঢাকা দিয়েছিলেন। গত ১৯ নভেম্বর ভোরবেলা খালেকের অর্ধশতাধিক সমর্থক এলাকায় ঢুকতে গেলে শাহ আলম পক্ষের সমর্থকেরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন টেঁটাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের অন্তত ১২ জন টেঁটাবিদ্ধ হন। এ সময় ঘটনাস্থলেই আজগরের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বাচ্চুসহ অন্তত পাঁচজন। গত বুধবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে ফিরে উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নে বোনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। আজ ভোরে তিনি মারা যান। এ বিষয়ে জানতে আজ সকালে বর্তমান ইউপি সদস্য খালেক মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেন এই প্রতিবেদক। তবে দুজনের কেউই সাড়া না দেওয়ায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে শ্রীনগর ইউপির চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের ২০ দিন পর আজ টেঁটাবিদ্ধ বাচ্চু হকের মৃত্যু হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এই পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হলো। রায়পুরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, বাচ্চু হকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নরসিংদীর রায়পুরার শ্রীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ২০ দিন পর বাচ্চু হক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ১৮ দিন চিকিৎসা নিয়ে গত বুধবার উপজেলার চরসুবুদ্ধিতে এক স্বজনের বাড়ি ফেরেন বাচ্চু। বাড়ি ফেরার দুই দিনের মাথায় আজ শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
আবদুল্লাহপুরে বেড়েছে পুলিশ, চলছে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ
বিএনপির ডাকা গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুর মোড়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। মোড়ের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের মাথায় অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ পথচারীদের জিজ্ঞসাবাদ করছেন তাঁরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেন মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এখানে দুটি সড়ক ঘিরেই বসেছে তল্লাশি। আজ বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত দিনের তুলনায় বেড়েছে পুলিশের সংখ্যা। আবদুল্লাহপুর মোড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের মাথায় অবস্থান করছেন ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য। কোনো দূরপাল্লার বাস, মোটরসাইকেল বা কোনো পথচারীকে সন্দেহ হলেই তাঁরা গতিরোধ করে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এ সময় যাত্রীরা বিরক্ত হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা আতঙ্ক অনুভব করার কথা জানান। সাভারের আশুলিয়া থেকে ঢাকার মহাখালীর দিকে যাচ্ছিলেন আকরাম হোসেন (৪৫)। একটি বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার জন্য হাঁটছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা একটি বড় ব্যাগ থেকে গতিরোধ করে পুলিশ। পরে পুরো ব্যাগ তল্লাশি করে তাঁকে ছাড়া হয়। আকরাম বলছিলেন, ‘আমার ব্যাগে সব কাপড়চোপড়। আমি অনেকবার বলছি, তাও বিশ্বাস করে নাই। পরে নিজেরাই পুরা খুইল্যা দেখছে। কিন্তু কিছুই পায় নাই। অযথাই একটা হয়রানি করল।’ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাথায় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের দীর্ঘ লাইনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সাহস করছিলেন না ষাটোর্ধ্ব জুলেখা বেগম। যাত্রাপথে হঠাৎ এত পুলিশ দেখে কিছুটা স্তম্বিত তিনি। একপর্যায়ে মূল রাস্তা ছেড়ে কোনোরকম এক পাশ ধরে হেঁটে রাস্তাটুকু পার হন জুলেখা। মুল রাস্তা দিয়ে হাঁটলেন না কেন—এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে জুলেখার উত্তর, ‘এতগুলো পুলিশের সামনে দিয়া কি হাঁটা যায়। যদি তারা কিছু মনে করে, কোনো ভুল ধইর‍্যা বসে হেললাইগ্যা।’ ভয় পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ দেইখ্যা তো একটু ভয় করেই। তাও এতগুলো একসঙ্গে।’ তল্লাশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কোনো মোটরসাইকেল আসতে দেখলেই তাদের তল্লাশি শেষে নাম–ঠিকানা, এমনকি মুঠোফোন নম্বর খাতায় লিখে রাখতে দেখা যায়। পাশাপাশি বাসে প্রবেশ করে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চালকের নাম–ঠিকানা লিখে রাখতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তল্লাশির নেতৃত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের এডিসি (অপরাধ) বদরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আজ শুক্রবার ভোর থেকেই তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছি। আজ গত দিনের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বা কাউকে আটকও করা হয়নি।’মানুষের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কাউকেই হয়রানি করা হচ্ছে না। জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির ডাকা গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুর মোড়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। মোড়ের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের মাথায় অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ পথচারীদের জিজ্ঞসাবাদ করছেন তাঁরা।
‘আতঙ্কে’ মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে না, কমে গেছে বাস চলাচল
ঢাকায় বিএনপির ডাক দেওয়া গণসমাবেশের আগে রংপুর থেকে ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে এই রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে সৃষ্ট অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে জরুরি কাজ না থাকলে কেউ ঢাকামুখী হচ্ছেন না। আজ শুক্রবার সকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মডার্ন মোড়, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কের মাহিগঞ্জ সাতমাথা, দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-নীলফামারী মহাসড়কের মেডিকেল মোড়, নগরের কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কগুলোতে আন্তজেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু ঢাকাগামী বাসের সংখ্যা কমে গেছে। প্রতিটি কোম্পানি আগে এক ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়লেও এখন তিন ঘণ্টা পর পর ছাড়ছে। এতেও পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপকেরা। সকাল ১০টার দিকে মডার্ন মোড় এলাকায় রুহুল আমিন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের। তিনি গাজীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য আজ সকাল ৮টায় হানিফ পরিবহনের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন ৮টার গাড়িতে যাত্রী মাত্র দুজন, সে জন্য বাস যাবে না। তিন ঘণ্টা পর তিনটি বাসের যাত্রী একসঙ্গে নিয়ে যাবে। রুহুল আমিন বলেন, ‘তাতেও অসুবিধা নেই। একটু দেরিতে হলেও যাওয়া তো যাবে।’মডার্ন মোড় এলাকায় শরিফুল ইসলাম নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘অতি জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু এসে দেখি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করছি।’ এভাবে ঢাকাগামী সব কটি পরিবহনে যাত্রী কমে যাওয়ায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। টিকিট বিক্রির পর পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় ওই যাত্রীদের অন্য কোম্পানির বাসে তুলে দিচ্ছেন কেউ কেউ। হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক হোসেন আলী বলেন, ‘সকাল সাতটা থেকে হানিফ পরিবহনের এক ঘণ্টা পর পর বাস ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে। কিন্তু ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন থেকে যাত্রী একেবারে কমে গেছে। তাই যাত্রীদের সংখ্যার ওপর নির্ভর করছে বাস চলাচল। এক ঘণ্টা পর পর বাস থাকলেও এখন তিন ঘণ্টা পর পর বাস চলাচল করছে। তবুও যাত্রী কম।’ রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন থেকে ঢাকার বাসে যাত্রী একদম থাকছে না। মালিকদের লোকসান হচ্ছে। তার ওপর আগামীকাল ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। পথে পথে ভোগান্তি তো আছেই। যাত্রী কমে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণের কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির এই সমাবেশের আগে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে এই যে কয়েক দিন ধরে বলা ‘খেলা হবে’, ‘খেলা হবে’ এতে করে জনমনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ জন্য খুব জরুরি না হলে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন না। অন্যদিকে পুলিশের ভূমিকাও বেশ নেতিবাচক। মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে সাধারণ যাত্রীদের যেভাবে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে, তাতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এসব এড়াতেই মানুষ এখন ঢাকার দিকে কম যাচ্ছে।’
ঢাকায় বিএনপির ডাক দেওয়া গণসমাবেশের আগে রংপুর থেকে ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে এই রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা।
এক পাশে এত পাস, অন্য পাশে কেন লাশ
গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মাধ্যমিকের ফলাফল অ্যালান করার আগের দিন থেকেই মিষ্টির দোকানগুলোতে সাজসাজ রব পড়ে যায়। ছোট-বড় বাহারি মোড়কে নানা পদের মিষ্টান্নের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পাসের সুখবরে চারদিকে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। স্বজন-পরিচিতদের মিষ্টিমুখ করাতে হবে। খদ্দরে ভরে যায় মিষ্টির দোকান। গত বছরের তুলনায় মোট পাসের হার কমে গেলেও এবার জিপিএ-৫-এ রেকর্ড হয়েছে। এসএসসি ও সমমানে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী ফলাফলে সর্বোচ্চ এই সূচক পেয়েছে। মোট উত্তীর্ণের সংখ্যায় এই হার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত বছর বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত সিলেবাসে সীমিত বিষয়ে পরীক্ষা হলেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার এই সূচক পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ২৬২ বেশি। পরীক্ষায় এই ভালো ফলাফলে পরিবারের পক্ষ থেকে মিষ্টি বিতরণের পাশাপাশি অনেকে সন্তানের খুশির এই বারতা পোস্ট করে ফেসবুকে। তাদের ফেসবুক দেয়াল ভরে উঠতে থাকে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছার বার্তায়। ‘আমার মেয়ে, আমার ছেলে, আমার অমুক জিপিএ-৫ পেয়েছে’; কেউ লিখেছেন ‘গোল্ডেন জিপিএ’ পেয়েছে। একজন মন্তব্য ঘরে লেখেন, ‘ওই নামে (গোল্ডেন জিপিএ) কিছু নেই।’ কেউ কেউ প্রতিবাদ করে ওঠেন, ‘অবশ্যই আছে।’ গোল্ডেন জিপিএ আছে–নেই, এ বিতর্ক ভালো প্রচার পায়। কেউ কেউ বলে বসেন, ‘কারও সন্তান “গোল্ডেন জিপিএ” না পেলে তারা নাই নাই বলে চিক্কুর মারে। আসলে এটা আছে। এই মন্তব্যের পক্ষে–বিপক্ষে মন্তব্যের স্রোত বইতে থাকে। ফেসবুক ছাপিয়ে এই ‘গোল্ডেন জিপিএ’ বিতর্ক টক শোতে চেয়ার পেয়ে যায়। সুরাহাপন্থীরা ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যান শিক্ষা বোর্ডের প্রধানদের দ্বারে। তাঁদের একজন বলেন, ‘গোল্ডেন জিপিএ’ নামে কোনো সূচক নেই। আসলে লোকমুখে ছড়াতে ছড়াতে এটাই একটা সূচকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে, জিপিএ-৫ হচ্ছে সর্বোচ্চ সূচক। এটাই সবচেয়ে ভালো ফল।’ এই তর্কবিতর্কের ডামাডোলের মধ্যে একে একে ঝরতে থাকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ বা অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের প্রাণ। কেউ কেউ ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেউ এক দিন, কেউ দুই দিন অপেক্ষা করে। এদের কারও বয়স ১৫, কারও ১৬, কারও ১৭। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের শারমিন সুলতানা (দক্ষিণ শ্রীপুর কুশলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ), সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের ফাহিমা বেগম (বীরমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়), নীলফামারীর জলঢাকার মেয়ে ভারতী রানী রায় (উত্তর দেশীবাই উচ্চবিদ্যালয়), নরসিংদীর রায়পুরার সাদিয়া (জে এম উচ্চবিদ্যালয়), টাঙ্গাইল ঘাটাইলের মারুফ (গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা উচ্চবিদ্যালয়), ফেনীর পরশুরামের বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দিপু দাস প্রমুখের দুঃখজনক মৃত্যুর খবর ফলাফল প্রকাশের এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরই শেষ খবর নয়। সব খবর তো আর গণমাধ্যমের প্রচারে আসে না। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যারা ব্যর্থ হয়, তাদের কথা সচরাচর গণমাধ্যমে আসে না। লোক জানাজানি না করার একটা চেষ্টা থাকে সব পক্ষের। ঘটনা লুকাতে গিয়ে তাদের মানসিক সংকটটাই অস্বীকার করা হয়। তাদের চিকিৎসার বিষয়টিও সামনে আসে না। সুইসাইড অ্যাওয়ারনেস ভয়েসেস অব এডুকেশন (সেভ) তাদের সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করা প্রতি ২৫ জনের মধ্যে মাত্র একজন সফল হয়। আর সেটার খবরই হয় তো কেবল আমরা জানতে পারি। বেঁচে যাওয়া ২৪ জনের কথা আমরা জানতে পারি না। তাদের যদি চিকিৎসার আওতায় নেওয়া না যায়, তবে তারা আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয়বার আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মধ্যে সাফল্যের হার অনেক বেশি। প্রকাশিত খবর আর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সূত্রে যতটুকু জানা যায়, তাতে মনে হয় না খারাপ ফলাফলের জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করা বা আত্মহত্যাকারীদের কেউ তথাকথিত ‘খারাপ শিক্ষার্থী’ ছিল। বারবার ফেল করত, এমন কেউ নেই। স্কুলের কোনো ক্লাসেই তাদের ফেল বা ব্যর্থ হওয়ার রেকর্ড ছিল না। কোভিডকালের ফাঁকটুকু ছাড়া তাদের শিক্ষাজীবনে কোনো ফাঁকফোকর ছিল না। অনেকেই শুধু একটা বিষয়েই ‘খারাপ’ করেছে, বাকিগুলোতে ‘এ প্লাস’, ‘এ’ বা ‘এ মাইনাস’ পেয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ নিতে পারে না। তারা যে আসলেই খারাপ করেছে, সেটা জানার কোনো সহজ পথ নেই। যন্ত্রের ভুল, পরীক্ষকের অসাবধানতা—কত–কী ঘটতে পারে। শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সেসবের পাত্তা লাগানো চাট্টিখানি কথা নয়। শারমিন, ফাহিমা, পূর্ণিমা ভারতী, দিপু দাস, মারুফদের নাগালের বাইরে সেসব। শিক্ষাজীবনের মাঝপথে একবার ছন্দপতন মানে সারা জীবনের ছন্দপতন। ছন্দে ফিরে আনার মতো কোনো ব্যক্তির ছায়া তাদের নজরে আসে না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৭ বছর বয়সী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সর্বোজিত ঘোষের আত্মহত্যার খবর আমরা জেনেছিলাম। পরীক্ষার ফলাফলে তাকে এক বিষয়ে ফেল দেখানো হয়। ভুলভাবে প্রকাশিত এই ব্যর্থতার খবরে ব্যর্থ মনোরথ কিশোর সর্বোজিত সেদিনই তার বাড়ির কাছাকাছি নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু পুনর্নিরীক্ষণের পর সংশোধিত ফলাফলে দেখা যায়, সর্বোজিত ঘোষ কোনো বিষয়েই ফেল করেনি। সে জিপিএ–৪.৬৭ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বোজিত আর কখনো ফিরে আসবে না। ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কি একটু সাবধান হবেন? কারণ, তাঁদের একটি ভুল সর্বোজিতের মতো নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা কিশোরের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। শিক্ষা বোর্ডের কর্তাদের কাছেও প্রশ্ন, তাঁরা পুনর্নিরীক্ষণের প্রক্রিয়াটা সহজ আর নাগালের মধ্যে রাখবেন? সন্তানের খারাপ ফলাফল হলে অনেক সময় মা-বাবারাও ঠিকমতো এগিয়ে আসেন না। রাজধানীর একটা নামকরা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে করিম, ভবিষ্যতে মাধ্যমিক দেবে। মা-বাবা দুজনই সমাজের নামীদামি ব্যক্তিত্ব, তাঁদের কাউকে সালাম দিতে হয় না। করিম মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় উতরাতে পারেনি। এক বিষয়ে ফেল। করিম কখনো এমন ফলাফলের মুখোমুখি হয়নি। তারও মন খারাপ, ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। খারাপ ফলের জন্য তাকে বকাবকির চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করেন অভিভাবকেরা। করিম আর দরজা খোলে না, খায় না। মায়ের এক বান্ধবী এসে শেষ পর্যন্ত পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করাতে রাজি করান মাকে। ছেলের জন্য অনেক ‘ছোট’ হতে হয় তাঁকে। তবু ভাগ্য ভালো বলতে হবে, শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। প্রথমে করিমের খাতা মনে করে যেটা দেখা হয়েছিল, সেটা আসলে তার নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তার খাতার হদিস মেলে। সে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছে। আগামী বছর সে মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসবে। অভিভাবকেরা, বিশেষ করে মা–বাবা একটু চেষ্টা করলে, সন্তানদের একটু পাশে দাঁড়ালে অনেক প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। ওপরে যে ছয়জনের কথা বলা হয়েছে, ফল প্রকাশের পর তাদের মধ্যে অন্তত দুজন চরম হতাশা নিয়ে বাড়িতে ফিরে দেখেন, মা–বাবা অন্য আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছেন। অভিভাবকদের বোঝা উচিত, মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার দিনটি একজন কিশোর–কিশোরীর জীবনের একটা বিশেষ দিন। তাই এই দিনটিতে মা–বাবার তার পাশে থাকাটা খুব জরুরি। না থাকাটা অবহেলার শামিল। এমন অবহেলা সহ্য করা সহজ নয়। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ১০-১৯ বছর বয়সী প্রতি সাত কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজনের বেশি মানসিক সংকট নিয়ে জীবনযাপন করছে। প্রতিবছর প্রায় ৪৬ হাজার কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করে। ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর–কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান পাঁচটি কারণের একটি হচ্ছে আত্মহত্যা। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী অবহেলা, কটূক্তি, পারিবারিক সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়—তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আমাদের দেশে পরীক্ষায় খারাপ করা শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবক, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন, এমনকি ‘সফল’ সহপাঠী বন্ধুবান্ধবের নীরব-সরব অবহেলা, কটূক্তি, সহিংসতা ও নিপীড়নের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। ফেসবুকের অতি আস্ফালনমূলক স্ট্যাটাসও অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একটা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি হয়। তবে সেটা চলে সারা বছরই। চলতি বছর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৬৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৯৪ জনই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, যা মোট আত্মহত্যার ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। সমীক্ষার ফলাফল বলছে, এই আট মাসের প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। শীর্ষে ছিল ঢাকা বিভাগ। এই সময়ে ঢাকায় ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তবে ঢাকার জনসংখ্যা আর গণমাধ্যমে সংবাদ আসার সুযোগ এই হার বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। সমীক্ষায় দেখা যায়, মেয়েশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২১ জন বা ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশই ছাত্রী। আর ছেলেশিক্ষার্থী ১৪৩ বা ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। এবার মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় যে ছয়জনের আত্মহত্যা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও চারজন মেয়ে। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় সূচক পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ওই বছর সারা দেশে জিপিএ-৫ পায় ৭৬ শিক্ষার্থী। এবার পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এটা নিশ্চয় একটা দৃশ্যমান অর্জন। তবে এবার পাসের হারে ঘাটতি ছিল। কেউ একজন যেন বলেছেন, সব ঘাটতি সংকট নয়। কিন্তু এটা যে কিছু একটার সংকেত দেয়, সেটা কি ভুল? এবার মাধ্যমিক পাস করেছে মোট পরীক্ষার্থীর ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কোনো পাস নেই—এবার এমন স্কুলের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছর ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। এবার ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি। গত বছরের চেয়ে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৩২টি। শিক্ষার মান বাড়ুক, কমুক শিক্ষার্থীদের হতাশার হার। গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক ই–মেইল: [email protected]
গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মাধ্যমিকের ফলাফল অ্যালান করার আগের দিন থেকেই মিষ্টির দোকানগুলোতে সাজসাজ রব পড়ে যায়। ছোট-বড় বাহারি মোড়কে নানা পদের মিষ্টান্নের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পাসের সুখবরে চারদিকে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
‘ওই দিন এলাকাতেই ছিলাম না আমি’
‘আমি এই প্রথম মামলা খেলাম। যেদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা দেওয়া হয়েছে, ওই দিন এলাকাতেই ছিলাম না আমি’, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী। উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বললেন, ‘মামলা হওয়ায় এখন এলাকায় যেতে পারছি না।’ গত ২৯ নভেম্বর উল্লাপাড়া থানায় পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন বিএনপির ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলার আসামি মোহাম্মদ আলী। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাটি করেন পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুর রব। পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ খবর পেয়ে ওই রাত বাড়ির পাশে বাগানে কাটান। পরদিন সকালে রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে বাড়ি ছাড়েন। এরপর আর বাড়িতে ফিরে যাননি। গতকাল তিনিও আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে এসেছিলেন। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে তাঁর সঙ্গে মামলার আসামি আরও ১৫-১৬ জনকে দেখা যায়। আবদুল আজিজ বলেন, ‘এটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা হলো। বিএনপির রাজনীতি করায় এত মামলা।’ তিনি জানান, গত রোববার তাঁরা আবেদন করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত শুনানি হয়নি। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদসহ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরই মধ্যে দেশের সব বিভাগীয় শহরে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সমাবেশ করেছে দলটি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। বিএনপির দাবি, তাদের চলমান এই কর্মসূচির মধ্যে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলা সচল হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলা ‘গায়েবি’। এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে ভিড় করছেন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য আবুল কাশেমও গতকাল হাইকোর্টে এসেছিলেন আগাম জামিনের জন্য। সম্প্রতি থানা-পুলিশের করা একটি নাশকতা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট ছেলেটা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওর মায়ে ওকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। বাড়িতে থাকতে পারলে আমি নিয়ে যেতাম। আমি বাড়িতে থাকলে বাচ্চাটার মনও ভালো থাকত।’ গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে আবুল কাশেম বলেন, ‘এলাকা ছাড়ব না তো কী করব? প্রতিদিন বাড়িতে পুলিশ যায়।’ গতকাল আবুল কাশেমের সঙ্গে ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির আরও সাত–আটজন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বসে ছিলেন। তাঁরা সবাই একই মামলার আসামি। তাঁরা জানান, নাশকতার অভিযোগে ৩ ডিসেম্বর বিএনপির ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করে ধনবাড়ী থানা–পুলিশ মামলাটি করেছে। মামলায় এরই মধ্যে দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলায় নাম না থাকলেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ধনবাড়ী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. লাবলু সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় নাম না থাকলেও বাড়িতে পুলিশ যায়। দুই রাত ধানখেতের খড়ের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। তারপর ঢাকায় পালিয়ে আসি।’ নাশকতার মামলা হলেও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ধনবাড়ীর বিএনপির কর্মী মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘মামলা দেওয়া লাগবে, তাই দিয়েছে পুলিশ। সারা দেশেই পুলিশ মামলা দিচ্ছে, আমাদেরকেও দিয়েছে। যেন আমরা বিএনপির সভা–সমাবেশে না যাই।’
‘আমি এই প্রথম মামলা খেলাম। যেদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা দেওয়া হয়েছে, ওই দিন এলাকাতেই ছিলাম না আমি’, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী।
তল্লাশির নামে মুঠোফোন পরীক্ষা কি আইনসংগত
আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশ বেড়ে গেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে গত বুধবার থেকে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব জায়গায় পুলিশ সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ সময় কারও কারও মুঠোফোন পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে কী ধরনের ছবি ও বার্তা আছে—পুলিশকে সেগুলো যাচাই করতে দেখা গেছে। এভাবে বাছবিচারহীন তল্লাশি ও মুঠোফোন পরীক্ষা আইনসংগত কি না, এখন সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত বুধবার দুপুরে টঙ্গী সেতু হয়ে ছেলে মো. অনিককে (১৫) নিয়ে মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর মিরপুরে যাচ্ছিলেন মো. পলাশ। সেতুর সামনে আসতেই তাঁদের থামায় পুলিশ। প্রথমে দুজনের দেহ তল্লাশি করা হয়। পরে ব্যাগ তল্লাশি ও মুঠোফোনের ছবি ও বার্তা যাচাই করে দেখা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের আটক করলে কাকুতিমিনতি করে ছাড়া পান তাঁরা। পলাশ বলেন, ‘আমি সাধারণ শ্রমিক। কোনো দলের রাজনীতি করি না। তারপরও পুলিশ আমাদের এভাবে হয়রানি করল।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ৭ ডিসেম্বর)। পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের তল্লাশিকে নিয়মিত কাজের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পুলিশ তল্লাশি চালাতেই পারে। তবে তাদের কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। গত বুধবার তারা যেভাবে তল্লাশি চালিয়েছে, তাতে এসব শর্ত মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলাফেরার অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশ তল্লাশির নামে এই অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে না। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করতে হলে যুক্তিসংগত সন্দেহ থাকতে হয়। এর অর্থ, বাছবিচারহীন তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা পুলিশের নেই। এটা উচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থী।’ কেউ কেউ অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের পথ আটকে দেহ তল্লাশি ছাড়াও মুঠোফোনের ছবি ও বার্তা ঘাঁটাঘাঁটি করেছে। এটা ছিল তাঁদের জন্য চরম বিব্রতকর ও হয়রানির বিষয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনে মানুষের ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, তথ্য বা ছবি থাকতে পারে। তল্লাশির সময় পুলিশ সেগুলো দেখতে পারে না। এটা ব্যক্তির গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ন করেছে। গোপনীয়তা ব্যক্তির সংবিধানস্বীকৃত একটি অধিকার। তাই পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংবিধান ও আইনসংগত নয়। ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ গত দুই দিনে কতজনকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছে, সেই তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এ ধরনের তল্লাশি সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক ভোগান্তি ও হয়রানির কারণ হচ্ছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও পুলিশ এমন বাছবিচারহীন দেহ তল্লাশি এবং মুঠোফোন পরীক্ষা করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে। মানুষ আশা করে, আইনসংগত নয় এবং মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানির কারণ হবে, এমন কর্মকাণ্ড থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরত থাকা উচিত।
আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশ বেড়ে গেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে গত বুধবার থেকে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব জায়গায় পুলিশ সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ সময় কারও কারও মুঠোফোন পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে কী ধরনের ছবি ও বার্তা আছে—পুলিশকে সেগুলো যাচাই করতে দেখা গেছে। এভাবে বাছবিচারহীন তল্লাশি ও মুঠোফোন পরীক্ষা আইনসংগত কি না, এখন সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল কম, মির্জাপুরে পুলিশি তল্লাশি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে হঠাৎ করে যান চলাচল কমে গেছে। বিশেষ করে, অন্যান্য দিনের তুলনায় ঢাকামুখী সড়কে যাত্রীবাহী গণপরিবহন চলাচল কম। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কের মির্জাপুর অংশের অন্তত ছয়টি পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে মির্জাপুরের দেওহাটায় পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে মহাসড়কের মির্জাপুর অংশের আর কোনো জায়গায় পুলিশের তল্লাশির খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের দাবি, নিয়মিত দায়িত্বের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে দেওহাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের জেলা ও মির্জাপুরের হাইওয়ে পুলিশ সেখানে যৌথভাবে তল্লাশিচৌকির সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। যানবাহনের গতি রোধ করতে সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে ওই সাইনবোর্ড রাখা হয়েছে। ঢাকামুখী বাস এলেই পুলিশ তা তল্লাশি করছে। তবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলসহ উত্তরাঞ্চলের দিকে কোনো বাসকে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। ওই তল্লাশিচৌকিতে আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন এই প্রতিবেদক। এ সময়ের মধ্যে হানিফ পরিবহনের জামালপুর থেকে ঢাকাগামী একটি বাস ও পাবনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি বাস তল্লাশিচৌকি পার হয়ে যায়। এর মধ্যে পাবনা থেকে আসা বাসটি থামিয়ে তল্লাশি করে পুলিশ। ওই বাসের যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করেন পুলিশের সদস্যরা। এ সময় বাসের চালক ও চালকের সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। বেলা ১১টার দিকে ১০ পুলিশ সদস্যকে ওই চেকপোস্টে অবস্থান করতে দেখা যায়। তল্লাশির ব্যাপারে জানতে চাইল মির্জাপুর ট্রাফিক পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ বলেন, মহাসড়কে নিয়মিত দায়িত্বের অংশ হিসেবে পুলিশ তল্লাশি করছে। তবে অন্য দিনের চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা কম বলে জানান তিনি। এর আগে সকাল থেকে মহাসড়কের মির্জাপুর পাকুল্যা, শুভুল্যা, কুর্ণী, মির্জাপুর ও ধেরুয়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কম। মহাসড়কের নিয়মিত যাতায়াতকারী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য সপ্তাহের শুক্রবার সকালে প্রতি মিনিটে ওই সড়কের উভয় দিকে ১২ থেকে ১৫টি যান চলাচল করতে দেখা যায়। তবে আজ সড়কের উভয় দিকে প্রতি মিনিটে তিন-চারটি যানও দেখা যাচ্ছে না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কারণে সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীসংখ্যা কমেছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানী এলাকার রিকশাচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন,  ‘গাড়ি খুব কম আইজকা। গাড়ি দেখাই যায় না। বাস, মোটরসাইকেল, পিকআপ—সবই কম কম চলতেছে। কালক্যা মনে হয় সমাবেশ হইব। এই লাইগা গাড়িঘোড়া কমতে পারে।’
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে হঠাৎ করে যান চলাচল কমে গেছে। বিশেষ করে, অন্যান্য দিনের তুলনায় ঢাকামুখী সড়কে যাত্রীবাহী গণপরিবহন চলাচল কম। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কের মির্জাপুর অংশের অন্তত ছয়টি পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
সমাবেশ করতে হলে বিএনপিকে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠেই করতে হবে
সমাবেশ করতে হলে বিএনপিকে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠেই করতে হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের সামনে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ডিবি কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। হারুন অর রশীদ বলেন, সমাবেশস্থল নিয়ে বিএনপিকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম সমাবেশের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের দীর্ঘ আলোচনার পর রাজধানীর নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিএনপির গণসমাবেশের জন্য আলোচনায় আসে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ।  দুই পক্ষ এই জায়গায় পৌঁছায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। বিএনপির সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে গতকালের আলোচনায়ও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয়। বিকল্প হিসেবে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ, মিরপুরের কালশীর কথাও আসে। বিএনপির নেতারা প্রথমে নয়াপল্টন, এরপর আরামবাগ, সেন্ট্রাল মডেল স্কুল মাঠ, জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের অনুমতি চায়। দুই পক্ষের আলোচনার একপর্যায়ে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠের কথাও আসে। এ পর্যায়ে উভয় পক্ষ কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের বিষয়ে একমত হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, কমলাপুর স্টেডিয়াম তাঁদের প্রথম পছন্দ, তবে আজ ডিবির প্রধান কমলাপুর স্টেডিয়াম সমাবেশের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানান।
সমাবেশ করতে হলে বিএনপিকে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠেই করতে হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বইয়ে পড়া ষাটগম্বুজ মসজিদ ছুঁয়ে অনুভব করলেন দৃষ্টিশক্তিহীন সাইফুল, পাশে ছিলেন বন্ধুরা
‘ষাটগম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে স্কুলে পড়ার সময় প্রথম জেনেছি। একটা গল্পে পড়েছিলাম খানজাহান আলী (র.) সম্পর্কে। তারপর ইতিহাসে পড়েছি। এখন সেই সব স্থাপনা-কীর্তির সামনে আমি। স্পর্শ করে দেখছি, অনুভব করছি, সামনাসামনি অবগত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখানে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি সব বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে এই ট্যুরের অংশ হতে পেরেছি।’ কথাগুলো বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তিহীন মো. সাইফুল ইসলাম। এক অসুখে জন্মের মাত্র দুই বছর বয়সেই দৃষ্টিশক্তি হারান সাইফুল। এর পর থেকে চলাফেরাসহ অন্য সব কাজে কারও না কারও সাহায্য নিতে হয়। সেই সাইফুল ৫ ডিসেম্বর ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের একজন হিসেবে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটে যান। সাইফুলসহ বিভাগটির ৭২ জন খুলনা, বাগেরহাট এবং সুন্দরবনের করমজল ঘুরে ৬ ডিসেম্বর ফেরেন জাহাঙ্গীরনগরে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘুরতে তাঁর বরাবরই ভালো লাগে। তবে সে সুযোগ সব সময় পাওয়া যায় না। যেহেতু চোখে দেখতে পান না, তাই একটা প্রতিবন্ধকতা সব সময়ই থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বন্ধুরা তাঁকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। বন্ধুদের সঙ্গে এর আগে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনও গিয়েছিলেন সাইফুল। তিনি বলেন, ‘আমি তো আসলে চোখ দিয়ে দেখতে পারি না। এটি বুঝতে পেরে ষাটগম্বুজ মসজিদের এক কর্মকর্তা আমাকে স্পর্শ করিয়ে দেখার সুযোগ করে দেন। আমি আঙুলের স্পর্শে ছুঁয়ে দেখেছি, অনুভব করেছি। এতে আমার বুঝতে সহজ হয়েছে।’ বন্ধুদের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়ে সাইফুল বলেন, ‘আমার বন্ধুরা সবাই অনেক আন্তরিক। তারা হাত ধরে আমাকে প্রতিটি জায়গায় নিয়ে গেছে। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর মাজার, ওই আমলের প্রাচীন রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং সুন্দরবনের করমজল ও খুলনার গণহত্যার যে যে জায়গায় আমরা গিয়েছি, তারা আমাকে ধরে ধরে নিয়ে গেছে। গাড়িতে ওঠানামা, হাঁটাচলাসহ প্রতিটি কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছে।’ সাইফুলের বন্ধু মো. মামুন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম দিন সাইফুলের সঙ্গে পরিচয়ে অবাক হয়েছি। চোখ দিয়ে দেখতে না পারলেও সে মেধাতালিকায় ৩০তম হয়েছিল। ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ বলে সে এই বিভাগে ভর্তি হয়। ভর্তির কিছুদিন পর আমরা ভালো বন্ধু হয়ে যাই। আমরা ৪-৫ জন সব সময় চেষ্টা করি ওকে সহযোগিতা করতে। কখনো বুঝতে দিই না, ও যে চোখে দেখতে পায় না।’ সহপাঠীরা কখনোই সাইফুলকে নিজেদের থেকে আলাদা করে দেখেন না উল্লেখ করে তাঁর আরেক বন্ধু রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা কখনো প্রতিবন্ধকতার জন্য সাইফুলকে আলাদা হতে দিই না। ও যেহেতু দেখে পড়তে পারে না, সে জন্য আমরা পড়ে শোনালে ও বিষয়গুলো মুখস্থ করে নেয়। দেখা যাচ্ছে দুই–তিনজন আছে ওরা নিয়মিত হল থেকে ওকে ক্লাসে নিয়ে আসে। প্রথম দিকে ও দৃষ্টিহীনদের ব্যবহৃত ছড়ি নিয়ে চলাফেরা করত। তবে এখন আর ক্যাম্পাসে সাইফুলের ছড়ি লাগে না। আমরা বন্ধুরাই এখন ওর ছড়ি।’ শিক্ষার্থীদের এই ট্যুর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি ৫০ নম্বরের একটি পরীক্ষার অংশ। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এই ভ্রমণের ওপর প্রতিবেদন দিতে হবে। আমরা সব সময় চেয়েছি সাইফুল ট্যুরে যাবে, অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরেজমিন সবটা অনুভব করবে। তাঁকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়াসহ সবকিছুই বন্ধুরা স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনকি এই ভ্রমণেও সাইফুল সাদা ছড়ি ব্যবহার করেনি। পুরো ভ্রমণে বন্ধুরাই ওর ছড়ি হয়ে ছিল।
‘ষাটগম্বুজ মসজিদ সম্পর্কে স্কুলে পড়ার সময় প্রথম জেনেছি। একটা গল্পে পড়েছিলাম খানজাহান আলী (র.) সম্পর্কে। তারপর ইতিহাসে পড়েছি। এখন সেই সব স্থাপনা-কীর্তির সামনে আমি। স্পর্শ করে দেখছি, অনুভব করছি, সামনাসামনি অবগত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখানে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি সব বন্ধু এবং শিক্ষকদের সঙ্গে এই ট্যুরের অংশ হতে পেরেছি।’
মধ্যরাতে ঝিনাইদহে আ.লীগের কার্যালয়ের পেছনে ককটেল বিস্ফোরণ
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের পেছনে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কার্যালয়ের পেছনের দিকে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পরপর চারবার ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর কার্যালয়ের পূর্ব দিকের একটি খোলা জায়গা থেকে পাঁচটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সোহেল রানা প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোহেল রানা বলেন, গতকাল রাতে বিকট শব্দ শুনে রাতে পুলিশের একটি দল আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এলাকায় আসে। সেখানে এসে পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান, কার্যালয়ের পেছনের দিকে (উত্তর পাশে) চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। ওই স্থানের পাশ থেকেই আরও পাঁচটি ককটেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দাবি, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অংশ হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। শহরের দেবদারু অ্যাভিনিউ মূল সড়ক থেকে ৩০ গজ ভেতরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পেছনের দিকে যেখানে ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে, সেই জায়গা মূলত পরিত্যক্ত। সেখানে মানুষের চলাচল নেই। কার্যালয় থেকে প্রায় ২০০ গজের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর থানা। গতকাল রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ককটেল বিস্ফোরণের সময় রাতে কার্যালয়ে দলের কোনো নেতা–কর্মীরা ছিলেন না। তবে আজ সকাল থেকে দলটির নেতারা ঘটনাস্থল দেখতে আসছেন। ঘটনাস্থলে কথা হয় জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তিনি এসেছেন। দলের কার্যালয়ে পেছনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে এবং এর আলামত আছে বলে তিনি দাবি করেন। স্থানীয় চা–দোকানি ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী লিয়াকত হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। রাতে কী ঘটেছে, সেটা তিনি জানেন না। সকালে এসে জানতে পান যে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল হামলা করা হলো, এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ পৃথকভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ১০ তারিখের সমাবেশকে ঘিরে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে সাইদুল করিম বলেন, ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে। নাশকতা করে, জ্বালাও-পোড়াও করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলন যখন দানা বেঁধে উঠেছে, দেশের জনগণ যখন ফুঁসে উঠেছে , তখন সরকারি দল আর পুলিশ আন্দোলন দমাতে মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছে। তারা নিজেরা নিজেদের কার্যালয়ে বোমা ফাটিয়ে, বোমা রেখে বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। এটা শুধু ঝিনাইদহে নয়, সারা দেশে করা হচ্ছে। পুলিশ জনগণের পয়সায় বেতন নেয়, অথচ একটা দলের হয়ে জনগণের বিপক্ষে কাজ করছে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের পেছনে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কার্যালয়ের পেছনের দিকে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পরপর চারবার ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর কার্যালয়ের পূর্ব দিকের একটি খোলা জায়গা থেকে পাঁচটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
পিআইসি হয়নি, এবারও শঙ্কা
গত এপ্রিলের অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘোষণা দেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া অক্টোবরে শুরু হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা। এখনো তার কিছুই হয়নি। ফলে এবারও হাওরে বাঁধের কাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো অনেক হাওরে পানি রয়েছে। এ অবস্থায় ১২টি উপজেলায় ২৭টি দল জরিপকাজ করছে। কাজ প্রায় শেষ। এখন যেখানে সম্ভব সেখানে পিআইসি গঠন করে নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হবে। সংকটকালে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তারা যেসব কথা বলেন, সংকট কেটে গেলে সেটি তাঁরা ভুলে যান বলে অভিযোগ করেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতারা। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। এবারও শুরুতে যা দেখছি, কাজে চ্যালেঞ্জ আছে। এক মাস চলে গেছে, এখনো পিআইসি হয়নি। তাহলে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হবে কীভাবে?’ বিজন সেন মনে করেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হলেও সেটা হবে লোকদেখানো। সব প্রকল্পে যথাসময়ে কাজ শুরু এবং নির্ধারিত সময়ে শেষ করা গেলে ফসল ঝুঁকিতে পড়বে না। ■ গত ১০ নভেম্বর থেকে জেলার ১২টি উপজেলায় ২৭টি দল জরিপকাজ করছে। ■ কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পাঁচ থেকে সাত সদস্যের পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের নির্মাণ করা হয়। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। নভেম্বর মাসে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা। কাজ শেষের সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কখনোই সময়মতো কাজ শেষ হয় না। সুনামগঞ্জে পাউবো ৪৬টি ছোট–বড় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। পাউবো সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-২) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, অনেক স্থানে ইচ্ছা করলেও এখন কাজ শুরু করা যাবে না। হাওরে পানি আছে। তাই যেসব স্থান শুকিয়েছে, মাটি পাওয়া যাবে, কাজ করা সম্ভব সেখানে নির্ধারিত সময়েই কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো জেলার বিভিন্ন হাওরে বাঁধ নির্মাণের জরিপকাজ চলছে। কোথাও প্রকল্প নির্ধারণ বা পিআইসি গঠন করা হয়নি। শাল্লা উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল কাইউম বলেন, তাঁর উপজেলায় এখানো কোনো পিআইসি গঠিত হয়নি। এই উপজেলায় ছয়টি বড় হাওরের মধ্যে দুটিতে এখনো অনেক পানি। জরিপকাজ প্রায় শেষ, এখন প্রকল্প নির্ধারণ করে পিআইসি গঠনের পর কাজ শুরুর পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। দিরাই উপজেলার দায়িত্ব থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম আবদুল মোনায়েম জানান, তাঁর উপজেলার পিআইসি গঠনের গণশুনানি চলছে। এটি শেষ হলেই তারা কাজ শুরু করবেন। হাওর থেকে এখন পানি নামছে, ফলে যত দ্রুত সম্ভব বাঁধের কাজ শুরু করা উচিত বলে মনে করেন জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৬)। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা বলি, কিন্তু কাজ হয় না। এ কারণে ফসল নিয়ে শেষ দিকে কৃষকদের উদ্বেগের সীমা থাকে না।’
গত এপ্রিলের অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘোষণা দেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া অক্টোবরে শুরু হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা। এখনো তার কিছুই হয়নি। ফলে এবারও হাওরে বাঁধের কাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা।
মির্জা ফখরুলকে আটকের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ
গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটকের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ মিছিল করেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়ক থেকে একটি মিছিল বের করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহরের চৌরাস্তা, নর্থ সার্কুলার সড়ক ঘুরে আবারও চৌরাস্তায় আসে। সেখানে বিএনপির মহাসচিবের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু তাহের ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন বক্তব্য দেন। পরে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়ক ধরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে এসে দাঁড়ান। সেখানে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস ও সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বক্তব্য দেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে মিছিলটি শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়ক ধরে এগিয়ে যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহীদ মোহাম্মদ আলীর স্মৃতিস্তম্ভে আরেক দফা সমাবেশ করেন। সেখানে জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমা পারভিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানা বক্তব্য দেন। বক্তারা অবিলম্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবি জানান। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নেও বিক্ষোভ হয়েছে উল্লেখ করে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপির মহাসচিবকে রাতের আঁধারে বাসা থেকে আটক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। এর প্রতিবাদে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিসহ সাধারণ মানুষ। মাহবুব হোসেন বলেন, সারা দেশে বিএনপি যে গণসমাবেশ করেছে, তাতে সরকার বাধা দিলেও মানুষের ঢলকে আটকাতে পারেনি। আর এতেই সরকার বুঝতে পেরেছে, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই বিএনপি যাতে মানুষের কথা বলতে না পারে, সে জন্য দমন-পীড়ন শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে এই সরকার।
গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটকের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ মিছিল করেন।
দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের শিক্ষিত করেছেন হাবিবা
উম্মে হাবিবার বয়স ৫৩ বছর। এ বয়সেও ফুরসত নেই। অন্যের বাড়িতে সারা দিন কাজ করেন। এক যুগ আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তখন তাঁর চার সন্তান ছোট। ওই সময় থেকে অভাব–অনটন তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু তিনিও হাল ছাড়েননি। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে লেখাপড়ার শেখানোর জেদ ছিল তাঁর মনে। দিন-রাত কাজ করে যা টাকা জমিয়েছেন, তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। আজ শুক্রবার বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার অবদানকে স্মরণ করে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বর এ দিবস পালন করা হয়। বেগম রোকেয়ার মতো বড় পরিসরে না হলেও উম্মে হাবিবা নিজের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। হাবিবা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার জাফরপুর গ্রামে হাবিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক চিলতে জমিতে টিনের ছোট একটি ঘর। হাবিবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। গ্রামের অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। খবর দিলে তিনি কাজ ফেলে ছুটে আসেন। বাড়িতে বসার কোনো চেয়ারও নেই। পাশের বাড়ি থেকে দুটি চেয়ার এনে বসতে দিলেন। হাবিবা বলেন, স্বামীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মাত্র এক শতাংশ জমির ওপর তাঁর বাড়ি। তাঁর স্বামী সামসুল হক এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সংসারের খরচ চালাতে তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। এই সামান্য টাকা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলত। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১০ সালে মারা যান তিনি। রেখে যান চার সন্তান। স্বামী মারা যাওয়ার পর কীভাবে সন্তানদের মানুষ করবেন, দুবেলা খাওয়াবেন এই চিন্তায় তাঁর ঘুম আসত না। অবশেষে সংকোচ ভুলে দিনমজুরির কাজে ঝুঁকে পড়েন। সকালে রাস্তার মাটি কাটা শেষে রাতে চাতালে কাজ করেছেন। সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। সন্তানদের বাড়িতে রেখে এসব কাজ করতে গিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। হাবিবা বলেন, তাঁর স্বামীর ইচ্ছে ছিল সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। স্বামীর সেই ইচ্ছে পূরণ করতে কাজে নেমে পড়েন। তাঁর পরিশ্রমের সম্মান রেখেছে ছেলে-মেয়েরা। বড় মেয়ে শামীমা আক্তার মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছে। ছোট মেয়ে রুবাইয়া পারভীন ডিগ্রি পড়ছে। দুই মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে হাবিবুল বাশার উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পুলিশে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে শাহাদত হোসেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। উম্মে হাবিবা বলেন, বেগম রোকেয়ার কথা তিনিও শুনেছেন। এই পায়রাবন্দে অনেক নারী নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। তিনিও তাঁর সাধ্যমতো কাজ করেছেন। এখনো কাজ করছেন। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। দিনমজুরির কাজ করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। হাবিবা আরও বলেন, ‘ঈদের সময় ছেলে-মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে আগাম শ্রম বিক্রি করেছি। সে টাকা শোধ দিতে ধীরে ধীরে কাজ করেছি। ছেলে-মেয়েদের মাছ-মাংস খেতেও দিতে পারতাম না।’ পায়রাবন্দ ডিগ্রি কলেজের সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, বেগম রোকেয়ার পায়রাবন্দে নানা প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কার দূর করে নারীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তেমনি একজন নারী উম্মে হাবিবা। পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, হাবিবা শত কষ্টের মধ্যেও চার সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তিনি কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। এদিকে, বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিন উপলক্ষে পায়রাবন্দে তিন দিনব্যাপী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী দিন আজ শুক্রবার বিকেলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান আলোচক থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোখলেছুর রহমান।
উম্মে হাবিবার বয়স ৫৩ বছর। এ বয়সেও ফুরসত নেই। অন্যের বাড়িতে সারা দিন কাজ করেন। এক যুগ আগে তাঁর স্বামী মারা যান। তখন তাঁর চার সন্তান ছোট। ওই সময় থেকে অভাব–অনটন তাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু তিনিও হাল ছাড়েননি। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে লেখাপড়ার শেখানোর জেদ ছিল তাঁর মনে। দিন-রাত কাজ করে যা টাকা জমিয়েছেন, তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন।
কর্ণফুলী আ.লীগের সম্মেলন আজ, আনোয়ারায় কাল, দুই উপজেলায় উৎসবের আমেজ
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার দুপুরে কর্ণফুলীর ফকিরনীরহাট এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর কাল শনিবার আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সফল করতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ। এর আগে গত মঙ্গলবার বর্ধিত সভা করেছে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ। দুই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের আগ্রহী একাধিক নেতা বলেন, নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় তাঁরা বেশ আনন্দিত। এর আগেও সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় নেতা–কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। এবার নতুন উদ্যমে তাঁরা সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁদের অভিভাবক। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণের বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জুলাই আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিও শুরু হয়েছিল। ইউনিয়নে ইউনিয়নে বর্ধিত সভা ও প্রস্তুতিমূলক সভাও করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে দুই উপজেলার সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেলে নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেলেও দুই উপজেলার প্রায় সব কটি ইউনিয়নে সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়। সর্বশেষ নতুন করে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলে পুনরায় চাঙা হয়ে ওঠেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বাহাউদ্দিন খালেক শাহজীকে সভাপতি ও কাজী মোজাম্মেল হককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এরপর সর্বশেষ এম এ মান্নান চৌধুরীকে সভাপতি ও এম এ মালেককে সাধারণ সম্পাদক করে সম্মেলন ছাড়াই কমিটি দেয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথমবারের মতো সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ইউনিয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা অনেক খুশি। ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করে উপজেলা সম্মেলন হচ্ছে। কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথমবারের মতো সম্মেলন হতে যাচ্ছে। তাই নেতা–কর্মীদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার দুপুরে কর্ণফুলীর ফকিরনীরহাট এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর কাল শনিবার আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
যেকোনো মূল্যে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করব: ইকবাল হাসান মাহমুদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেছেন, তাঁরা যেকোনো মূল্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করার প্রতিক্রিয়ায় ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাদাপোশাকের পুলিশ আটক করেছে বলে দল ও পরিবার জানিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি আজ শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে। আজ সকালে ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে। ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানি সরকার আমাদের বাধা দেবে, তারপরও আমরা মাঠে নামব। ১০ ডিসেম্বর আমরা যেকোনো মূল্যে ঢাকায় সমাবেশ করব।’ আগামীকাল শনিবার ঢাকার বিএনপির সমাবেশের দিন নির্ধারিত রয়েছে। তবে দলটি এখনো সমাবেশের স্থান বুঝে পায়নি। সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পুলিশের করা এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২ হাজার ৯৭৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। চার মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮৫ জনকে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীতে পুলিশের পাহারা আরও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে দুই দিন আগে বসানো হয় পুলিশের তল্লাশিচৌকি। এসব চৌকিতে তল্লাশি আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। তারা গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মিছিল করেছে। আজও তারা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে মিছিল নিয়ে বের হতে না পারেন, সে জন্য আজ শুক্রবার এবং কাল শনিবার রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পাহারায় থাকবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেছেন, তাঁরা যেকোনো মূল্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবেন।